Adsterra

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ও একজন সাকিব

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ও একজন সাকিব, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিজয় নিঃসন্দেহে একটি বড় বিজয় এবং যথেষ্ট আনন্দের। শুধু পাকিস্তান কেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে খেলে জয় অর্জন করলে তা হয় গৌরবের। এই গৌরব ব্যক্তির চেয়েও বেশি হয় দেশের। এটা দেশের অর্জনের খাতে জমা পড়ে, গচ্ছিত থাকে। সারা বিশ্ব তা নিমেষে জেনে যায়। দেশের পাশাপাশি তারা জানে, দেশের পক্ষে কারা এই খেলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে, এ বিষয়ে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। নেই রাজনৈতিক ফায়দা। যদিও খেলা মানেই জয় ও পরাজয়ের বৃত্তে আবর্তিত থাকে। কোনো দেশ বা দল সব সময় অপরাজিত থাকে না। এটা বলতেই হয় যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিটি খেলোয়াড় ক্রিকেট খেলাকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে কমবেশি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন।


সব খেলোয়াড় একই মাত্রায় ও দক্ষতায় যে খেলেছেন বা খেলতে পেরেছেন, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো খেলোয়াড় পারদর্শিতায় শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছেন এবং বিশ্বে সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। সাকিব আল হাসান তেমনই একজন বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের নামটিও যায়, পতাকা দৃশ্যমান হয়। যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাকিব আল হাসান খেলছেন, তখন তাঁর মাথায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলা। তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন দাঁড়াবে, আদৌ তিনি খেলতে পারবেন কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সাকিবভক্ত ও সাধারণ মানুষ ছিল বেশ চিন্তিত। সব চিন্তাকে তাচ্ছিল্য করে সাকিব তাঁর বেস্ট পারফরম্যান্স দেখালেন। দলের মধ্যে তাঁর অবস্থান ও সমন্বয় দেখে একবারও মনে হয়নি, যে দেশের পক্ষে তিনি খেলছেন সেই দেশের পক্ষ থেকে তাঁর মাথার ওপর একটা হত্যা মামলা জুড়ে দেওয়া হয়েছে! যে দেশের সুনাম অর্জনের জন্য তিনি আর সবার মতো লড়ছেন, সেই দেশ তাকে চরম অসম্মানিত করার জন্য অপেক্ষা করছে—এমনটি একবারও মনে হয়নি তাঁর, খেলা দেখে এবং ভেবে অবাক হয়েছি।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন, সাকিব আসলে একজন স্বার্থপর ব্যক্তি। যে নাকি নিজের খেলায় ভালো পারফরম্যান্স দেখানো ছাড়া, কৃতিত্ব নেওয়া ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারেন না। ভাবেননি কখনো। এভাবেই তো তিনি বিশ্বে এক নম্বর অলরাউন্ডার খেলোয়াড় হতে পেরেছেন! তবে তিনি কিন্তু বাংলাদেশের নামটাও সঙ্গে নিয়ে বিশ্বদরবারে উপস্থিত হয়েছেন। যদিও এটা রাজনৈতিক মামলা। এমন রাজনৈতিক মামলা অহরহ হয় এই বাংলাদেশে। এক সরকার গেলে নতুন সরকারের মামলা-মোকদ্দমা করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। যেমন করে বিগত সরকার তার বিপক্ষের লোকদের হয়রানি, হেনস্তা করে গেছে। তবে সব সময় পরবর্তী অবস্থায় প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের ঘটনাগুলো ক্রমান্বয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর হতে দেখা যায়।


 আরও পড়ুন - বন্যায় স্বাস্থ্য সমস্যা : করনীয়


সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক অপরাধ হলো তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। কারও কারও মতে, যেহেতু সাকিবের সরকারকে স্বৈরশাসকের অপবাদে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, সেহেতু সাকিব আল হাসানও সেই অর্থে ‘অপরাধী’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিববিদ্বেষী পোস্ট দেখে মনে হচ্ছিল, কেউ আবার দাবি না করে বসে যে, যেহেতু দলে সাকিব আছে, সেহেতু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই ক্রিকেট বিজয় আমরা মানি না, এই বিজয় বয়কট করা হোক! ভাগ্যিস তেমন কিছু কানে আসেনি।


পত্রিকান্তরে জানতে পেরেছি, কোনো একটি অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলছিলেন, যে হারে ও যেভাবে মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে, তাতে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তন দেখতে চায়, যে পরিবর্তন আইনসিদ্ধ ও আইনি প্রক্রিয়ায় গতিশীল। সাকিব আল হাসানের ব্যক্তিগত আচরণের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, থাকতে পারে বৈকল্য, যেমনটি প্রত্যেক ব্যক্তিরই থাকে, কিন্তু তিনি হত্যা মামলার ‘আসামি’ হতে পারেন, এ যেন এক বিস্ময়কর সংবাদ অনেকের কাছেই। শুধু বিগত সরকারের একজন সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে এ ধরনের মামলা কি একজন সাকিবেরই ক্ষতিসাধন করবে? ক্রিকেট দলের ক্ষতি করবে না? বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে না? সেই প্রশ্ন কারও মনে একবারও উদয় হয়েছে কি না, জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।


তবে সাকিব অপরাধী হলে অবশ্যই তাঁর বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় হবে এবং সেটা প্রকৃত সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে। অপরাধ ছাড়া সাকিবের মতো একজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়কে অপরাধী সাব্যস্ত করা এবং করার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানহানির মামলার পর্যায়ে পড়ে কি না, তা ভাবতে হবে। সাকিব বাংলাদেশের একজন সেই খেলোয়াড়, যিনি বিভিন্ন সময়ে খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাকিবের শরীরে বিএনপি, জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগের ট্যাগ থাকে না। ট্যাগ থাকে বাংলাদেশের, লাল ও সবুজের। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্দলীয় হলে, বাংলাদেশের পরিবর্তন চাইলে বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলো যে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে গেছে লাগাতারভাবে, তার পুনরাবৃত্তি হতে নিশ্চয়ই দেবে না।


ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বাংলাদেশের যে প্রচলিত রাজনীতি, তাতে দেশের কোনো খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী কারওরই সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারও ব্যক্তিগত রাজনৈতিক চেতনা থাকতেই পারে, সেটা ভোটাধিকারে প্রয়োগ হোক। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ‘সুশীল’কে পারচেজ করে, দলে ভেড়ায়। এটা তাদের একটা কৌশল ও ফাঁদ মাত্র। সরকারের পতন হলে এই সুশীলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। সুতরাং মনে রাখা দরকার, তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো রাজনৈতিক দলের নন, বরং দেশের, দশের।


যা হোক, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস সুখকর নয়, ছিল না। পাকিস্তানের পরাধীনতার শেকল ভেঙে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে এবং রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় পাকিস্তানিদের নির্মমভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন প্রক্রিয়ায় এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। মুখে মুখে এই দেশ স্বাধীন হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট অনীহা ও অনুদারতার পরিচয় দিয়েছে। যে রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে, সে তখন তার মতো করেই মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়কে উপস্থাপন করেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দলীয়করণের কারাগারে বন্দী থেকে গেছেই। নতুন প্রজন্ম সঠিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হতে পারেনি।


যা হোক, পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে জিতে গেলে সেটা হয়ে যায় আরেক ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ সেখানে অতিমাত্রায় কার্যকর হয়ে ওঠে। এটাই স্বাভাবিক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেটের এই জয়কে আবেগময়ী ও সংবেদনশীল অনেকেই মনে করছে, এটা বাংলাদেশের আরেকটি বিজয়।


No comments

Powered by Blogger.