সাফল্যের জন্য ১৩ পদক্ষেপ
সাফল্য লাভের জন্য শুধু পড়াশোনায় তুখোড় হওয়া ই যথেষ্ট নয়। ক্লাস রুমের বাইরে থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। আয়েশপূর্ণ জীবন থেকে বের হয়ে জীবনের জ্ঞানকে আরো ধারালো করতে হয়। তার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
১। খুঁজে নাও পরামর্শদাতা
নিজের জন্য খুঁজে নাও একজন বিজ্ঞ পরামর্শদাতা। জীবনের পথ বন্ধুর, পিচ্ছিল। যেকোনো মুহূর্তে ছন্দ পতন ঘটতে পারে। এই বিপদসংকুল পথে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ তোমাকে সহায়তা করতে পারে। তবে এই পরামর্শদাতা খুঁজে পাওয়াও খুব সহজ নয়। এই পরামর্শদাতা হতে পারেন তোমার বড় ভাই, বোন, আত্মীয়, এলাকার গুরুজন- যিনি ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন বলে তোমার মনে হয়। কোনো সেলিব্রিটিও হতে পারেন যার জীবনকে তুমি অনুসরণ করো। তুমি যে পেশা গ্রহণ করবে বলে ভেবেছো সেই পেশার সফল কোনো ব্যক্তিও হতে পারেন তোমার পরামর্শদাতা। তার কাছে কোনো কিছু না লুকিয়ে তোমার সমস্যা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য খুলে বলো। তারপর তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করো।
২। দক্ষতা অর্জন করো
সাফল্য লাভের জন্য পুঁথিগত জ্ঞান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতা। পূর্বে পেশাজীবীরা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে কোনো পেশায় প্রবেশ করে তারপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই কাজ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতেন। বর্তমানে যেকোনো চাকরির ভাইভায় পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়েও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে শিক্ষাজীবনেই। বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, এক্সেল, ওয়ার্ড প্রোগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে চাকরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া সহজ হয়। এছাড়া বর্তমান বাজারে ইংরেজিতে কথা বলা ও লিখতে জানা ব্যক্তিদের কদর বেশি।
৩। এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকটিভিটিজ
বইয়ের পড়াশোনার বাইরে যেসব এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকটিভিটিজ আছে যেমন গান, আবৃত্তি, নাচ, বিতর্ক, কুইজ, খেলাধুলা, বিভিন্ন অলিম্পিয়াড বা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় সেগুলোতে অংশ নাও। তোমার মেধাকে বিকশিত করতে এগুলো বিশেষ সহায়ক। শুধু তাই নয়, এর ফলে তুমি সমাজের আর দশজনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তুমি অর্জন করতে পারবে। যা পেশাগত জীবনে সাফল্যের পথে তোমাকে অনেকটুকু এগিয়ে দেবে।
৪। নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করো
জীবনে চলার পথে সমস্যা আসবেই। এই সমস্যাগুলো নিজেই সমাধানের চেষ্টা করো। সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তাশক্তিকে নানাভাবে কাজে লাগাতে হয়। সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হয়। এর ফলে মেধার বিকাশ ঘটে। সমস্যার সমাধানের মাধ্যমেই একজন মানুষ সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করো।
৫। ভাগ্যকে ভুলে যাও, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও
