Adsterra

প্রস্রাবের রঙ শরীর সম্পর্কে কী কী বার্তা দেয় এবং কখন চিন্তিত হবেন?

প্রস্রাবের রঙ শরীর সম্পর্কে কী কী বার্তা দেয় এবং কখন ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

লাল, হলুদ, গোলাপী ও সবুজ-এমনকি, আপনার প্রস্রাব রংধনু মতোও হতে পারে। শুধু তাই নয়, আপনি অবাক হবেন যে এর রঙ বেগুনি, কমলা কিংবা নীলও হতে পারে। আবার, এগুলোর পাশাপাশি কারো কারো প্রস্রাবের রঙ এমন কিছুও হতে পারে, যা ঠিক স্বাভাবিক বা পরিচিত কোনো রঙ না।


প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর তার বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেয়। অন্যভাবে বললে, এই প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে ময়লা-আবর্জনা বের করা হয়।


শরীরের প্রোটিন, লোহিত কণিকা, মাংসপেশী ভেঙে নাইট্রোজেনাস বর্জ্য তৈরি হয়। ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন এই বর্জ্যর অন্যতম উপাদান।


এছাড়া আরো অনেক কিছু আছে যা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। যেমন-আমরা যেসব ভিটামিন ও ওষুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু এমন অনেক জিনিস আছে, যা প্রস্রাবের মধ্যে থাকাটা অনুচিত এবং যখন আমরা ডাক্তারের কাছে যাই, তখন তারা প্রায়ই আমাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন যে ‘আপনার প্রস্রাবের রঙ কী?’


এই প্রশ্নের উত্তর ডাক্তারকে রোগীকে তার রোগ ও পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে।


লাল :

কারো যদি প্রস্রাবের রঙ লাল হয়, তাহলে সাধারণত এর মানে হলো, এতে রক্ত আছে। মূত্রনালীর সাথে সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার কারণে এটি হতে পারে।

কিডনি, মূত্রাশয় ও প্রোস্টেট এবং মূত্রনালীর সাথে সংযোগকারী কোনো টিউব থেকে রক্তপাত হলে প্রস্রাব লাল হয়ে যেতে পারে।

প্রস্রাবের সাথে মিশে থাকা রক্তের পরিমাণ ও সতেজতার ওপর নির্ভর করে যে ওই রক্তের রঙ কী রকম হবে। এক্ষেত্রে প্রস্রাবের রঙ একেক সময় একেক রকম হতে পারে।

রক্তপাত যদি প্রবল মাত্রায় হয়, তাহলে প্রস্রাবের রঙ এত গাঢ় হতে পারে যে এটিকে রেড ওয়াইনের মতো দেখতে লাগতে পারে।

এই ধরনের রক্তপাতের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন-কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার, ট্রমা কিংবা মূত্রনালীতে কোনো সংক্রমণ।

আবার, হয়ত সাধারণভাবে অতিরিক্ত বিটরুট খেলেও প্রস্রাবের রঙ লাল হয়ে যেতে পারে।


কমলা ও হলুদ :

আমি সবাই-ই জানি যে সাধারণ অবস্থায় আমাদের প্রস্রাবের রঙ অনেকটা হলুদ থাকে। এখন এই হলুদের মাত্রা কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে যে আপনি দৈনিক কতটুকু পরিমাণ পানি পান করছেন।

শরীরে পানির অভাব থাকলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যাবে। আবার কখনো কখনো এটি কমলা রঙেরও হতে পারে।

আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন, তবে প্রস্রাবের রঙ হবে পাতলা এবং ফ্যাকাশে হলুদ।

যে উপাদানটি প্রস্রাবকে হলুদ করে, তাকে বলে ইউরোবিলিন।

শরীরে উপস্থিত পুরানো লোহিত রক্তকণিকাকে ভাঙ্গার মাধ্যমে ইউরোবিলিনের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ওই রক্তকণিকাগুলো যথাযথা আকারে না থাকায় শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে সেগুলোকে সরিয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরে একটি যৌগ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় বিলিরুবিন। এটি কিছু পরিমাণে প্রস্রাবের মাধ্যমে ও কিছুটা অন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

আমাদের লিভার বা যকৃত ওই বিলিরুবিন ব্যবহার করে পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরস হজম এবং শরীরের চর্বি ভেঙে ফেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


পিত্তরস অন্ত্রে থাকে এবং মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এই পিত্তরসের কারণেই মলের রঙ বাদামী হয়ে থাকে।

কিন্তু অনেক সময় পিত্তথলির পাথর কিংবা ক্যান্সারের কারণে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন পিত্তরস অন্ত্রে পৌঁছাতে পারে না।

ওই সময় বিলিরুবিন রক্তনালীতে ফিরে যায় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়।

এই কারণে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হতে শুরু করে কমলা বা বাদামী। প্রস্রাবে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকের রঙ-ও হলুদ হতে শুরু করে।

