Adsterra

৫০ বছর আগে নির্যাতিত ভারতীয় নার্স আবার আলোচনায়

৫০ বছর আগে নির্যাতিত ভারতীয় নার্স আবার আলোচনায়, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক তরুণী চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনাটি সাড়া ফেলেছে দেশজুড়ে। এই ঘটনার সূত্র ধরে এবার দেশটিতে ঘটে যাওয়া ৫০ বছর আগের আরেকটি ঘটনা এখন আলোচনায়। সেই ঘটনার ভুক্তভোগী ছিলেন অরুণা শানবাগ। মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের (কেইএম) একজন নার্স ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের এক রাতে একজন ওয়ার্ড পরিচারকের দ্বারা তিনি নির্মমভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। 


মঙ্গলবার কলকাতার তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার শুনানি করার সময় চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নারীদের ওপর নৃশংস হামলার কথা তুলে ধরেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এ সময় তিনি অরুণা শানবাগের ঘটনাটিও স্মরণ করেন। তাঁর ঘটনাটি ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নারীদের ওপর সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণগুলোর একটি। হামলার পর দীর্ঘ বছর তাঁকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। 


এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে কেইএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন অরুণা। একই হাসপাতালের চিকিৎসক সুন্দীপ সরদেশাইয়ের সঙ্গে তাঁর বাগদান হয়েছিল। কথা ছিল ১৯৭৪ সালের শুরুর দিকে ধুমধাম করে তাঁদের বিয়ে হবে। কিন্তু এর আগেই ঘটে যায় নির্মম সেই আক্রমণের ঘটনাটি। 


অরুণার তখন ২৫ বছর বয়স। ১৯৭৩ সালে ২৭ নভেম্বর রাতে সোহনলাল ভরতা বাল্মিকি নামে কেইএম হাসপাতালের এক ওয়ার্ড পরিচালক সুযোগ বুঝে তাঁর ওপর চড়াও হন এবং যৌন নিপীড়ন করেন। পরে কুকুরের চেইন দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টাও করেন। নির্মম সেই হামলায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও অরুণার মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। ২০১৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৪২ বছর তিনি কৃত্রিমভাবে বেঁচে ছিলেন। 


জানা যায়, মস্তিষ্কের ক্ষতির জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন অরুণা। কথা বলার সামর্থ্য ছিল না তাঁর। এমনকি সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেও অন্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তিনি। 


টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কেইএম হাসপাতালের কয়েক প্রজন্মের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা জোর করে খাওয়ানোর মাধ্যমে অরুণাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের মতোই তাঁরা অরুণার যত্ন নিতেন। 


 ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিক পিঙ্কি বিরানি ‘করুণা মৃত্যুর’ অনুমতি চেয়ে একটি পিটিশন দাখিল করলে জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েন অরুণা। ওই সাংবাদিক ‘অরুণার গল্প’ নামে একটি বইও লিখেছিলেন। এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য রাখা কুকুরের খাবার চুরি করার জন্য বাল্মিকিকে অভিযুক্ত করেছিলেন অরুণা। এ ঘটনার জের ধরেই অরুণার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। 


করুণা মৃত্যুর পক্ষে সাংবাদিক বিরানির যুক্তি ছিল—অরুণা কোনো অর্থপূর্ণ উপায়ে জীবন উপভোগ করতে অক্ষম। তাই তাঁকে মর্যাদার সঙ্গে মরতে দেওয়া উচিত। পরে এই যুক্তির পক্ষে বিপক্ষে ভারতে অসংখ্য বক্তৃতা ও বিতর্ক হয়। 


 ২০১১ সালের ৭ মার্চ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি যুগান্তকারী রায়ে সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু বা করুণা মৃত্যুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, অরুণার মস্তিষ্ক মৃত ছিল না। হাসপাতালের কর্মীদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা কিছু উদ্দীপনায় তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। 


অবশেষে ২০১৫ সালে ১৮ মে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অরুণা মারা যান। তাঁর ওপর আক্রমণকারী সোহানলাল বাল্মিকি শুধুমাত্র ডাকাতি এবং হত্যাচেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কারণ সেই সময়টিতে পায়ুপথে যৌন হামলার বিষয়টিকে ভারতীয় আইনে ধর্ষণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। মাত্র সাত বছরের সাজা ভোগ করে ১৯৮০ সালেই মুক্তি পেয়েছিলেন অরুণার নির্যাতনকারী।

No comments

Powered by Blogger.