ঘটনাচক্রে কখনো কিছু ভাল ঘটনা ঘটতেই পারে তোমার জীবনে। কিন্তু ভাগ্যের ভরসায় তুমি যদি সব সময় বসে থাকো, সেক্ষেত্রে তোমার মৃত্যুর পরেই ভাল কিছু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কারণ যাই ঘটুক, ঘটনা তার নিজস্ব সময়েই ঘটবে। ভাগ্যের উপর জীবনকে ছেড়ে রাখার অর্থ হল ভয় ও উদ্বেগ তোমার নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকবে। কিন্তু নিজের সামর্থ্য ও অভিপ্রায়কে সঙ্গী করে বেঁচে থাকলে, চারপাশে কী ঘটলো না ঘটলো তার জন্য তোমার ভিতরটা প্রভাবিত হবে না, তোমার ভিতরের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি তোমার হাতেই থাকবে। এটিই হল স্থিতিশীল জীবনের নমুনা।
৬। ব্যর্থতায় আটকে যেও না
কোনও কিছুতে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে যে, তার কাছে ব্যর্থতা বলে কিছু হয় না। যদি তুমি সারাদিনে একশো বারও ব্যর্থ হও, সেই একশোটা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সফল হয়ে ওঠে। যা করতে তুমি ভালবাসো, তার প্রতি যদি তুমি নিবেদিত প্রাণ হও, তোমার মনও সেভাবেই নিজেকে তৈরী করে নেবে। মনের সঙ্গে তোমার আবেগও সেভাবেই নিজেকে সাজিয়ে নেবে। কারণ তোমার ভাবনা চিন্তা যে পথে যায়, স্বাভাবিক নিয়মে আবেগও সে পথকেই অনুসরণ করে। তোমার ভাবনা-চিন্তা ও আবেগ যেমন হবে, প্রাণশক্তিও ঠিক সেভাবেই সংগঠিত হয়ে উঠবে। একবার যদি তোমার শরীর, ভাবনা-চিন্তা, আবেগ ও প্রাণশক্তি একমুখী ও একাগ্র হয়ে ওঠে, কোনও কিছু সৃষ্টি বা প্রকাশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই অভাবনীয় সামর্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠবে তুমি।
৭। স্বচ্ছ দৃষ্টি নিয়ে কাজ করো
প্রতিটি মানুষের স্বচ্ছ দৃষ্টির প্রয়োজন, আত্মবিশ্বাস নয়। মানুষের ভীড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময় দৃষ্টি যদি তোমার স্বচ্ছ হয়, তবেই তুমি প্রত্যেকের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবে, একজনকেও স্পর্শ না করে অনায়াসেই ভীড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে সক্ষম হবে তুমি। কিন্তু প্রভূত আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও, দৃষ্টি যদি তোমার ঝাপসা বা অস্বচ্ছ হয়, অনিবার্যভাবেই তুমি সকলের গায়ে পা লাগিয়ে ফেলবে। স্বচ্ছ দৃষ্টির অভাব রয়েছে বলেই, আত্মবিশ্বাসই একমাত্র বিকল্প বলে মনে করে সকলেই।
৮। যা কিছু অপচ্ছন্দ, তার কাছে যাও
জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিকে সুন্দর ভাবে সামলাতে হলে পাথুরে কঠিন ব্যক্তিত্বের খোলসটা খুলে রেখে দেওয়া প্রয়োজন। বেঁচে থাকতে গেলে ভিন্ন ভিন্ন আইডেন্টিটির প্রয়োজন হয়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সর্বদা একই রকম ব্যক্তিত্বের খোলস পরে থাকতে হবে। ব্যক্তিত্ব হল বাহ্যিক আইডেন্টিটি, এটিকে যথা সম্ভব নমনীয় করে রাখতে শিখলে, পরিস্থিতির প্রয়োজন অনুযায়ী তুমি সহজেই বদলে নিতে পারবে। কিন্তু আর সকলের মতো, তুমিও যদি ব্যক্তিত্বের খোলসটিকে পাথরের মতো শক্ত করে ফেলো, তাহলে তোমার অপচ্ছন্দের কোনও কিছু ঘটলেই সেটি তোমার যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠবে।
এই পরিস্থিতির হাত থেকে রেহাই পেতে গেলে, এর বিপরীত কিছু না করে উপায় নেই তোমার। একটি সহজ কাজ তুমি শুরু করতে পারো। আজ পর্যন্ত যে সব মানুষ তোমার অপচ্ছন্দের তালিকায় আছে, তাদের সঙ্গে ভালবেসে, আনন্দ নিয়ে সময় কাটানো শুরু করো। যে কাজ করতে তোমার বরাবর আপত্তি ছিল, সেই কাজটিই ভালোবেসে করা শুরু করো। খুব সহজেই তুমি নিজস্বতা বজায় রেখেই, সচেতন ভাবে পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী চলতে শিখবে।
