বিদায় বেলাতেও বললেন না, না বলা কথা
২৫শে অক্টোবর, ২০২৩ মুম্বইয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। অথচ সেই আসরে তার খেলারই কথা ছিল না। তিনি আর জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন না এমনটাই ছিল তখনকার আলোচনা। নানা আলোচনা-সমালোচনায় তার ভেতরেও জমে ছিল প্রচণ্ড অভিমান আর ক্ষোভ। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখন এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যদিও আমার অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু এটা হয়তো ওইসব কথা বলার জন্য সঠিক সময় নয়।’ এবারো ভারতে একই কথা বললেন দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি থেকে আসরের ঘোষণার দিন একই উত্তর দিলেন। তবে কথা দিলেন সেই ‘না বলা কথা’ তিনি বলবেন, তার জন্য সময়ের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভুলি নাই, অবশ্যই বলবো। এখনো সঠিক সময় হয়নি। আমি খেলা শুরু করেছি নিজের ইচ্ছায়, বিদায়ও নেবো নিজের ইচ্ছায়। আর ওটা আপনারা সময় মতো অবশ্যই পাবেন, গরম খবর।’ ২০২১ সালে অনেকটা নাটকীয়ভাবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে এবার কোনো নাটকীয়তা নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার আগে সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। অবশ্য লম্বা সময় টি-টোয়েন্টি থেকে বিরতিতে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফিরে এসে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ পেলেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও ছিলেন ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১৩৯টি ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১২ই অক্টোবর হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। সেটিই হবে বাংলাদেশের জার্সিতে মাহমুদউল্লাহ’র শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এবার অবসরের আগে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অনেক ভেবেই তা করেছেন। আর তার ক্যারিয়ারের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, ‘এক ফোঁটাও আক্ষেপ নেই আমার। বাংলাদেশের জন্য এতগুলো বছর খেলা এটা আমার জন্য বিশাল একটা বিষয়। ২০০৭-এ শুরু করে এতদিন পর্যন্ত আমি যতদূর এসেছি, জানি না কতোটুকু সফল হয়েছি কিন্তু সত্যি বলতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং আমি খুশি।’
অবসরের আগে নিজের ভাবনা নিয়ে আলাপ করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘ভারত সিরিজের জন্য অনুশীলন শুরুর সময় থেকেই চিন্তা করছিলাম। পরিবারকে বললাম, ওরা বললো যে এটা হয়তো সেরা সময় না। তখন আমি আবার ওদের বোঝাই। এরপর ওরা বুঝেছে এবং নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বললাম কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে কথা বললাম। তখন মনে হয়েছে এখনই অবসর ঘোষণার সেরা সময়।’ তবে তার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে দেশের জন্য কোনো ট্রফি এনে দিতে পারেননি। এই জন্য কিছুটা খারাপ লাগা থাকলেও অবশ্য তার কোনো অক্ষেপ নেই সেটিও জানালেন। তিনি বলেন, ‘ট্রফি নেই এটা একটা খারাপ লাগা। কিন্তু এটা আমি মানতে রাজি না যে অর্জন নেই। ট্রফি জেতাই যদি বেঞ্চ মার্ক হয় তাহলে পৃথিবীর অনেক লিজেন্ডদেরই সম্মান দেয়া হতো না। আমি অনেকের কাছ থেকে শুনি এমনকি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও শুনি যে আমরা বা পঞ্চপাণ্ডব শিরোপা জেতেনি। দেখুন, আমি যখন ২০০৭ সালে ড্রেসিংরুমে ঢুকি তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা এই সময়ের মতো ছিল না। আর এটা শুধু পঞ্চপাণ্ডব, সবার অবদান আছে। কখনই শিরোপার ওপর হিসাব করে সাফল্য-ব্যর্থতা হিসাব করা উচিত না।’
No comments