গর্ভধারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আশায় অনেকেই বেশি বয়সে বিয়ে করেন ও সন্তান নিয়ে থাকেন। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। কেউ কেউ বলেন, বেশি বয়সে বিয়ে করলেও ওই সময় সন্তান নেয়া নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি কেউ কেউ মৃত্যুর কথাও বলে থাকেন।
ক্যারিয়ার গড়ার অজুহাতেই অনেকের বেশি সময় লেগে যায়। সব গুছিয়ে নিতে নিতে বিয়েও দেরিতে হয়। এ জন্য পরিবারও স্বাভাবিকভাবেই দেরিতে হয়। এ কারণে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, ৩৫ পেরিয়ে গেলেও কি স্বাভাবিকভাবে মা হওয়া যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন চর্চা ও বিতর্ক রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জয়তী মণ্ডল। এবার তাহলে এই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
মাতৃত্বের স্বাদ: প্রায় সব নারীই জীবনে অন্তত একবার মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান। সেই অনুযায়ী সঙ্গীর সঙ্গে পরিকল্পনাও করে থাকেন। আবার সন্তান নেয়ার আগে অধিকাংশ দম্পতিই আর্থিক দিক বিবেচনা করেন। কেননা, পরিবারের এক নতুন সদস্যের আগমনে অনেক ধরনের খরচ থাকে। অন্যান্য খরচও বেড়ে যায়। এ জন্য আর্থিক প্রস্তুতিও জরুরি।
গর্ভধারণের উপযুক্ত বয়স: ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর থেকে মেনোপজের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময়ে মা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন নারীরা। তাদের গড় প্রজনন বয়স ১২ থেকে ৫১ বছর। আর এই সময়ের মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে গর্ভধারণ করতে পারেন নারীরা। আগে বলা হতো ৩৫ বছরের আগে গর্ভধারণ করার জন্য। এই সময় ডিম্বাণুর জিনগত গুণাগুণ ভালো থাকে। এ জন্য সন্তানের জিনগত সমস্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা কিংবা ঝুঁকিও থাকে না। আগে জেনেটিক স্ক্রিনিং টেস্টের কোনো ধরনের ব্যবস্থা ছিল না। এ জন্য মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে নারীদের ৩৫ বছরের মধ্যে গর্ভধারণের পরামর্শ দেয়া হতো।
বয়সসীমা নেই: আধুনিক সময়ে গর্ভধারণের জন্য বয়সের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। বয়স বেশি হলেও মাত্র দুটি বিষয় ভূমিকা পালন করে। প্রথম স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস। দ্বিতীয় আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। নিয়মিত যদি শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হয়, তাহলে ডিম্বাণুর মান ভালো থাকে। এ ধরনের লাইফস্টাইল থাকলে ৩৫-৪০ বছরের পরও যেকোনো নারী চাইলে গর্ভধারণ করতে পারেন। এমনকি ৪৮ বছর বয়সেও গর্ভধারণের মাধ্যমে একজন নারী মা হতে পারেন।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ফার্টিলিটি কি কমে: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফার্টিলিটি হ্রাস পেতে থাকে। এ জন্য অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইলের জন্য ফার্টিলিটিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ফলে ৩৫ থেকে ৪০ বছরের পর কোনো নারী গর্ভধারণ করতে চাইলে তা নাও সফল হতে পারে। আবার ৩৫ বছর পরবর্তী গর্ভধারণে নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকারও সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জয়তী মণ্ডল।
এছাড়া বেশি বয়সে সন্তান জন্মের জন্য গর্ভধারণ করলে সেই সন্তানের জিনগত রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ জন্য ৩৫ বছরের পর কোনো নারী গর্ভধারণ করলে রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জেনেটিক স্ক্রিনিং করা হয়। আবার চাইলে ৪০-এর পর এবং মেনোপজের পরও আইভিএফ পদ্ধতিতেও মা হতে পারেন যেকোনো নারী।
ঝুঁকিও রয়েছে: বেশি বয়সে কোনো নারী গর্ভধারণ করলে এ ক্ষেত্রে শারীরিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৪০ বছরের পর গর্ভধারণ করলে অনেক সময়ই হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকিও থাকে। এ জন্য বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে তাদের ক্ষেত্রে গাইনোকোলজিস্ট ও কার্ডিওলজিস্ট দিয়ে নিয়মিত চেকআপ করানো জরুরি।
গর্ভধারণের আদর্শ সময়: নারীদের ফার্টিলিটি সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বেশি থাকে। এই সময়ে ডিম্বাণুর সংখ্যাও বেশি থাকে। এ জন্য এই সময় কোনো নারী গর্ভধারণ করলে মা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। একইসঙ্গে এই সময় গর্ভধারণ করলে গর্ভের সন্তানের ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকিও অনেক কম থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ৩৫ বছরের মধ্যে সন্তান ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়। আর কেউ চাইলে ৪০-এও গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে কিছু বিষয়ে সচেতন ও নজর রাখতে হবে।
No comments