Adsterra

ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতিতে কার কত ক্ষতি

ভারত কানাডা সম্পর্কের অবনতিতে কার কত ক্ষতি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

কানাডা–ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল অনেক দিন থেকেই। সে দেশে বসবাসকারী ‘খালিস্তানপন্থী শিখ নাগরিকদের দৌরাত্মে৵র দরুন’। ট্রুডো সরকারকে বারবার বলেও কানাডার মন গলাতে পারেনি ভারত। গত দুই দিনের মধ্যে যা ঘটে গেল, তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে, খুব শিগগির সম্পর্ক জোড়া লাগার সম্ভাবনা ক্ষীণ।


ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধারণা, আগামী বছরের অক্টোবরে সংসদীয় নির্বাচন পর্যন্ত সম্পর্ক এমনই চলবে। সেই ভোটে বোঝা যাবে, জাস্টিন ট্রুডো তাঁর দল লিবারেল পার্টিকে ফের ক্ষমতাসীন করে তুলতে পারবেন কি না।


ভারত মনে করছে, কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ভারত বিরোধিতার যে নজির রেখে চলেছেন, তার মূল উদ্দেশ্য সে দেশে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের সমর্থন। ওই সম্প্রদায়ের একটি অংশের মধ্যে খালিস্তানপন্থীদের প্রভাব যথেষ্ট। শিখ নেতা জগমিত সিংয়ের দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি ট্রুডো সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন ট্রুডো।


জগমিত সিং স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের সমর্থক। শিখদের মন জিততে খালিস্তানিদের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া ট্রুডোর কাছে আর কোনো রাজনৈতিক বিকল্প নেই বলে ভারত মনে করছে। যে তাস তিনি খেলে ফেলেছেন, তা থেকে সরে আসার উপায় তাঁর নেই।


ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য

তাসটি ছিল শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যা–সংক্রান্ত। দিল্লির চোখে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত হরদীপ সিং নিজ্জরের দল ‘শিখস ফর জাস্টিস’ ভারতে নিষিদ্ধ। গত বছর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো জানিয়েছিলেন, নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত বলে তাঁদের সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য খবর আছে। ভারতকে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছিলেন তিনি।


শুরু থেকেই ভারত নিজ্জর হত্যার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্তরে কোনো রকম সংস্রব থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। ট্রুডোকে তাঁর অভিযোগের সমর্থনে বারবার প্রমাণ দিতেও বলেছে; কিন্তু কোনো প্রমাণই কানাডা সরকার দিতে পারেনি বলে ভারতের দাবি। এই পরিস্থিতিতে গত বছর কানাডা পুলিশ কয়েকজন ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে গ্রেপ্তার করে। তা নিয়ে ভারত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল।


কয়েক মাস পর কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ভারত ও পাকিস্তান সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। সেই অভিযোগও ভারত অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি খালিস্তানিদের সক্রিয়তা রুখতে, ভারতবিরোধী প্রচার বন্ধে, কূটনীতিকদের হুমকির মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণে ট্রুডো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নয়াদিল্লি; কিন্তু কোনো আরজিই কানাডা মানেনি। ভারতকে জানানো হয়, ভারতবিরোধী আন্দোলনে শামিল হওয়া সে দেশের শিখ নাগরিকদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার।


গত রোববার কানাডা সরকার নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সে দেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ আনে। ভারতকে পাঠানো বার্তায় কানাডা সঞ্জয়কে ‘স্বার্থসম্পর্কিত ব্যক্তি’ (পারসন অব ইন্টারেস্ট) বলে উল্লেখ করে।


গতকাল সোমবার দুপুরেই কড়া ভাষায় তার জবাব দেয় ভারত। নির্বাহী হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস উইলারকে ডেকে প্রতিবাদপত্র হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় বহিষ্কার করে কানাডা দূতাবাসের ৬ কূটনীতিককে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন স্টুয়ার্ট রস উইলারও। আগামী শনিবারের মধ্যে তাঁদের সবাইকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে।


এক বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি; কিন্তু এবার পাল্টাপাল্টি ছয়জন করে কূটনীতিক প্রত্যাহার, তদন্তের নিরিখে খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্ককে জটিলতর করে তুলেছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) মনে করে, দুই দেশ সংযত না হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তা শিগগিরই প্রভাব ফেলতে পারে। সেটা কারও পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়।


জিটিআরআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২–২৩ সালে ভারত–কানাডা বাণিজ্যের বহর ছিল ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩–২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন। গত বছর কানাডায় ভারতের রপ্তানি ছিল ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, আমদানি ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন। জিটিআরআইয়ের মতে, কূটনৈতিক সম্পর্কহানি সত্ত্বেও বাণিজ্যিক সম্পর্কে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি; কিন্তু সম্পর্ক শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছলে চিন্তা বাড়তে পারে।


বাণিজ্যের গতি রোধ না হলেও অন্যত্র কিছু প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। যেমন এক বছর ধরে কানাডা সে দেশে যাওয়ার জন্য কম ভিসা ইস্যু করছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের। দুই দেশের মধ্যে অভিবাসীদের যাতায়াতও কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরের নভেম্বর থেকে এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লি–টরন্টো বাড়তি ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। ভিসা কমে গেলে দুই দেশের বিমান পরিষেবার ক্ষতি হবে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও ব্যাহত হবে।


২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় আট লাখ। সে দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ১ শতাংশই শিখ। পাঞ্জাবের অর্থনীতির অনেকটা তাঁদের ওপর নির্ভরশীল। ভিসা কমে যাওয়া পাঞ্জাবে অন্য ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে আলোচনা চলছে, কূটনৈতিক সংকটের দরুন আপাতত তা ব্যাহত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।


অন্য এক আশঙ্কাও রয়েছে। সেই শঙ্কা সে দেশে বসবাসকারী খালিস্তানপন্থী শিখ ও অন্য ভারতীয়দের মধ্যে সম্পর্কহানির সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের খবর, নিজ্জর হত্যা ও কূটনৈতিক সম্পর্কহানির প্রভাব অরাজনৈতিক সামাজিক স্তরে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.