Adsterra

৭ শৌচাগার মেরামতে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা

৭ শৌচাগার মেরামতে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সাতটি শৌচাগারে টাইলস বসানো ও মেরামত কাজের নামে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার খরচ দেখানো হয়েছে। একইভাবে কয়েকটি বিভাগের কক্ষ, জিমনেশিয়াম, সীমানা প্রাচীর ও জানালা সংস্কারের নামে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু কাজ দায়সারাভাবে করে এবং কিছু কাজ না করেই ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। তবে এই খরচকে অতিরঞ্জিত বলছেন কলেজের সাধারণ চিকিৎসক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।


জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলের অবকাঠামো উন্নয়নে স্থাপনাগুলোর মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে গত বছরের ১৯ জুন ঢামেকের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুল আলম চৌধুরী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেন। 


পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গণপূর্ত বিভাগ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ হয়। কাজের তদারকির জন্য ঢামেকের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ (পরে অধ্যক্ষ হন) ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরীকে সভাপতি করা হয়। এছাড়া রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন শাহরিয়ার নবীকে সদস্য এবং ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদ্যুত কুমার সাহাকে সদস্য সচিব করা হয়। 


তদারক কমিটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শেষ হওয়া সংস্কার/মেরামত কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের একটি কপি যুগান্তরের কাছে এসেছে। যেখানে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে কাজের মানের আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা গেছে। 



তালিকা অনুযায়ী ঢামেকের ডা. ফজলে রাব্বি হলের ডি-ব্লকে ৮টা কক্ষে চারটা শৌচাগারের টাইলস মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। ডা. আলীম চৌধুরী (নতুন) ছাত্রী হোস্টেলের বাথরুম ও শৌচাগার সংস্কার, টাইলসকরণ ও স্যানিটারি ফিটিংস বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ডা. মিলন ইন্টার্নি ছাত্রী হোস্টেলের বাথরুম ও শৌচাগারে টাইলস লগানো ও স্যানিটারি ফিটিংস সংস্কারে ৩০ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। 


এছাড়া ঢামেক আওতাধীন কলেজ ও ছাত্রী হোস্টেলের ক্যান্টিনের শৌচাগার মেরামতে ১২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। সবমিলে সাতটি শৌচাগার মেরামতের নামে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার খরচ দেখানো হয়েছে। 


মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ পাশের ভেতরের চত্বরসংলগ্ন অংশের নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত কাঠের জানালার পরিবর্তে থাই অ্যালুমিনিয়ামের জানালা স্থাপনে ১৭ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। একইভাবে টিচার্স লাউঞ্জ সংস্কারে ১২ লাখ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ২৪ লাখ টাকা, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ১২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।


কলেজের সম্মুখ অংশের সীমানা প্রাচীর সংস্কার ও আধুনিকায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ২৫ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের প্রধান ভবনের জিমনেশিয়াম কক্ষের মেরামত ও সংস্কারসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। সবমিলে (শৌচাগার মেরামতের খরচের বাইরে) কাজগুলোতে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।


তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও শিক্ষক যুগান্তরকে বলছেন, কাগজে-কলমে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডা. ফজলে রাব্বি হলে জিমনেশিয়াম তৈরির কথা বলা হলেও তার কোনো ছিটেফোঁটা নেই। শৌচাগারগুলোতে নিম্নমানের টাইলস, কমোড বসানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি শৌচাগারের সিটকানি পর্যন্ত লাগানো হয়নি। ক্যান্টিন সংস্কারের নামে দেওয়াল ও টেবিলে শুধু কোমলপানীয় কোম্পানির ব্যানার টানানো হয়েছে।


শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন এই অনিয়মের সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল কলেজ শাখার সংশ্লিষ্টরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদ্যুৎ কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। 


তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ব্যয় নির্ধারণ করেছে। ব্যয়ের বিষয়ে আর কিছুই জানি না। যেহেতু ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনিও স্বীকার করেন শৌচাগার সংস্কারে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়।


সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহারিয়ার নবী যুগান্তরকে বলেন, অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি দেখে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে তারা বলতে পারবে। আমরা শুধু সংস্কার ও মেরামতের কাজ বুঝে নিয়েছি। তিনি নিজেও স্বীকার করেন এসব সংস্কারে এত ব্যয় হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন কমিশন খেয়ে চুপ ছিলেন সবাই।


এসব বিষয় জানতে রোববার গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের অফিসে গিয়ে শনিবার তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি।

No comments

Powered by Blogger.