Adsterra

১০ বছর আগে হাত-পায়ের রগ কাটা হয়েছিল, এবার সেই ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

১০ বছর আগে হাত-পায়ের রগ কাটা হয়েছিল, এবার সেই ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News

এক দশক আগে হামলায় পা হারান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। তখন তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। এবার তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।


গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে বিনোদপুর বাজারে হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে থানায় সোপর্দ করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে তিনি মারা যান। নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


ওসি মাসুদ পারভেজ আজকের পত্রিকা’কে বলেন, গতকাল শনিবার রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদকে পিটিয়ে গুরুত আহত করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এখন পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তিনি আরও বলেন, একদল শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় তাঁকে ধরে মতিহার থানায় নিয়ে যায়। তারা তাঁর বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ তোলে। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য তাঁকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়।


আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এতে মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁ পা। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। 


সেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রলীগ নেতা সালেহ মো. টগরের উপরও হামলা। ওই ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।

 

ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। তাঁর অন্য পা শনিবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয়। বোয়ালিয়া থানা হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদ বলেন, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম, ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’ 

 

মাসুদকে যখন আনা হয়, তখন বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। ৫ আগস্ট এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুই যুবককে ধরে থানায় এনেছিলেন তিনি। থানায় তিনিও মাসুদকে দেখেন। 


মাসুদের মৃত্যুর খবর শুনে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা যে দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যেই আহত অবস্থায় একজনকে আনতে দেখলাম। কিন্তু কারা তাকে এনেছিল চিনতে পারিনি। পুলিশের এটা ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল।’ 


জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। 


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ।


গতকাল শনিবার নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩–৯–২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সব আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’

No comments

Powered by Blogger.