মেট্রোরেল নিয়ে কি তাহলে পরিকল্পিত মিথ্যাচার হয়েছিল ?
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন নিয়ে কেন মিথ্যাচার হয়েছিল? কেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেছিলেন অন্তত বছর লাগবে কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন চালু করতে? কেন বলেছিলেন, এই স্টেশন দুটি চালু করতে কমপক্ষে শতকোটি টাকার উপরে ব্যয় হবে? কারা তাকে দিয়ে এসব বলিয়েছিল? কারা শত শত কোটি টাকার এই ভুল, পরিকল্পিত ক্ষতির জানান দিয়েছিল? অবাক লাগে একটি দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর মুখ দিয়ে যখন এভাবে অসত্য তথ্য বলানো হয়।
কাজীপাড়া স্টেশন আগেও চালু হয়েছে, মিরপুর ১০ স্টেশনও চালু হলো মাত্র আড়াই মাসের মাথায়। তাহলে এটাতো পরিস্কার শেখ হাসিনার মুখ দিয়ে যেসব বক্তব্য এসেছিল সেটি মোটেও সঠিক ছিল না। তাহলে কেন তিনি এসব বলেছিলেন? এটা কী নগরবাসীর বিশেষ করে ঢাকাবাসীর সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা ছিল। নাকি একইসাথে শতকোটি টাকা ক্ষতির গল্প বলে সেই টাকা হাতানোর উদ্দেশ্য ছিল।
মেট্রোরেল নগরবাসীর জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে এসেছে একথা বলা যায়, এটা নিঃসন্দেহে যারা ব্যবহার করেন তারা স্বস্তি পান তারা অনেকটাই আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু মেট্রোরেল নির্মাণ করতে গিয়ে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে সেটা আদৌও কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে সেই প্রশ্ন রয়েই যায়। বিশেষ করে মাত্র ২০-২৫ লাখ টাকায় যখন ক্ষতি হওয়া স্টেশন চালু করা যায়, তখন সেই স্টেশন চালু করতে শেখ হাসিনা সরকার শতকোটি টাকা লাগবে বলে প্রচার করে। এই যে আকাশ চুম্বি খরচের পার্থক্য, এর মাধ্যমেই তো বোঝা যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে লুটপাট চালিয়েছে।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে সমস্ত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তার একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল সেসব প্রকল্প থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এভাবে হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে তার কতিপয় মন্ত্রী ব্যবসায়ী তাদের পকেটে ঢুকিয়েছে এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে।
মঈন খানের এই বক্তব্যের কি জবাব আসলে শেখ হাসিনা অথবা তার সাবেক মন্ত্রীরা দেবেন। আজকে শেখ হাসিনার আমলে যারা মন্ত্রী ছিলেন, তাদের একেকজনের যে কেস্যা, কাহিনি বেরোচ্ছে, শত শত হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, দুর্নীতির যে মহোৎসব তিনি চালু করেছিলেন সেটি থামানো বা দমানোর বিন্দুমাত্র পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। ওয়াবদুল কাদের ছিলেন প্রায় ১৪ বছর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। তার যে মন্ত্রণালয়, সেই মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা টেন্ডারবাজি হয়েছে, পদ্মাসেতু নির্মাণের যে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে, মেট্রোরেলে যে ব্যয় বেড়েছে। বাংলাদেশে যে ঋণগ্রস্ত হয়েছে দাতা সংস্থা গুলোর কাছে এই ঋণ কে শোধ করবে। এই দিনের বোঝা তো দেশের মানুষের উপরেই চেপে বসেছে।
মেট্রোরেলের স্টেশন চালু নিয়ে যে পরিকল্পিত মিথ্যাচার খোদ শেখ হাসিনাই করেছিলেন, সেটা কি যুক্তিসঙ্গত ছিল? কেন এভাবে একের পর এক মিথ্যাচার করে তিনি দেশ শাসন করছিলেন। ঢাকা টাইমস যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম তাদের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু কেউই কোনো উত্তর দেননি। আমরা চাই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন এবং দেশের মানুষ যাতে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে সেরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি হোক।
No comments