পোস্টমর্টেমকে বাংলায় ‘ময়নাতদন্ত’ বলা হয় কেন ?
যেকোনো রহস্য ও অপরাধের সঙ্গের জড়িয়ে আছে ‘পোস্টমর্টেম’ (Post Mortem) শব্দটি। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তদন্তের অন্যতম ভরসা এটি। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে বা কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মূলত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্যই ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম করা হয়।
ইংরেজিতে Post Mortem শব্দ এসেছে ল্যাটিন শব্দ মর্টেম আর পোস্ট থেকে। Mortem মানে মৃত্যু। আর Post মানে পরে। অর্থাৎ পোস্টমর্টেম শব্দের আক্ষরিক অর্থ মৃত্যুর পরে।
বাংলায় পোস্টমর্টেমকে ময়নাতদন্ত বলা হয় এ কথা কমবেশি সবার জানা। কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন এমন নামকরণ? লাশ কাটাছেঁড়ার মতো জটিল একটি বিষয়ের সঙ্গে কি আদৌ ময়না পাখির কোনো সম্পর্ক রয়েছে?
‘ময়না’ শব্দটি এসেছে ফার্সি শব্দ ‘মুয়াইনা’ থেকে। এর অর্থ সরেজমিনে অনুসন্ধান করা। সেই মুয়াইনা-র অপভ্রংশ বা শর্টকাট রূপই হলো ‘ময়না’।
মুয়াইনা শব্দের অর্থ চোখের সামনে প্রত্যক্ষ ও পরিষ্কারভাবে সবকিছু দেখা। ফার্সি শব্দ মুয়াইনা বাংলায় এসে রূপ পেয়েছে ‘ময়না’। সব মিলিয়ে বলা যায় সরেজমিনে দেখা বা ভালো করে দেখার অর্থ হলো ময়নাতদন্ত।
আবার কারো কারো মতে এর সঙ্গে সত্যিই ময়না পাখির মিল রয়েছে। ময়না পাখি দেখতে কালো, এই পাখির ঠোঁট হলুদ। প্রায় তিন থেকে তেরোরকমভাবে ডাকতে পারে এটি। অন্ধকারে ময়না পাখি চোখে দেখা যায় না।
অন্ধকারের কালোতে নিজের কালোকে লুকিয়ে রাখে ময়না। কেবল অভিজ্ঞ মানুষ তার ডাক শুনে বুঝতে পারেন যে এটা ময়না পাখি। না দেখা ময়নাকে যেমন অন্ধকারে কেবল কণ্ঠস্বর শুনে আবিষ্কার করা যায়, তেমনই পোস্টমর্টেমও অন্ধকারে থাকা কারণকে সামান্য সূত্রের মাধ্যমে আবিষ্কার করার মাধ্যম।
সামান্য সূত্র থেকে আবিষ্কার হয় বড় কিছু। আর তা থেকেই বেরিয়ে আসে রহস্যের মূল কারণ। খুঁজে বের করা যায় আসল অপরাধীদের। পাওয়া যায় মৃত্যুর কারণ। এজন্যই পোস্ট মর্টেমের বাংলা হয়েছে- ময়নাতদন্ত।
No comments