হিজবুল্লাহ দমনে লেবাননে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি ইসরায়েলের
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবার বললেন, মধ্যপ্রাচ্যের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ইসরায়েল পারবে না। এই বাক্য উচ্চারণ করে মধ্যপ্রাচ্যকে একধরনের সতর্কবার্তাই দিলেন তিনি। তাঁর এই সতর্কবার্তার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের আকার আরও বড় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বরাতে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করতে পারে ইসরায়েল। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের পর এবার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে লেবাননে।
এদিকে গতকাল সোম ও গত রোববার দিবাগত রাতে লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে হামাসের দুই নেতা হত্যার দাবি করেছে তারা। এ ছাড়া লোহিতসাগর পারে হুতিদের স্থাপনাতেও গতকাল হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা অব্যাহত
রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে গতকাল বিভিন্ন দেশ লেবাননের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ ছাড়া জার্মানি তাদের দূতাবাসের কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিয়েছে।
সিএনএন বলছে, গতকাল সোমবার টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এই ভাষণে ইরানের জনগণের উদ্দেশে তিনি এ-ও বলেন, ‘ইসরায়েল আপনাদের পাশে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখছেন, আপনাদের শাসক লেবানন ও গাজা রক্ষায় জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছে। এই শাসক আমাদের অন্ধকার ও যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ইসরায়েল পৌঁছাতে পারবে না।’ এই যুদ্ধে ইরানকে অর্থ ব্যয় না করে দেশের জনগণের কল্যাণে অর্থ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে একধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি লেবাননে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। গত শুক্রবার হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, তাঁরা ধারণা করছেন, যেকোনো সময় লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করতে পারে ইসরায়েল। এই অভিযান চলবে মূলত লেবানন ও ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকায়। হিজবুল্লাহর ঘাঁটি রয়েছে এমন সব এলাকায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে তারা। আর এই লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।
তবে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধে তারা কোনো সেনা পাঠাবে না।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল ইসরায়েলের বাহিনী জানিয়েছে, রোববার রাতে লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় হামাসের দুই নেতা নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ফাতাহ শরিফ। তিনি হামাসের লেবানন শাখার প্রধান। হামাসও এই হামলার কথা স্বীকার করেছে। হামাসের এই নেতা জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থাতেও কাজ করতেন। তবে সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে ছুটিতে ছিলেন তিনি।
এদিকে ফিলিস্তিনে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২০ জন মারা গেছে। এ নিয়ে ৪১ হাজার ৬১৫ জন নিহত হলো গাজায়। এ ছাড়া আহত হয়েছে ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ।
লেবাননেও গতকাল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় তাদের সেনাসদস্য ও হিজবুল্লাহর উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে লেবাননের বৈরুতে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। ফ্লাইট দুবাই নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট চালাবে না। একই সঙ্গে এমিরেটসও জানিয়েছে, আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ফ্লাইট চালাবে না। কাতার এয়ারলাইনস জানিয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বৈরুতে তাদের ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। এই পরিস্থিতিতে বৈরুত থেকে তাদের বেশ কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিয়েছে জার্মানি।
No comments