নদী দখল করে পাথর ব্যবসা
নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউপির তারঘাট বাজারের আশপাশে সরকারি জায়গায় রমরমা পাথর ব্যবসা চলছে। তবে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। নদীতে পাথর ফেলে রাখায় নদী হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতিধারা। পাথর সরানোর জন্য প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় কর্ণপাত করছেন না ব্যবসায়ীরা।
নান্দাইল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবহমান নরসুন্ধা নদী। নদীর তীরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে তারঘাট বাজার। এ বাজার থেকে নদীপথে নৌকা দিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতকের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে পাথর ব্যবসা। বর্ষাকালে একেকটি নৌকায় ৮ থেকে ১০ হাজার ফুট পাথর বহন করে এখানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু আশপাশে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পাথর নামিয়ে চরে রাখা হয়, কখনও কখনও ফেলা হয় নদীর পানিতে। পরে এসব পাথরের কিছু অংশ সারা বছর চরেই থাকে, বাকি অংশ মহাসড়কের দু’পাশে থাকা সড়ক ও জনপথের জায়গায় নিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়। কেউ কেউ আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ভাড়া দিয়ে পাথর রাখেন। পাথর রাখার জন্য প্রতি কাঠা (১০ শতক) জমি ৫০-৬০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ভাড়াও পাওয়া যায়। মেশিন দিয়ে পাথর ভাঙার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তাই চাহিদা অনুযায়ী, গ্রাহকের বিভিন্ন আকারের পাথর সরবরাহ করা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক পাকাকরণ ও স্থাপত্য নির্মাণকাজে এ পাথর ব্যবহার করা হয়। দিনরাত বেশ কয়েকটি মেশিনে পাথর ভাঙা হলেও কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সনদ ছাড়া ব্যবসায়ী কারও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
বর্ষা মৌসুমে এখানে ৫ থেকে ৬ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে চালু হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা। পাথর ব্যবসা ঘিরে প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি পাথর ব্যবসায়ী সমিতিও। আবার প্রত্যেক ব্যবসায়ীরই রয়েছে বিভিন্ন নামের অফিস। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছর এখানে আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার পাথর বেচাকেনা হলেও তারা ট্রেড লাইসেন্স করেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। এ ছাড়া সরকারকে আর কোনো ধরনের কর দিতে হয় না।
গতকাল তারঘাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চরে প্রচুর পাথর স্তূপ করে রাখা। নদীর পানিতেও ফেলা হয়েছে প্রচুর পাথর। ফলে এই জায়গার পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে কিছুটা ফুলে রয়েছে।
পাথর ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম আশিক ও আনিসুর রহমান জানান, নদীর চর ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। তাই সেখানে ভাড়া দিয়ে পাথর মজুত করেন তারা। কখনও কখনও নদীর পানিতে পাথর ফেলা হলেও সেগুলো পরে সরিয়ে নেন। এতে গতিধারা ব্যাহত হয় না। চরের জমি কী করে ব্যক্তিমালিকানা হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, ওপরের জমি যার, চরের জমিও তারই। আর সড়ক ও জনপথের জায়গা তো এমনিতেই পতিত পড়ে থাকে।
এ বিষয়ে মুশুলী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, তাঁর কার্যালয় থেকেই ব্যবসায়ীদের ৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্যান্য কর যেখান থেকে পাথর কিনে আনা হয়, সেখানেই দিয়ে আসেন।
তারঘাট পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাচ্চু জানান, তারা সেখানে বৈধ পথেই ব্যবসা করে আসছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিন দিনের মধ্যে নদী থেকে পাথর সরাতে বলে গেছেন; কিন্তু এত পাথর এ সময়ের মধ্যে সরাতে হলে যে ধরনের মেশিন থাকা দরকার, তা তাদের নেই। তাই মেশিন খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে সময় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সড়ক ও জনপথের জায়গায় পাথর রেখে ব্যবসা করার বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। তবে বিষয়টি দেখার জন্য একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেবেন।
নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমানের ভাষ্য, ৩ অক্টোবর ঘটনাস্থলে গিয়ে নদী থেকে পাথর সরাতে বলে এসেছেন। চরে পাথর রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে ওই জায়গাটি কখনও মাপা হয়নি। তাই না মেপে কিছু বলা যাচ্ছে না।
No comments