যিনি ভেঙেছিলেন ১০৫ বছরের প্রথা
বিশ্বখ্যাত সংবাদপত্র ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। পত্রিকাটি তাদের প্রথম নারী কর্মী নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠার ১০৫ বছর পর, ১৯৫৬ সালে। এই ইতিহাস যিনি গড়েছিলেন, তিনি বেটসি ওয়েড।
তবে বেটসি ১৯৫১ সালে প্রথম রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ‘দ্য নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন’ পত্রিকায়। যোগদানের বছরেই তিনি সন্তানসম্ভবা হলে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কারণ, সে সময় মাতৃত্বকালীন ছুটির কোনো নিয়ম ছিল না। এখানে বৈষম্যের শিকার হলেও ৪৫ বছরের সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে তিনি প্রমাণ করেছেন, লৈঙ্গিক পরিচয় কারও জীবনে কোনো সুযোগের জন্য বাধা হওয়া উচিত নয়।
বেটসি যে সময় সাংবাদিকতায় আসেন, তখন নারী সাংবাদিকেরা শুধু নারীদের বিষয়, যেমন নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, ফ্যাশন এবং রান্নার বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করতেন। সে সময় সংবাদপত্রের নিউজরুমে নারী কর্মীদের কাজের সুযোগ দেওয়া হতো না বললেই চলে। ছিল বেতনবৈষম্যও।
কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস তাদের শত বছরের বেশি সময়ের প্রথা ভেঙে সংবাদের কপি সম্পাদনার জন্য প্রথম নারী হিসেবে বেটসিকে নিয়োগ দেয়। ১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর পত্রিকাটির সিটি নিউজরুমে পুরুষদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। নিয়োগ পাওয়ার পর একটি পুরুষশাসিত জগতে প্রবেশ করেছিলেন বেটসি। সেখানে চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর তাঁকে আবারও বদলি করা হয় নারীদের ডেস্কে। কিন্তু নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন বেটসি বারবার বদলির অনুরোধ করতে থাকেন। অবশেষে ১৯৫৮ সালে তাঁকে আবারও ফিরিয়ে আনা হয় নিউজরুমে। তিনিই প্রথম নারী, যিনি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বিদেশি সংবাদদাতাদের নিবন্ধ সম্পাদনা করেছিলেন। এ ছাড়া বিদেশি কপি ডেস্কের উপপ্রধান হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি।
নারী কর্মীদের পক্ষে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী যৌন নিপীড়নের মামলার প্রধান বাদী ছিলেন বেটসি। সেটি ছিল ফেডারেল বৈষম্যবিরোধী আইনের অধীনে নিয়োগ, পদোন্নতি, বেতন এবং কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষার ক্ষেত্রে সমান অধিকারের দাবিতে প্রথম দিকের লড়াইগুলোর মধ্যে একটি। নিউইয়র্কের নিউজপেপার গিল্ড, যা বর্তমানে নিউজগিল্ড নামে পরিচিত, তার প্রথম নারী সভাপতি ছিলেন তিনি। পেন্টাগন পেপারস এবং কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস সম্পর্কিত নিবন্ধসহ বিশ শতকের কিছু সংবাদ সম্পাদনার কাজ করেছিলেন বেটসি ওয়েড।
সাংবাদিকতার জগতে বর্ণিল ক্যারিয়ারের অধিকারী বেটসি ওয়েড মারা যান ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর।
No comments