রুশপন্থি শক্তির উত্থানে জার্মানিতে দুশ্চিন্তা
জার্মানিতে সম্প্রতি রাশিয়াপন্থিদের রাজনৈতিক শক্তির প্রতি বেড়ে চলা জনসমর্থন মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোকে বিড়ম্বনায় ফেলছে৷ সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে সরকারের স্থায়িত্বও এখন প্রশ্নের মুখে৷
জার্মানিতে পর পর তিনটি রাজ্যের নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি ও সদ্য গঠিত পপুলিস্ট বামপন্থি দল বিএসডাব্লিউ দলের সাফল্য দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে৷ বিশেষ করে দুটি ‘রাশিয়া-বান্ধব' ও ন্যাটো-বিরোধী দল যেভাবে ইউক্রেনের জন্য জার্মানির সামরিক সাহায্য কমানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছে, তা বর্তমান সরকারের নীতি সম্পর্কে ভোটারদের একাংশের সংশয়ের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে৷
ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, মূল স্রোতের দলগুলো এখনো পর্যন্ত এএফডি দলের সঙ্গে জোট সরকার গড়তে অস্বীকার করে এলেও বিরোধী পক্ষে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে সেই দল৷ তবে বিএসডাব্লিউ দল একাধিক রাজ্যে জোট সরকারের শরিক হতে পারে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ জার্মানির ফেডারেল কাঠামোয় ১৬টির মধ্যে তিনটি রাজ্যে এমন পট পরিবর্তন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব রাখতে পারে৷
সংবাদমাধ্যমটির তথ্য মতে, গত রোববার ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের নির্বাচনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডি দল সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি হিসেবে নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও এবার জোট সরকার গড়তে বিএসডাব্লিউ দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ কিন্তু সেই দল পূর্বশর্ত হিসেবে রাশিয়া সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে এসপিডি-র অবস্থান বদলের দাবি করছে৷
তারা ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে অবিলম্বে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার দাবি এবং জার্মানির ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের তীব্র বিরোধিতা করছে।
পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যে দুই চরমপন্থি দলের এমন সাফল্য এবং বেড়ে চলা প্রভাব জার্মানির বাকি দলগুলোকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে৷ সামরিক জোট ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা এবং আক্রান্ত দেশকে সামরিক সহায়তার বিষয়ে শলৎস সরকারের তিন শরিক দল এবং প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের অবস্থান অভিন্ন৷
ওই তিন রাজ্যে সরকারের শরিক হিসেবে বিএসডাব্লিউ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি সেই মৌলিক ঐকমত্যে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে৷
জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলো এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে চরমপন্থি শক্তির সমর্থকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মতবদল করতে পারবে, এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে৷
বর্তমানে চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎসের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে৷ এমনকি তার এসপিডি দলের মধ্যেও তাকে আর নতুন করে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী না করার পক্ষে অনেকে সওয়াল করছেন৷ সরকারের বাকি দুই শরিক দলেরও বেহাল অবস্থা৷ একের পর এক নির্বাচনে সমর্থন হারাচ্ছে তারা৷ রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এফডিপি দলের মধ্যে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য দাবি বাড়ছে৷
প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে ইউনিয়ন শিবির সমর্থনের বিচারে জাতীয় স্তরে শীর্ষে থাকলেও তাদের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নিজস্ব জনপ্রিয়তাও প্রায় শলৎসের কাছাকাছি৷ ফলে জার্মানির মূল স্রোতের এই চার প্রধান রাজনৈতিক শিবির আগামী নির্বাচনে কতটা ভালো ফল করতে পারবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ দুর্বল চ্যান্সেলর ও তিন রাজনৈতিক দলের জোট সরকার আদৌ অবশিষ্ট এক বছর টিকে থাকবে কিনা, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷
No comments