৯। আমিত্বের হিসেব নিকেশ বন্ধ করো
মহৎ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু আত্মসুখ আর আত্মস্বার্থের কথা ভাবা বন্ধ করো, তাহলেই তোমার প্রতিটা কাজ মানবিক মহত্বে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যাদের তুমি মহামানব হিসেবে দেখো, তাঁরা কেউই কিন্তু চেষ্টা করে মহামানব হননি। তাঁরা মহামানবিক হয়ে উঠেছিলেন কারণ, শুধু এই আত্মগত ভাবনায় তারা আটকে থাকেননি যে, “আমার কী হবে? “আমার কী হবে?” – শুধুই ‘আমি’ কেন্দ্রিক এই ভাবনাটুকু যদি মাথা থেকে তাড়াতে পারো, যদি তোমার সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে যে কোনো কাজ করতে পারো, তাহলেই তোমার দৃষ্টি চারপাশে ঘটে চলা জীবনের দিকে প্রসারিত হবে। আর সকলের জন্য আমি কী করতে পারি – এই ভাবনাটিই তোমার কর্মদক্ষতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
১০। সাফল্যের জন্য ব্যায়াম
মানবদেহের কাঁধ ও ঘাড়ের উপরের অংশটি স্নায়বিক ও শক্তি সঞ্চারণ ব্যবস্থার মূল কেন্দ্র। তাই ঘাড় ও কাঁধের অঞ্চলটিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ মিনিটের জন্য ঘাড়ের নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম অভ্যাস (Neck Practice) তোমাকে আরও সচেতন হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই অভ্যাসগুলি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিকেও তীক্ষ্ণ করে তোলে।
১১। অন্তর্দৃষ্টিকে উন্মোচিত করো
জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহের প্রতি এমনভাবে মনোযোগী হও যাতে, অন্যদের কাছে যা ঝাপসা বা অস্পষ্ট, তাও যেন তোমার চোখে স্পষ্ট বা স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেয়। দূরদৃষ্টির অধিকারী না হলে অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে কিছু হয় না। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কোনও কিছুকে দেখার নৈপুণ্য অর্জন করতে পরলেই কঠিন কাজগুলোও তুমি খুব অসাধারণত্বে করতে পারবে।
১২। নিজেকে অনুপ্রাণিত করো
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সর্বদা প্রেরণার মধ্যে থাকা। তুমি যা করছো, তা কেন করছো তার কারণটি খোঁজো, এবং বৃহত্তর চিত্রটি দেখার চেষ্ঠা করো। দেখার চেষ্টা করো প্রত্যেকটি ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে তুমি কতটা অবদান করতে সক্ষম। মানুষের প্রত্যেকটি কাজ এই বিশ্বে কোনো একটা দিকে কিছু অবদান রেখে যায়। তুমি যা ই করো না কেন কেউ না কেউ তার দ্বারা উপকৃত হতে পারে। তুমি যদি সচেতনতার সঙ্গে তোমার অবদান রাখতে পারো, তাহলে সেটাই তোমাকে অনুপ্রেরণা দেবে।
১৩। মূল্যবোধের মানদন্ড তৈরি করো
সফল ও কার্যকরী ভূমিকা নিতে গেলে চারপাশের মানুষের আস্থা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরী এবং মূল্যবোধে অবিচল হয়ে থাকার গুণটিই স্থির করে দেবে, কত মানুষের আস্থা অর্জনে তুমি সক্ষম হবে। চারপাশের পরিবেশে যত বেশি মানুষ তোমার প্রতি আস্থাশীল হবে, তত বেশি মসৃণ হবে তোমার কাজ। তোমার কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে তখনই, যখন তুমি প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে। তোমার প্রতি আস্থাশীল যারা হবে তারাই যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে তোমার কাজের পথটিকে আরও সুগম করে দেবে।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, asun sustho thaki,health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, mental health,
No comments