Adsterra

অবৈধ সম্পদের দান কবুল হয় না

অবৈধ সম্পদের দান কবুল হয় না, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

কেবল সৎকাজই মন্দকাজকে নির্মূল করে। খারাপ আমল কখনো অন্য বদ আমলকে নির্মূল করতে পারে না। এটি ইসলামের সুস্পষ্ট ঘোষণা। অর্থাৎ আমরা দান-সদকা, জাকাত-ফিতরা আদায় করি যাতে আমাদের পাপমোচন হয় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। কিন্তু এ কাজ পাপের পথে অর্জিত সম্পদ দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করাই একটি পাপ; সুতরাং সেই পাপের মাধ্যমে অন্য পাপ মাফ হতে পারে না। তেমনই অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ অপবিত্র, সুতরাং তা দ্বারা নিজের সম্পদ পবিত্র করাও অসম্ভব।


আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘এমন হবে না যে, কোনো বান্দা হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করবে; অতঃপর তা থেকে (বৈধ ও নেক কাজে) খরচ করবে, আর তাতে বরকত দান করা হবে। সে তা থেকে সদকা করবে, আর তা কবুল করা হবে। বরং ওই ব্যক্তি সেই সম্পদ (মিরাছ হিসেবে) তার মৃত্যুর পর রেখে গেলেও তা তাকে আরও বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা পাপ দ্বারা অপর পাপকে নির্মূল করেন না। তবে নেক আমল দ্বারা পাপকে নির্মূল করেন। নিশ্চয়ই অপবিত্র বস্তু অপর অপবিত্র বস্তুর অপবিত্রতা দূর করতে পারে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩৬৭২; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ২০২৬)


হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না। এবং আত্মসাৎকৃত সম্পদের সদকা কবুল করেন না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৪; জামে তিরমিজি, হাদিস : ০১; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩৯)


বিপরীতে হালাল ও বৈধ সম্পদ সদকা করার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কেবল (হারামের মিশ্রণ থেকে) পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্টি খেজুরও দান করে, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা ওই ব্যক্তির জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় ওই সামান্য খেজুরমুষ্টি পাহাড়সম হয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪১০; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১৪)


আরও পড়ুন - বন্যায় স্বাস্থ্য সমস্যা : করনীয়


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি তোমার সম্পদের জাকাত আদায় করলে; তখন তুমি এ সম্পদের ব্যাপারে তোমার অবশ্যকরণীয় বিধান পালন করলে। যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে, অতপর তা সদকা করবেÑ সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩২১৬; আল-মুনতাকা, ইবনুল জারুদ, হাদিস : ৩৩৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ১৪৪০)


তাবেই কাসেম বিন মুখায়মিরাহ (রহ.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পাপের পথে সম্পদ উপার্জন করল; অতঃপর তা আত্মীয়তা রক্ষায় খরচ করল বা সদকা করল অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল; তাহলে (কেয়ামতের মাঠে) এসব কিছুই একত্রিত করা হবে; অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ (কিতাবুল মারাসিল, আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১)


বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, যে ব্যক্তি এখন নেক আমল করছে; তবে আগে জুলুম-অত্যাচার করত এবং হারাম গ্রহণ করত। এখন সে নেক দিলে তওবা করে আগের সেই সম্পদ দিয়ে হজ করল, গোলাম আজাদ করল এবং আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করল (তার ব্যাপারে কী বলেন?)। জবাবে তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই অপবিত্রতা আরেকটি অপবিত্রতা দূর করতে পারে না।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৯৩২)


সুতরাং যারা হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে; আর মনে মনে ভাবে, এখান থেকে কিছু সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেব; ব্যস, সাত খুন মাফ, তাদের উচিত, মহানবী (সা.)-এর এই বাণীগুলো ভালোভাবে স্মরণ রাখা।


আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি বড় শিক্ষণীয় ঘটনা আছে। তার সময়ে বসরার আমির ছিলেন আবদুল্লাহ বিন আমের। তিনি মুসলমানদের বায়তুল মাল থেকে তার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি গ্রহণ করতেন। কিন্তু তার স্বভাব ছিল, তিনি এসব সম্পদ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন, মসজিদ নির্মাণের কাজে খরচ করতেন, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন। যখন তিনি মৃত্যুশয্যায় উপনীত হলেন, তখন লোকজন তার চারপাশে ভিড় জমালো এবং তার দান-দাক্ষিণ্য ও মানুষের প্রতি তার অনুগ্রহের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগল। কিন্তু ইবনে ওমর (রা.) চুপচাপ রইলেন। যখন বসরার আমির ইবনে আমের স্বয়ং তাকে কথা বলতে ও নিজের জন্য দোয়া করতে আবেদন করলেন; তখন তিনি তাকে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস শোনালেন, ‘আল্লাহতায়ালা আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল করেন না। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তো বসরা শহরেরই আমির ছিলে। অর্থাৎ আমি তোমার কীর্তি-কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত যে, তুমি বায়তুল মালের সম্পদ না-হকভাবে গ্রহণ করতে। সুতরাং কীভাবে তোমার এসব দান-সদকা কবুল হবে? আর তোমার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়াই বা কীভাবে কবুল হবে? (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭০০-৫৪১৯; জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা : ১৮৯)

No comments

Powered by Blogger.