Adsterra

গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ওপর বিএনপি নেতাদের দোকান নির্মাণ

গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ওপর বিএনপি নেতাদের দোকান নির্মাণ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা নদীর পারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল স্বাধীনতা চত্বর। পরে এই চত্বরেই নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পালন করা হতো স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। এখন সেই জায়গায় দোকান তুলছেন চার বিএনপি নেতা-কর্মী। 


স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর এবং সেই জায়গায় দোকান নির্মাণ করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। 


প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে যশোরের বাঘারপাড়ায় বিজয় উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন ছাত্র-জনতা। তাঁরা বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। বিজয় মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি একশ্রেণির লোকজন স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে হামলা চালান। তাঁরা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। 


প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, পরদিন মঙ্গলবার বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, তাঁর ফুফাতো ভাই বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এবং বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দখল নেন। ওই দিন তাঁরা বৈদ্যুতিক কাটার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের লোহার রড কেটে ফেলেন। এরপর তাঁরা গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় দোকানঘর তোলা শুরু করেন। 


সরেজমিন দেখা গেছে, বাঘারপাড়া উপজেলার বাঘারপাড়া বাজারের মাঝ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে চিত্রা নদী। নদীর দক্ষিণ তীরে চাড়াভিটা-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের পাশে স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসস্তূপের কিছুটা অংশ রয়ে গেছে এখনো। সড়ক থেকে ধ্বংসস্তূপের মাঝ বরাবর প্রস্থ রেখে সড়কের পাশে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা দোকানঘর তোলা হয়েছে। প্রথমে ইট দিয়ে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। এরপর কংক্রিটের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। টিন দিয়ে ছাউনি ও বেড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানের কিছু অংশের চারপাশ এবং কিছু অংশের সামনে এখনো বেড়া দেওয়া হয়নি। 


বিএনপি নেতা সদর উদ্দীন বলেন, ‘ওই জায়গা আগে খাস ছিল। পরে আমি সরকারের নিকট থেকে সেখানকার পাঁচ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। এরপর সেখানে আমি একতলা একটি পাকা ভবন নির্মাণ করি। সেখানে আমি ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যবসা করি। কিন্তু ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সরকার ওই জমি নিয়ে নেয়। তারা আমার ভবনটি ভেঙে ফেলে। এরপর সরকার সেই জায়গায় প্রথমে স্বাধীনতা চত্বর এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।’ 

 

তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। কেউ যাতে দখল না করতে পারে সে জন্য আমি সড়ক ঘেঁষে একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছি। পরে পুরো জায়গায় স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণ করব।’ 

 

অপর বিএনপি নেতা দাউদ হোসেন বলেন, ‘সোমবার ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারিনি। এরপর ওই জায়গায় সদর উদ্দীন এবং আব্দুর রহিম টিনের ঘর তুলেছেন। স্বাধীনতা চত্বরের বাইরে নদীর সঙ্গে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। জায়গাটা খাস। আমি সেখানে কয়েকটি পিলার পুঁতে রেখেছি। আমার পাশে মহাসীন আলী ঘর তুলেছেন। এই নিয়ে কথা উঠলে আমি সেখান থেকে পিলারগুলো সরিয়ে নেব।’ 


কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ২০০৯ সালে উপজেলা প্রশাসন চিত্রা নদীর পারে মাটি ভরাট করে স্বাধীনতা চত্বর তৈরি করে। তখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে স্বাধীনতা চত্বরে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। সাধারণ মানুষও সেখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। ২০১৮ সালে উপজেলা প্রশাসন স্বাধীনতা চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সেখানে উপজেলার সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ স্মৃতিস্তম্ভ ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। কিন্তু স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়া এবং সেখানে দোকান নির্মাণ করায় তাঁরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 


বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ‘স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলায় হতবাক হয়েছি। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙা এবং সেখানে দোকান নির্মাণের নিন্দা জানাই। যারা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ 


বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুর রহমান বলেন, ‘কিছু লোকের খারাপ কাজের জন্য দলের বদনাম হবে—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যারা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় দোকান নির্মাণ করেছে তাদের দ্রুত দোকান ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবারের মধ্যে দোকান সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.