কল্পের গল্প- ১১৬৫
শীতের সকাল।
সময় সকাল ৯টা বেজে ১ মিনিট । যদিও বাহিরের আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছিলো এখনো সকালই হয়নি।
মন টা আজ খুব খুশি খুশি কারন আজ রাতে আমি গ্রামে যাচ্ছি ।
বাস ভ্রমণ আমার বরাবরের মতই ফেভারিট লিস্টে,
যাই হোক লাফদিয়ে বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াস রুমে।
ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখলাম নানু টেবিলে নাস্তা দিয়ে দিয়েছে..
খেয়ে বের হলাম। দুখু ভাই এর টঙে গেলাম, চা খেলাম শান্তর সাথে, কিছু ক্ষন আড্ডা দিয়ে টিকিট কেটে বাসায গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হতে হতে সন্ধ্যা হলো,
বের হলাম রিক্সা নিয়ে আবদুল্লাহপুরের উদ্দেশ্যে, কিছুদুর যাওয়ার পরই রিক্সাটার চাকা গর্তে আটকে গেলো, পরতে পরতে লাফ দিয়ে নেমে দাড়িয়ে গেলাম।
আবার রিক্সায় উঠে যাত্রা শুরু করলাম একটু সামনে যেতেই অল্পের জন্যে ট্রাকের সাথে বাধতে বাধতে বেচে গেলাম। কেমন জানি লাগছিলো, গাড়ি রাত ১০টার, ঘড়ির কাটায় সময় এখন রাত ৮টা বেজে ২৬ মিনিট, রিক্সা ছেড়ে দিয়ে এবার হেটে রওয়া হলাম কাউন্টারের দিকে।
পৌছালাম ৯টায়।
.
কিছুক্ষন পর ৯টা ৪৫ এ বাস আসলো, নতুন গাড়ি, ফুল দিয়ে সাজানো।
এক ভদ্রলোক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো
-ভাই যাবেন কোথায়?
-বললাম বরিশাল।
-বাস নাম্বার কতো?
-১১৬৫।
-ভাই আপনি একাই যাবেন?
-এমন একের পর এক প্রশ্ন শুনে মনে মনে সন্দেহ হচ্ছিলো খারাপ লোকনাতো...আজকাল আসলে কাউকে বিশ্বাস করতেও ভয় হয়।
যাইহোক বললাম আমি একাই যাচ্ছি।
-ভাই আমার গাড়ি নাম্বার ১১৬৪। যে গাড়িটা দাড়িয়ে এটাই। কিন্তু আমার এক বন্ধু ঐ যে দেখেন দাড়িয়ে কথা বলছে, অনেক দিন পর দেখা, ওর সাথে যাবো ভাবছি, কিন্তু টিকেট পালটানোর মতো সময় শেষ, কউন্টার থেকে বললো কেউ এক্সচেন্জ করলে আপনি পালটিয়ে নিতে পারেন গাড়ি ১০টায় ছাড়বে তাই তারাতারি করেন । যদি আপনার টিকেট টা আমাকে দিয়ে এই বাসে যেতেন অনেক খুশি হবো এবং কৃতজ্ঞ থাকবো।
- ভাবছি আমার যেহেতু পরিচিত কেউ নাই তাহলে তো আর সমস্যা নাি আমার, আর গাড়িটাও নতুন, ভালো লাগছে, তো চলেই যাই এটাতে সুযোগ যেহেতু পেয়েছি। এই নিন টিকেট।আমারও যেতে ইচ্ছে করছিলো এইটাই , কারন নতুন বাস , যাক ২ জনের ইচ্ছাই পূরণ হলো.. ভালো থাকবেন ভাই, আসি..
টিকেট পালটে উঠে পরলাম বাসে। মন টাও ভালো। টিকেট পেয়েছিলাম C-2. আর এখন আছি A3 তে, বরাবরই আমার সামনের সিট পছন্দ। ইতি মধ্যে আমার ১১৬৫ ও এসে হাজির। নাইটকোচ যেহতু তাই ঠিক হলো একসাথেই যাবে দুটো বাস।
.
.
