Adsterra

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নীরব থাকায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নীরব থাকায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh

জুলাই-আগস্টে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্রিকেটারদের অনেকেই সমবেদনা জানিয়ে পাশে ছিলেন। তবে নীরব ভূমিকা পালন করায় সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছেন সাকিব আল হাসান। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আর দেশেই ফেরেননি।


সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সাকিবকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে, যেমনটা করেছেন আরেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। অবশেষে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন সাকিব।


দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্টে সাকিব লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে। শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা ও সমবেদনা।’


স্বজনহারা পরিবারের এই ক্ষতি অপূরণীয় উল্লেখ করে সাকিব লিখেছেন, ‘যদিও স্বজনহারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোনো কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়। এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।’


নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে সাকিব লেখেন, ‘আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে।’


বিশ্বের কাছে নিজের আসল পরিচয় একজন ক্রিকেটার, সেটি জানিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘যা হোক দিন শেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটটাকেই ধারণ করেছি। এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আপনারা।’


সমর্থকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি, তখন আমার সঙ্গে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচে পড়া ভিড়—আমাকে শক্তি জুগিয়েছে। আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই!’


দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের বিদায় টেস্ট খেলার ব্যাপারে সাকিব লিখেছেন, ‘আপনারা জানেন, খুব শিগগিরই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা। এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিদায় নিতে চাই।’


দেশের মাঠে বিদায় নিতে চান সাকিব, ‘বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।’


সাকিবের বিশ্বাস, বিদায়বেলায় দেশের মানুষ সাকিবের সঙ্গেই থাকবেন, ‘আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি—এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। সবাই সঙ্গে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক আমি নই, আপনারা!’

No comments

Powered by Blogger.