Adsterra

জালিম ফেরাউন-কারুন-নমরুদের পরিণতি

জালিম ফেরাউন-কারুন-নমরুদের পরিণতি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

জুলুম করা মহাপাপ। যারা জুলুম করে তাদের গন্তব্যস্থল জাহান্নাম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৃথিবী জুড়ে চলছে জুলুমের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। চারদিকে প্রকাশ পাচ্ছে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র আজ এই জুলুমে লিপ্ত। জুলুমের ওপর দাঁড়িয়েই তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করছে। যার পরিণতি খুবই মন্দ ও ভয়াবহ। অন্যের ওপর অন্যায়-অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালেমরা। যেমনটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের বিভিন্ন বিপদাপদে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ জুলুম।


দুনিয়াতে খুব কম জালেমই নিজেকে জালেম মনে করে। আবার জালেম যখন মজলুম ও দুর্বলের প্রতি অত্যাচার চালায়, তখন সে নিজেকে মনে করে অনেক ক্ষমতাবান। ভাবে তার অর্থবিত্ত, শক্তি ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী। মনে করে তার সহযোগী অনেক। কিন্তু সে ভুলে যায়, ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও মহান আল্লাহ তার সঙ্গে আছেন। তিনি সবই দেখেন এবং হিসাব রাখেন।


যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি, তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছিল। 


মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। মুসা তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা পৃথিবীতে দম্ভ করল। তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ। কাউকে আমি ধসিয়ে দিয়েছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। আমি মানুষের কল্যাণার্থে এসব দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকি, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই কেবল তা বুঝে। (সুরা আনকাবুত ৩৯-৪৩)


লোকদেখানো দানে সওয়াব নেইলোকদেখানো দানে সওয়াব নেই

ফেরাউনের পরিণতি : ক্ষমতার জোরে ফেরাউন দেশের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। নিজেকে রব বলেও দাবি করেছিল। মনে করেছিল নিজেকে চিরস্থায়ী ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু না, তা আর হয়নি। তার সব অহমিকা আর দাপট মুহূর্তের মধ্যেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে।  কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণিকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, যাদের পুত্রদের সে জবাই করত এবং মেয়েদের জীবিত রাখত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।’ (সুরা কাসাস ৪)


আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় ও অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদের আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখো, জালেমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে। (সুরা কাসাস ৩৯-৪০)


দুনিয়াতেই দেওয়া হয় জুলুমের শাস্তিদুনিয়াতেই দেওয়া হয় জুলুমের শাস্তি

জালেমদের শেষ পরিণতি দেখে মানুষ যাতে শিক্ষা নেয়, এজন্য তাদের কিছু নিদর্শন আল্লাহ দুনিয়াতে উদাহরণ হিসেবে রাখেন। তারা যেন তাদের পরিণতি দেখে। যেমনটা আল্লাহতায়ালা ফেরাউনের ক্ষেত্রে করেছেন। তার সেই জুলুমে ভরপুর শরীরকে আজও মানুষের সামনে রেখেছেন। পরবর্তী সময়ে তারা যেন এমন ক্ষমতার দাপট ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন না করে। যেন মানুষ তার থেকে শিক্ষা নেয়। পরস্পর যেন পরস্পরের ওপর জুলুম-নির্যাতন না করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি বনি ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। তখন ফেরাউন ও তার বাহিনী জুলুম ও সীমা লঙ্ঘনের উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে ডুবে মরার সম্মুখীন হলো, তখন বলতে লাগল, আমি স্বীকার করলাম, বনি ইসরাইল যেই আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমিও অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (উত্তর দেওয়া হলো) এখন ইমান আনছ? অথচ এর আগে তো তুমি অবাধ্যতা করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী কালের মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। (কেননা) আমার নিদর্শন সম্পর্কে বহু লোক গাফেল হয়ে আছে।’ (সুরা ইউনুস ৯০-৯২)


কারুনের পরিণতি : মহান আল্লাহ জালেম কারুনের পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু সে তাদেরই প্রতি জুলুম করেছিল। আমি তাকে এমন ধনভাণ্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। সে বলল, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং লোকবলেও বেশি ছিল? অপরাধীদের তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হয় না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। তার পক্ষে এমন কোনো দল ছিল না যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে। ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সকল লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য দেখাতে ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকিদেরই অনুকূলে থাকবে।’ (সুরা কাসাস ৭৬-৮৩)


ছোট গুনাহের বড় ক্ষতিছোট গুনাহের বড় ক্ষতি

নমরুদের পরিণতি : নমরুদ এক সময় সাধারণ জনগণের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু সেও টিকতে পারেনি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইব্রাহিমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইব্রাহিম বলল, তিনিই আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইব্রাহিম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত করো তো! এ কথায় সে কাফের নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালেমদের হেদায়েত করেন না।’ (সুরা বাকারা ২৫৮)


অবৈধ সম্পদ দানে পাপ বাড়েঅবৈধ সম্পদ দানে পাপ বাড়ে

পৃথিবীতে প্রথম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ছিল নমরুদ। সে আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ করেছিল। আল্লাহ তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে প্রবেশ করে। মশার জ্বালা থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হতো। তার রাজত্ব ছিল চারশ বছর। সে যেমন চারশ বছর পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল তেমনি আল্লাহ তাকে চারশ বছর এই আজাবে রাখেন। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে। (তাফসিরে ইবনে কাসির ২/৮৭৮)


যুগে যুগে বহু জালেমের জন্ম হয়েছে। দুনিয়াতে তারা অনেক নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম আর নির্যাতন চালিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহতায়ালা কোনো জালেমকেই ছাড় দেননি। তাদের পাকড়াও করেছেন কঠিনভাবে। চরমভাবে অপমান করেছেন। পরবর্তীরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে সেজন্য পরবর্তীদের মধ্যে তাদের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উল্লেখ করেছেন তাদের জুলুম আর নির্যাতনের বিবরণ। যা আজও মানুষ ঘৃণাভরে স্মরণ করে।

No comments

Powered by Blogger.