বাসের ইন্জিন start হলো, গাড়ির চাকা ঘুরছে, পেছনে ১১৬৫ আর আমি ১১৬৪ এ।
সময় রাত ১১টা ১০।
২০মাইল দিয়ে ডুকলো বাস দুটো, কারন shortcut road এটা।
নবীনগর পার হলো। ২ ইগল একের পর এক ওভারটেক করছেই। দুটোই নতুন।
রাত ১২টায় ফেরী ঘাট।
১টার ফেরিতে পার হওয়ার সিরিয়াল পেলাম। ফেরিতে গাড়ি ওঠার পর নামলাম বাস থেকে, নদীর পানির ঢেউ আর হাড় কাপানো ঠান্ডা বাতাসে টিকতে না পেরে বাসে ওঠে বসলাম আবারো ।
ও বলাইতো হলোনা পেছনের গাড়িটি সুযোগের সৎ ব্যাবহার করে আমাদের সামনে এসে পরে, কিন্তু দূর্ভাগ্য বশত দুটি বাস একই ফেরিতে উঠতে পারেনি, পাশের ফেরিতে উঠলো আমাদের বাস ১১৬৪ ,
দুটো বাসের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলো ১০মিনিটের।
ফেরী পার হলাম। বাস নামবে ফেরী থেকে সব জানালা বন্ধ করতে বলল সুপারভাইজার কারন ধূলো, গেট লক করে দেয়া হলো, শুরু হলো মাত্রা অতিরিক্ত গতির টান..।
একটানে ৩/৪টা করে বাস, ট্রাক প্রাইভেট কার পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে আমাদের ১১৬৪ অপর বাস ১১৬৫ কে ধরতে, এরই মধ্যে একটু ভুলের জন্য গাছের ছোটো শাখা ডাল এর বাড়ি লেগে ডান পাশের লুকিং গ্লাস ফেটে গেছে, ড্রাইভার একটু গতি কমালে সামনের দিকের যাত্রিরা কয়েকজন বলছে আরো জোরে চালান ভাই সকাল সকাল পৌছাতে হবে গ্রামে ,কাজ আছে , এমনিতেই ফেরি তে লেট হয়ে গেছে। একটু রাগের মতো মুখ ঘুড়িয়েই ড্রাইভার গিয়ার shift করলেন, গড়ির গতি বারতে বারতে এবার গিয়ে দাড়ালো 124kmph এ।
চাঁদের আলোয় আসে পাশের কিছু খোলা যায়গা ও গাছ পালা ভালই লাগছে, আর সামনেতো 150w করে Hallozen এর ৮ টা বাতি জ্বলছে , সবকিছু দিন এর মতো পরিষ্কার লাগছে দেখতে..
কিছুক্ষণ এর মধ্যে দেখা গেলো সামনে ঈগল ১১৬৫ এর ব্যাক দেখা যাচ্ছে.. গাড়ির গতি এখন 132kmph Max Speed এ ..
পেছন থেকে হর্ন , লাইট এর সিগনাল দিয়ে ওভার-ট্যাঁকের জন্য মাথা বের করতেই দেখে ট্রাক , অল্প একটুর জন্য লাগলোনা, সামনের বাস টিও টানছে..
কয়েকবার চেষ্টা করে পারলোনা দেখে যখন ড্রাইভার সুযোগ এর অপেক্ষা করছে কিছুটা গতি কমিয়ে ঠিক তখন আমার পেছন থেকে ২জন বললো কি গাড়ি চালান , এতক্ষণ লাগে নাকি ওভার-ট্যাঁক করতে্...
আবারো শুরু হলো পাগলামি ওভার-ট্যাঁকিং এর..
সাইড দিলো ১১৬৫... ঘণ্টায় গাড়ির গতি 130kmph....
মাথা বের করে যখন বাস টা পাশের বাস এর মাঝা মাঝি আসছে ঠিক তখন সামনে থেকে অন্য একটি বাস দূর থেকে সিগনাল দিচ্ছে.. একটু স্লো করতে নিছে আর অমনি যাত্রীর চিৎকার , টানেন ওস্তাত পার হইয়া জান আর সুযোগ দিবোনা পরে ..
ড্রাইভার ও টানছে ২টা বাস যখন পাশা পাশি তখন সামনের বাস টাও কাছা কাছি এসে পরেছে .. ১১৬৫ হার্ড ব্রেক চাপলো ১১৬৪ কে বাঁচাতে.. কিন্তু ১১৬৫ ব্যর্থ হলো.. ২টি বাস মুখো মুখি লেগে যায় , এবং পাশের ঈগল টিও রক্ষা পায়নি.. চখের পলকে মুহূর্তেই ছিটকে রাস্তার দুইপাশে ৩ টি বাস পরে যায়..।
অনেকে মারা যায় , আমি রক্তাক্ত দেহ নিয়ে সিট থেকে মেঝে তে পরে আছি , চারিদিকে রক্ত আর রক্ত ছরিয়ে আছে..
হঠাৎ সব ঝাপসা হয়ে গেলো..
নানু ডাকছে এই সাগর ওঠ, ওঠ সাগর ওঠ..
লাফ দিয়ে উঠে বসলাম..
- কিরে তোর শরীর এতো ঘামছে কেনো এই শীতের দিনে ?
- এমনি নানু কিছুনা..
ফোন টা হাতে নিলাম দেখি স্বপ্নে দেখা সেই সময় ৯ টা বেজে ১ মিনিট মাত্র..
বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াস রুমে গেলাম, ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখলাম নানু টেবিলে নাস্তা দিয়ে দিয়েছে.. সেই সপ্নের মতই রুটি আর গরুর তরকারি..
যাইহোক খেয়ে টঙে গেলাম, শান্ত আসলো.. আড্ডা দিয়ে টিকিট কাটতে গেলাম্...
টিকিট কেটে বের হয়ে টিকিটের নাম্বার দেখে চোক্ষু চড়ক গাছে উঠলো ,
আমার স্পষ্ট মনে আছে,
আমার স্বপ্নে দেখা সেই টিকিট নাম্বার..
১১৬৫....
লেখা : আরিফুল ইসলাম
No comments