Adsterra

বাংলার রক সিনারিওতে যার মৃত্যু নেই

বাংলার রক সিনারিওতে যার মৃত্যু নেই, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

কেউ বলে গানের ধ্রুবতারা আবার কেউ বলে বাংলা ব্যান্ডের মহারাজা। আবার কেউ বলে বিশ্বসেরা গিটারিস্ট। যে যেই নামেই ডাকুক তিনি একবার গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে ধরলেই যেন কোটি মানুষের উন্মাদনার শেষ থাকত না। বলছি ‘সেই তুমি’, ‘রুপালি গিটার’, ‘কষ্ট’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘ভাঙা মন নিয়ে’ গানের স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চুর কথা। আজ এই কিংবদন্তিশিল্পীর ৬২তম জন্মদিন।


১৯৬২ সালের ১৬ আগস্টে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের তারিখ অমর হয়ে রয়ে গেছে। আগামীতেও থাকবে কিন্তু আইয়ুব বাচ্চু কখনো ফিরবেন না! জেনে নেওয়া যাক তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে অজানা কিছু গল্প। তার জন্মদিনে দেশ রূপান্তর পরিবার তাকে গভীরভাবে স্মরণ করছে।


তার প্রতি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিটি শিল্পীর মনে গভীর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা রয়ে গেছে। গত বছর আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকী আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গাইতে উঠেন বাংলারা আরেক কিংবদন্তিশিল্পী নগর বাউল জেমস। আইয়ুব বাচ্চুর কথা স্মরণ করতে আশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। পড়বেই বা না কেন, বাচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল নগরে বাউলের সঙ্গেই। তার সৃষ্ট কর্ম দিয়ে অমর হয়ে আছে বাঙালির হৃদয়ে। বাংলার রক সিনারিওতে তিনি এমন এক মিথ, যার মৃত্যু নেই।


কুমার বিশ্বজিৎ এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, প্রথম যখন বাচ্চু ঢাকায় আসে। তার একমাত্র বন্ধু ছিলাম আমি। একসঙ্গে বহু সময় এক ছাদের নিচে কাটিয়েছি। সংগীত জীবনের শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রামে অবস্থানকালেই। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, আমাদের এক বন্ধু ছিল উত্তম নামে। ওদের দোকানে বসে আমরা গানের আসর জমাতাম। এভাবে কেটেছিল আমাদের দুরন্ত শৈশব। আইয়ুব বাচ্চুকে আমি কখন গিটার ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে দেখিনি। মার্কেটে কখন কোন গিটার আসছে। সেইটা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। সকাল-সন্ধ্যায় গিটার নিয়েই পড়ে থাকত। এভাবে তো মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হয়।


খালিদ হাসান মিলুর বড় ছেলে শিল্পী প্রতীক হাসান আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে বলেন, আমরা পাশাপাশি বাসায় থাকতাম। আমি যখনই আইয়ুব বাচ্চু আঙ্কেলকে দেখতাম তখনই উনি গিটার বাজাচ্ছেন। আমি স্কুল শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে উনার বাসায় গিয়ে গিটার বাজানো উপভোগ করতাম। একদিনে এত যশ, খ্যাতি, সুনাম অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আইয়ুব বাচ্চু নিজেই বলেছিলেন ক্যারিয়ার শুরুতে অনেক বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। পরিবারের সবাই ধার্মিক ছিলেন। যার ফলে সংগীত নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়াটা কেউ গ্রহণ করেননি। গিটারের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় জিমি হেনড্রিক্সের গিটার বাজানো দেখে। বাচ্চুকে গিটার শেখা তো জেকব ডায়াজ নামের একজন বার্মিজ নাগরিক।


চট্টগ্রামে কলেজে পড়াকালীন সময় একটি ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন। এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে করা হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিল কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিল গিটারিস্ট। ১৯৭৭ সাল থেকে তিন বছর তিনি (আইয়ুব বাচ্চু) ‘ফিলিংস’ (বর্তমানে ‘নগর বাউল’ নামে পরিচিত) ব্যান্ডের গিটারবাদক ছিলেন। এরপর ১৯৮০ সালে বাচ্চু প্রধান গিটারবাদক হিসেবে সোলসে যোগদান করে। সোলসের সঙ্গে এক দশকের বেশি সময় কাজ করেছিলেন। 


১৯৯১ সালে গঠন করেন নিজের ব্যান্ড দল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। যা পরবর্তীকালে ‘লাভ রান্স ব্লাইন্ড’ বা এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিলেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পুরস্কার অর্জনের মধ্যে ছয়টি ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’। একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এবং ২০০৪ সালে বাচসাস পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০১৭ সালে ‘সে টেলে সিনে’ আজীবন সম্মাননা পান। ব্যক্তিগত জীবনে বাচ্চু তার বান্ধবী ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের ঘরে দুটি সন্তান আছে। মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব। ছয় বছর ধরে ফুসফুসজনিত রোগে আক্রন্ত ছিলেন।  ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজ বাসভবনে মারা যান। মৃত্যুর দুদিন আগে তিনি রংপুরে তার শেষ কনসার্ট করেন। তাকে চট্টগ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।


No comments

Powered by Blogger.