Adsterra

বিপর্যয়ের শঙ্কা ইসরায়েলেও

বিপর্যয়ের শঙ্কা ইসরায়েলেও, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস পুরনো। লেবাননে দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরেই তেল আবিরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হিজবুল্লাহ। তবে দুপক্ষের মধ্যে চলমান এই সংঘাত অতীতের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। তাতে একদিকে যেমন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে অঞ্চলটি, অন্যদিকে মানবিক সংকটের মুখে পড়েছেন লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক। এমন সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে-আকাশ ও স্থল পথে সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে কি আসলেই হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে ইসরায়েল? এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরা জানায়, তেল আবিবের লাগাতার হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি পশ্চাৎপদ হলেও, তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা একরকম অসম্ভবই।


গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতের বিভিন্ন অংশে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর আগে গোষ্ঠীটির সদস্যদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটায় মোসাদ। এরপর থেকেই দুপক্ষের মধ্যে বিমান ও রকেট হামলা অব্যাহত রয়েছে। তেল আবিবের হামলায় গোষ্ঠীটির প্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যু হয়েছে। হিজবুল্লাহর প্রায় দেড় হাজার স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে গোষ্ঠীটির অস্ত্রগার, গোলাবারুদ মজুদাগার ও সামরিক দপ্তর। বড় রকমের এ ধাক্কা সত্ত্বেও বিভিন্ন ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিতই রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে চলেছে হিজবুল্লাহ। যুদ্ধ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও ইসরায়েলের হামলা পক্ষান্তরে শক্তি বাড়াবে হিজবুল্লাহর। ২০০৬ সালেও দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত হয়। সে সময়ও হিজবুল্লাহকে বিনাশের ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় তেল আবিব। দেশটির সেনাদের দক্ষিণ লেবানন ছেড়ে চলে যেতে হয়। রক্তক্ষয়ী সে সংঘাতে নিজেদের জয়ী দাবি করে হিজবুল্লাহ। এরপর থেকে লেবাননের সমাজের সঙ্গে মিশে গেছে হিজবুল্লাহ। বিশেষ করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে। তাই এটিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার ধারণা অবাস্তব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।


এরই মধ্যে ইসরায়েলের স্থল অভিযান প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বছরের পর বছর যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে গোষ্ঠীটি। সমন্বিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে হিজবুল্লাহ সদস্যদের। এমনকি আগের থেকে শক্তি-সামর্থ্যওে অনেক এগিয়েছে হিজবুল্লাহ। বিশেষ বাহিনী ‘রাদওয়ান ফোর্সের কয়েক হাজার যোদ্ধা দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল সীমান্তে লড়াইয়ের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। গোষ্ঠীটির দাবি তাদের যোদ্ধার সংখ্যা লাখের উপরে।


প্রতিপক্ষের অবস্থান শনাক্ত করতে নানা ধরনের প্রযুক্তি ও নজরদারি ড্রোন ব্যবহার করে দুপক্ষই। হিজবুল্লাহ ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা পায়। ইসরায়েলের মতো তাদের ভা-ারেও আছে অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্র। যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম। ইসরায়েলের মারকাভা ট্যাংকবিধ্বংসী করনেট ক্ষেপণাস্ত্র আছে হিজবুল্লাহর কাছে। লেবানন জুড়ে নিজেদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে গোষ্ঠীটি। আর সে কারণেই ইসরায়েলের হামলার পরও নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে সক্ষম হচ্ছে হিজবুল্লাহ।


তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, সংঘাত কমাতে নিরপেক্ষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারে দুপক্ষ। তবে সীমান্তে এ ধরনের উদ্যোগ ইসরায়েলের জন্য সুখকর হবে না। এর ফলে স্থল বাহিনীর চলাচল নিজেদের স্থলভাগেই সীমিত রাখতে হবে। আবার নিরপেক্ষ অঞ্চল এড়িয়ে লেবাননে হামলা করতে বেগ পেতে হবে তেল আবিবকে। তবে তাতেও হিজবুল্লাহর আক্রমণ ঠেকাতে পারবে না তেল আবিব। সার্বিকভাবে দুপক্ষের যুদ্ধ অঞ্চলটিকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের মুখে ঠেলে দেবে। এতে হিজবুল্লাহ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ইসরায়েলও।

No comments

Powered by Blogger.