Adsterra

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে শিশুর কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে শিশুর কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

সান্তনু আর রানীর ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। নাম রাহুল। সারাক্ষণ ঘর মাতিয়ে রাখে। কিন্তু কিছুদিন ধরে সে একেবারেই খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। তার এ অবস্থা দেখে রানী একদিন রাহুলকে নিয়ে বাসার কাছেই এক ক্লিনিকে শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার শুনেই বুঝতে পারলেন রাহুলের কৃমি হয়েছে। তাই এই অবস্থা।


বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নিশাত জাহান বলেন, শিশুরা যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে কৃমির সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। শিশুর শারীরিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে কৃমি।


তিনি বলেন, কৃমি এক ধরনের পরজীবী। মানুষের শরীরে প্রয়োজন নেই এ ধরনের একটি পরজীবী, যা শরীরের ভেতরে বংশ বিস্তার করে। সাধারণত খাদ্য নালীর নিচের অংশে বা কখনো কখনো লিভারে কৃমির সংক্রমণ বাড়তে পারে। কৃমির সংক্রমণ হলে শিশু খেতে চায় না, শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, রক্ত স্বল্পতার কারণে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিছু কিছু কৃমি অন্ত্রে এমনভাবে থাকে, যা খুব অল্প পরিমাণে হলেও রক্ত শুষে নিতে থাকে। লিভারে কৃমি হওয়ার কারণে জন্ডিস হয় অনেক শিশুদের। আমাদের দেশে ১০ বছরের নিচের শিশুরা কৃমিতে খুব বেশি আক্রান্ত হয়।


তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে শিশুদের কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়। পরিবারে একজনের কৃমি হলে অন্যদেরও হতে পারে। অপরিষ্কার খাবার, দূষিত পানি ও অপরিষ্কার হাত মুখে দিলে এটা বেশি ছড়ায়। যেমন- খালি পায়ে চলাফেরা করলে। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা খালি পায়ে থাকে, তাই সেখানে শিশুদের কৃমি বেশি হয়। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না থাকলে কৃমি হয়। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা ময়লা-ধুলাবালিতে খেলাধুলা করছে, সেই হাত বা আঙুল আবার মুখে দিচ্ছে। এতে কৃমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রস্রাব-পায়খানা করার পর ঠিকমতো হাত না ধোয়ার কারণে কৃমি হতে পারে। খাবার খাওয়ার আগে হাত না ধোয়ার কারণেও কৃমি হতে পারে। এছাড়া বাইরের বাসি, পঁচা খাবার ও পানি খেলে কৃমি হতে পারে।


তিনি আরো বলেন, শিশুরা কৃমি আক্রান্ত হলে খাবারে রুচি কমে যায়, একদমই খেতে চায় না, পেট ফুলে যায়, বদ হজম হয়। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়। শিশু ফ্যাকাশে হয়ে যায়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। বমি ভাব বা বমি হতে পারে। মলদ্বারে প্রচুর চুলকানি হয়, ইনফেকশনও হতে পারে। মলত্যাগের সময় কৃমি দেখতে পাওয়া যেতে পারে। কিছু কিছু কৃমি আছে, যেগুলোর কারণে ত্বকে অ্যালার্জিক সমস্যা হয়।

ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, সিটি হেলথ সার্ভিসেস, মোহাম্মদপুর, Dr Abida Sultana, health, fitness,

                                                ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই


শিশুর যাতে কৃমি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে প্রথমে। আর যদি কৃমি হয়েই যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। কৃমি যে শুধু শিশুর হবে তা নয়, সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে। এজন্য যে বাচ্চার কৃমি হয়েছে সে ছাড়াও পরিবারের সব সদস্য, এমনকি যদি গৃহপরিচারিকা থাকে তার পরিবারসহ সবাইকে একসাথে কৃমির ওষুধ খেতে হবে। কারণ যদি একজনের পেটে কৃমি থেকে যায়, তাহলে তার কাছ থেকে যেকোনোভাবেই আবার কৃমির ডিমগুলো আরেকজনের পেটে চলে যেতে পারে, সেখান থেকে আবার কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।


তিনি বলেন, কৃমির ওষুধ নিজে নিজে খাওয়া যাবে না। কোনো কোনো কৃমির ওষুধ একটা খেলেই চলে, কোনোটা দিনে দুইবার খেতে হয়। আবার কোনোটা একটা খাওয়ার সাত বা ১৫ দিন পর খেতে হয়। এজন্য বয়স অনুযায়ী এবং কৃমির ধরন দেখে চিকিৎসক ওষুধ নির্ধারণ করে দেবেন। সেটা নিয়ম মেনে খেতে হবে এবং পরিবারের সবাইকে খেতে হবে একোথে। একজন খেলে এটা নির্মূল করা সম্ভব হবে না।


ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুন রহমান বলেন, শিশুরা যাতে প্রত্যেকবার মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধুলাবালি, ময়লা, আবর্জনা ধরার পরে হাত যাতে মুখে না দেয় এবং হাত যাতে ভালো করে ধুয়ে ফেলে তা দেখতে হবে। কাঁচা খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অনেক সময় কাঁচা সবজিতে কৃমি থেকে যায়। ফলমূল, সবজি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। সঠিক নিয়মে রান্না করা খাবার খেতে হবে। কিছু কিছু কৃমি আছে নখের মাধ্যমে ছড়ায়। এজন্য খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। নখ ছোট রাখতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং অন্যান্য কাজেও পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম মেনে পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.