রেলের কালো বিড়াল ধরবে কে ?
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করেছে তার পেছনে ব্যয় হয়েছে দেড় শ কোটি টাকা। একইভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে তার পেছনে ব্যয় হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। বিপুল ব্যয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এই যে স্টেশন বিলাস এর পেছনে আসলে উদ্দেশ্য কী? সত্যিকার অর্থে যাত্রীসেবা দেওয়া না-কি উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাট? এই প্রশ্নই এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিয়াকৈর যে স্টেশন সেই স্টেশনে প্রতিবছর গড়ে আয় হয় মাত্র সোয়া নয় লাখ টাকা। বেতন-ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণ বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয় এই স্টেশনের পেছনে ৩০ লাখ টাকা। একইভাবে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের পেছনে নির্মাণ ব্যয় ব্যাপক, বিস্ময়কর! শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে। ২১৫ কোটি টাকা। ২৯ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা এই স্টেশনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের। এখানে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্তোরা, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা থাকার কথা বলা হয়েছে। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্য কেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কক্সবাজারে কি ট্রেন যায়? যাত্রী চলাচলের জন্য রেলপথ কতটা উপযোগী? তাহলে রেলপথের উন্নয়ন না করে, বেশি বেশি রেলওয়ে বগি না কিনে, বগি চালু না করে এইভাবে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করে তার পেছনে বিপুল খরচ করে দেশের আসলে কী লাভ? কী পরিমাণ রাজস্ব এসব জায়গা থেকে আসছে এই প্রশ্নটা এসেই যায়।
ভাঙ্গায় যে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ হয়েছে সেই ভাঙ্গার সংসদ সদস্য ছিলেন নিক্সন চৌধুরী। এর ঠিক ১২ কিলোমিটার আগে মাদারীপুরের শিবচর স্টেশন। এই শিবচরের এমপি ছিলেন লিটন চৌধুরী। তারা দু'জনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। শোনা যায়- তাদের প্রভাবে, তাদের তদবিরে বাধ্য হয়ে রেলওয়ে বিপুল ব্যয়ে স্টেশনগুলো নির্মাণ করেছে।
রেলওয়ের যে কালো বিড়ালের কথা আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনে এসেছি, বিশেষ করে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন রেলমন্ত্রী হলেন এরপরে তার এপিএস প্রায় কোটি টাকাসহ ঢাকার বিডিআর গেটে বিজিবির হাতে আটক হলেন। এরপরেই আসলে রেলওয়ের কালো বিড়ালকে থামানোর কথাটি সামনে আসে। রেলওয়ের সেই কালো বিড়াল কি আসলে থেমেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে? না-কি রেলওয়ের সেই কালো বিড়াল লাফিয়ে লাফিয়ে আরও জোরে চলেছে, দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
রেলওয়ের এই কালো বিড়ালকে অবিলম্বে ধরতে হবে, থামাতে হবে। দেশের অপচয়, দেশের অর্থ যারা লুট করেছে, দেশের যারা ক্ষতি করেছে তাদের হাত থেকে রেলওয়েকে বাঁচাতে হবে এবং অতি অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
No comments