আল্লাহর অস্তিত্বে দৃঢ় বিশ্বাস
পৃথিবীতে যা কিছু আছে চলমান-স্থির, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, ছোট থেকে বড়-এর সবই মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব, তার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান, সক্ষমতা, তার সূক্ষ্ম কর্মদক্ষতা, তার ব্যাপক প্রজ্ঞা এবং বিস্তৃত দয়ার প্রমাণ বহন করে। দয়াময় আল্লাহর মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের নিদর্শন সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণুতে বিদ্যমান। সৃষ্টিকুলের কাছে তার প্রভুত্ব সুস্পষ্ট হয় তার প্রতি তাদের মুখাপেক্ষী হওয়ার মাধ্যমে। তিনি ছাড়া অস্তিত্বময় সবকিছুর স্রষ্টা তিনিই। জগতের সব ঘটনার উদ্ভাবকও তিনি।
যেসব কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নেয়, এর অন্যতম হলো শরিয়তের ব্যাপারে গবেষণা করা, যা তিনি পূর্ণাঙ্গ রূপে সুদৃঢ় করেছেন এবং যাতে রয়েছে সর্বাধিক সত্য সংবাদ ও সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ বিধি-বিধান।
আর নবীগণের জীবনী আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসকে বাড়ায়। তারা সবাই উত্তম চরিত্র ও ফজিলতপূর্ণ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যা নিয়ে আগমন করেছেন তা সুস্থ বিবেক ও সঠিক সহজাত অভ্যাসের অনুকূল। তারা যেসব কল্যাণ নিয়ে আগমন করেছেন তার সমুদয় আয়ত্ত করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুনিয়াতে যত কল্যাণ ও সৎকর্ম রয়েছে, যা তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন তারই প্রতিফলন।
আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক নবীকে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি দিয়ে সহায়তা করেছেন। সেগুলো এমন অকাট্য প্রমাণ, যা তাদের সৃষ্টিকর্তার দিকে পথপ্রদর্শন করে এবং এমন দলিল যা তাদের সত্যবাদী হওয়াকে আবশ্যক করে। নিজেদের জন্য অন্তরে ‘দৃঢ় বিশ্বাস’ জন্ম নেওয়ার শক্তির প্রার্থনা করা এবং মানুষের হৃদয়ে তা প্রতিষ্ঠা করা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন ইবরাহিম বলল, হে আমার রব! কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন আমাকে দেখান, তিনি বললেন, তবে কি তুমি ইমান আনোনি? তিনি বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু ‘আমার মন যেন প্রশান্ত হয়!’ সুরা আল বাকারা : ৬০
বান্দা হলো যাবতীয় ফেতনার লক্ষ্যবস্তু। শয়তান বান্দার হৃদয়ে সন্দেহ-সংশয়ের আগুন প্রজ্জ্বলন এবং হৃদয় থেকে দৃঢ় বিশ্বাসকে নড়বড়ে করতে চায়। সুতরাং যে ব্যক্তি তার সৃষ্টিকর্তা রবের অস্তিত্বে সন্দেহ করবে, আল্লাহর প্রভুত্বের প্রতি বদ্ধমূল দৃঢ় বিশ্বাসকে অহংকারবশত উপেক্ষা করবে, ওই ব্যক্তির বক্ষ সংকীর্ণ হয়ে যাবে, মনে হবে যেন সে কষ্ট করে আকাশে উঠছে। যে আল্লাহর প্রভুত্বকে অস্বীকার করল, প্রকৃতপক্ষে সে তার হৃদয় যা সত্য হিসেবে বিশ্বাস করেছিল সেটাকেই অস্বীকার করল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা অন্যায় ও উদ্ধ্যতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে নিশ্চিত সত্য বলে গ্রহণ করেছিল।’ সুরা আন নামল : ১৪
বান্দা তার দ্বীনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে, তাই উপহাসকারীদের পরিহারের মাধ্যমে তার দ্বীনকে সুরক্ষিত রাখা আবশ্যকীয় কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি যখন তাদের দেখেন, যারা আয়াতসমূহ সম্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গ শুরু করে।’ সুরা আল আনআম : ৬৮
মহান আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসে অটল থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো আল্লাহর আনুগত্যের ওপর অবিচল থাকা, অধিক পরিমাণে তার ইবাদত-বন্দেগি করা, সৎব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করা, পাপাচার পরিহার করা, গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা, উপকারী জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলি নিয়ে গবেষণা করা এবং নিজের ও জগতের মধ্যে এগুলোর প্রভাব অবলোকন করা। আর এগুলোর সমন্বিত রূপ হচ্ছে বেশি বেশি কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা, সে অনুযায়ী আমল করা এবং সর্বদা আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া।
যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তার একত্ববাদে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কে বলেছিলেন, ‘এই বাগানের বাইরে এমন যার সঙ্গে তোমার দেখা হয়, যে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও (সহিহ্ মুসলিম)
আমাদের রব মহাসত্য, চিরসত্য। যাতে কোনো সন্দেহ নেই, তার নাম আল হক মহাসত্য। আর হকই তার বৈশিষ্ট্য এবং তার অস্তিত্ব হচ্ছে প্রমাণিত মহাসত্য বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এগুলো প্রমাণ যে, আল্লাহ তিনিই সত্য এবং তারা তার পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা মিথ্যা।’ সুরা লোকমান : ৩০
আর মৌলিক ইমানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর অন্যতম শর্ত। সন্দেহ-সংশয়, দ্বিধা ও অবিশ্বাসের সঙ্গে ইমান থাকতে পারে না। সুতরাং দৃঢ় বিশ্বাস ছাড়া ইমান গ্রহণযোগ্য হবে না। আর মানুষ তার অন্তরে জ্ঞান ও দৃঢ় বিশ্বাসকে অনুধাবন করে, যেমন সে তার অন্যসব উপলব্ধি ও চলাচলকে অনুধাবন করে। যে ব্যক্তি কে দৃঢ় বিশ্বাস দান করা হয়েছে, সে কখনো অসন্তুষ্টিবশত তার দ্বীন থেকে ফিরে যেতে পারে না। আর সে আল্লাহর দাসত্বের সোপানে উন্নীত হতে থাকে, অবশেষে সে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় এটা সুনিশ্চিত সত্য। অতএব আপনি আপনার মহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।’ সুরা ওয়াকিয়া : ৯৫-৯৬
No comments