এই অবস্থাকে বলা হয় ‘অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস’, যা এক ধরনের জন্ডিস। তবে কিছু ওষুধ আছে, যেগুলোর কারণে প্রস্রাব কমলা রঙ হয়ে যেতে পারে।


সবুজ ও নীল :

সবুজ এবং নীল রঙের প্রস্রাব হওয়ার ঘটনা খুব বিরল। প্রস্রাব করার পর আপনি যদি দেখেন যে তার রঙ সবুজ বা নীল, আপনি নিশ্চিতভাবেই অবাক হয়ে যাবেন।

টয়লেটে কোনো কিছুর উপস্থিতি যদি প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন না করে, তাহলে শরীর অন্য কোনো কারণে সবুজ বা নীল রঙের প্রস্রাব তৈরি করতে পারে।

যদি কোনো খাদ্যদ্রব্যে নীল বা সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রস্রাবের রঙ সবুজ বা নীল হতে পারে। তবে এটি তখনই ঘটবে, যখন ওই খাবার অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।

চেতনানাশক, ভিটামিন, অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও প্রস্রাবের রঙ সবুজ বা নীল হয়ে যেতে পারে।

একটি মজার তথ্য হলো যে, কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যেগুলো এমন যৌগ তৈরি করে যে তা সবুজ বর্ণের হয়।

সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা নামক ব্যাকটেরিয়া নীল ও সবুজ রঙের পাইওসায়ানিন যৌগ তৈরি করে। এটি মূত্রনালীর সংক্রমণের একটি বিরল কারণ। এটি হলে একজন ব্যক্তিকে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া এবং ব্যথার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

ডা. আবিদা সুলতানা এখন নিয়মিত রোগী দেখছেন সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতালে। প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। ঠিকানা - ৭৭২/১-এ, বসিলা রোড,  ময়ূরভিলা সংলগ্ন, মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড, ঢাকা। সিরিয়ালের জন্য কল করুন : ০১৭৪৫৬৭৬৯২৯


বেগুনি :

প্রস্রাব বেগুনি মানে ইন্ডিগো বা পার্পল বা ভায়োলেট রঙ ধারণ করার ঘটনাও খুব বিরল। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হলো পোরফাইরিয়া। এটি এক ধরনের জেনেটিক রোগ, যা ত্বক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।

এটি আরেকটি কারণেও হতে পারে। ‘পার্পল ইউরিন ব্যাগ সিনড্রোম’ নামক একটি বিরল রোগ আছে, যা ইউরিনারি ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রস্রাব নির্গমনের জন্য ক্যাথিটার থাকলে এক্ষেত্রে তাতে পার্পল রঙের দাগ দেখা যায়।


বেগুনি বা গোলাপী :

এখানে আরো একবার রক্ত ও বিটরুটের সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলতে হবে।

অল্প পরিমাণে বিটরুট খেলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় লালের বদলে গোলাপি হতে পারে।

যখন এটি ঘটে, তখন ডাক্তাররা এটিকে রোজ ওয়াইনের সাথে তুলনা করেন।


অন্যান্য রঙ :

তবে প্রস্রাবের আরো কিছু রঙ হতে পারে, যা রংধনুর সাত রঙে নেই। কখনো কখনো প্রস্রাব অতিরিক্ত গাঢ়, মানে বাদামী বা কালো রঙের হতে পারে। ডাক্তাররা এটিকে কোকা-কোলার সাথে তুলনা করতে পারেন।

গুরুতর রোগ র‍্যাবডোমাইলাইসিসের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে পারে। এটি অত্যধিক পরিশ্রম বা কিছু ওষুধ ব্যবহারের কারণেও হতে পারে।

আবার, এটি বিলিরুবিন থেকেও আসতে পারে। বিলিরুবিন প্রস্রাবকে এতটাই গাঢ় করে তোলে যে এটি কমলার পরিবর্তে বাদামী দেখায়। কিন্তু প্রস্রাবে থাকা রক্তের কারণেও এমনটা হতে পারে।

কিডনির প্রদাহও রক্তপাতের কারণ হতে পারে। কিডনির এই সমস্যার কারণে প্রস্রাব মূত্রনালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে লাল থেকে বাদামী হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। বর্ণহীন প্রস্রাবও আছে।

তবে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হওয়া উচিৎ নয়। আর অনেক বেশি পাতলা প্রস্রাবও কিছু রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে, সেটি ডায়াবেটিস হতে পারে বা অতিরিক্ত মদ্যপান হতে পারে।

এই প্রতিবেদনটি থেকে আমরা জানতে পারছি যে, আমাদের প্রস্রাব কতগুলো বর্ণের হতে পারে এবং কোন রঙ কোন সমস্যাকে নির্দেশ করে। তবে চিকিৎসকদের মতে এটি কখনো সম্পূর্ণ তালিকা না।

আপনার প্রস্রাবের রঙ যদি অস্বাভাবিক হয় এবং আপনি যদি তার কারণ বুঝতে চান, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন এবং সেইসাথে প্রয়োজন মতো পানিও পান করুন।

ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, asun sustho thaki,health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, mental health, 

ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.