গণমাধ্যমকর্মী তামিম হত্যা, বিএনপি নেতা রবি ও ডিএনসির মামুন এখনও অধরা
রাজধানীতে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিম হত্যার ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল আলম রবিকে এখনও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে খুনের ঘটনায় রবির সাংগঠনিক পদ স্থগিত করেছে বিএনপি।
গত ১০ অক্টোবর আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে তামিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা। পরে পুলিশ ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
সোমবার ডিএনসির উপপরিচালক মামুনকে ক্লোজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতিও চলছে।
মামুনের সঙ্গে ডিএনসির ডিডি শামীম ও এক উপপরিদর্শকের নাম আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে মাদকের ডিজি বলেন, তাঁর সঙ্গে শামীমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। তবে অপরাধে জড়ালে এবং এর সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ও অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, মামুন ঢাকা দক্ষিণে এবং শামীম ঢাকা উত্তরে ডিডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিগত সরকারের সময় পছন্দসই স্থানে চাকরি করেন তারা। তবে মাত্র কয়েক মাস আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পরই তারা দু’জন ফের ঢাকায় ফিরেছেন। ডিএনসি কর্মকর্তাদের কাছে তারা ‘মানিকজোড়’ হিসেবে পরিচিত। তারা একসঙ্গে ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচলে বেনামে প্লট ব্যবসা করেন বলেও আলোচনা আছে।
ডিএনসির সূত্র বলেছে, শামীমের বিরুদ্ধে মাদকের পারমিট নবায়ন না করা ও নতুন পারমিট না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বার মালিক। মামুন ও শামীম মূলত ঢাকার আলোচিত কিংফিশার বারের মালিক মোক্তার হোসেন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের একান্ত সচিব (পিএস) হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাসের আস্থাভাজন হিসেবে ডিএনসিতে পরিচিত। হারুন বিশ্বাস বার এবং ওয়্যারহাউস অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মাদকের ডিডি শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, মামুন তাঁর ব্যাচমেট এবং বন্ধু। এ ছাড়া তাদের কোনো ব্যবসা নেই। যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার সবই সাজানো, বানোয়াট, কাল্পনিক ও মনগড়া। বক্তব্য জানতে মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রুহুল কবির খান জানান, ‘তামিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে যার নামই আসুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
রবির পদ স্থগিত
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবির সাংগঠনিক পদ স্থগিত করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রবিকে দলীয় পদ স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়েছে। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, তামিম হত্যার ঘটনায় তাঁর নাম আসায় এমন সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত থাকবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
গত ১১ অক্টোবর রবিকে শোকজ নোটিশ পাঠায় বিএনপি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতেও বলা হয়। তিনি যে জবাব দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক না হওয়ায় সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়েছে।
তামিম হত্যা মামলায় তিন নম্বর আসামি রবি। প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ওই কোম্পানি তামিমের বাবার জমিতে চুক্তির ভিত্তিতে একটি ভবন তৈরি করে। সেই ভবনের ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডেভেলপার কোম্পানির লোকেরা বাড়িতে ঢুকে তামিমকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে।
No comments