সম্পদ লুট জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট
অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ ভোগ করা, জবরদখল করা, নিজের মনে করে নিয়ে নেওয়া, অন্য কারও জন্য গ্রহণ করা কিংবা নষ্ট করা ইসলাম কখনোই অনুমোদন করে না। একইভাবে কোনো বিপদগ্রস্ত, সংখ্যালঘু মানুষের অর্থ-সম্পদ লুট করে নেওয়া কিংবা পলাতক কারও সম্পদকে গণিতের সম্পদ মনে করা উচিত না। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের সম্পদ লুটপাট করা হচ্ছে কবিরা গুনাহ। আর একটি কবিরা গুনাহই কারও জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। জানা সত্ত্বেও অসৎ উপায়ে মানুষের সম্পদ গ্রাস করার উদ্দেশে তা বিচারকের কাছে নিয়ে যেয়ো না।’ (সুরা বাকারা ১৮৮)
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন দাস ছিল মিদআম (রা.)। খায়বার যুদ্ধে যখন মুসলমানরা বিজয়ী হলেন, তখন সবাই যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরবেন, যাত্রাপথে এক জায়গায় মিদআম (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য হাওদা (উটের দ্বারা বহন করা বিছানা) নামানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি তীর এসে তার শরীরে লাগল। তীরটি এমনভাবে তার শরীরে বিদ্ধ হলো যে, সেই আঘাতে তিনি ইন্তেকাল করলেন। যুদ্ধ শেষে ফেরার পথে আততায়ীর আঘাতে নিহত হওয়ায় অন্য সাহাবিরা এটাকে ‘শহীদী মৃত্যু’ ভাবলেন। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন, ‘তার কী সৌভাগ্য!’ তিনি শহীদের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তার জন্য তো এখন জান্নাত ওয়াজিব ইত্যাদি।’ তখন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘটনা জানা মাত্রই বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, বণ্টনের আগে খায়বারের গনিমত থেকে যে চাদরখানা সে তুলে নিয়েছিল সেটি আগুন হয়ে অবশ্যই তাকে দগ্ধ করবে। এ কথা শুনে আরেক লোক একটি অথবা দুটি জুতার ফিতা নিয়ে এসে বললেন, এ জিনিসটি আমি বণ্টনের আগেই নিয়েছিলাম। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ একটি অথবা দুটি ফিতাও হয়ে যেত আগুনের ফিতা। (সহিহ বুখারি)
এ হাদিস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, বণ্টন করার আগেও গনিমতের সম্পদ ভোগ করার অনুমতি নেই। বরং এটাও খেয়ানত বলে গণ্য হবে। আর যা গনিমতের সম্পদ নয়, তা অন্যায়ভাবে দখল করে ভক্ষণ করা কীভাবে বৈধ হতে পারে?
এমনকি হাসি তামাশা করেও কোনো মানুষের সম্পদ ভোগ করা বৈধ নয়। সাহাবি ইয়াজিদ ইবনে সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন ঠাট্টা বা খেলার ছলেও কারও সম্পদ গ্রহণ না করে। (সুনানে তিরমিজি)
একইভাবে সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক সম্পদও অনেকে বুঝে না বুঝে নষ্ট করেন। ক্ষয়ক্ষতি করেন। নিজের জন্য গ্রহণ করেন। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। এ জাতীয় কাজ থেকে আমাদের বেঁচে থাকা আবশ্যক। মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে, কেউ যদি কারও থেকে একটি লাঠিও অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে, সে যেন তা তার মালিককে ফিরিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের অবৈধভাবে মানুষের অর্থ সম্পদ ভোগ-দখল করা থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন।
No comments