Adsterra

স্ত্রী ও মায়ের অধিকার

স্ত্রী ও মায়ের অধিকার,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

একটু অবসর পেলেই এখনও মা আমাদের সঙ্গে ছেলেবেলার গল্প করেন। ছোটবেলায় তিনি কীভাবে ভাইবোনদের সঙ্গে খুনসুটি করেছেন, কীভাবে সমবয়সীদের সঙ্গে গ্রামীণ খেলায় মেতে থাকতেন- এসব গল্প। আমি অবাক হয়ে শুনি। এত বছর হয়ে গেল তবুও কীভাবে মা এত নিখুঁতভাবে বলতে পারেন সেই ছেলেবেলার গল্প! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মনে হয় নারীদের মনে অতিরিক্ত মমতা ঢেলে দিয়েছেন। তাই তো তারা আপন ঘর, প্রিয়জন, বন্ধু, মাটি ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন মানুষ-মাটিকে আপন করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন। এ কথাগুলো আমার স্ত্রীর বেলায়ও খাটে। সেও তো তার প্রিয়জনদের ছেড়ে আমাদের ঘরে এসেছে। আপন করে নিয়েছে আমাকে, আমাদের সবাইকে। ফলে মা এবং স্ত্রী এ দু’জনের কাউকেই আমি কম গুরুত্ব দিতে পারি না। মায়ের পায়ের নিচে আমার বেহেশত। আর স্ত্রীর কাছে আছে আমার বেহেশতে যাওয়ার সার্টিফিকেট। রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সেই ভালো মানুষ যে তার স্ত্রীর চোখে ভালো।


মা ও স্ত্রী দু’জনই মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আপনজন। পৃথিবীর জীবনধারা প্রবাহিত রাখতে এ দু’জনের বিকল্প নেই। একজন আমাদের পৃথিবীর মুখ দেখায়। অন্যজন আমাদের সন্তানকে পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। একজন আমাদের ধর্ম শেখায়, অন্যজন আমাদের ধর্মের পূর্ণতা পেতে সাহায্য করে। তাই একজনকে অবহেলা করে অন্যজনকে মাথায় তুলে রাখা কখনই ইসলাম সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে একজন পুরুষকে অবশ্যই ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে।

ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য

দুঃখজনক হলেও সত্য! আবহমানকাল থেকেই আমাদের সমাজের পুরুষরা একপেশে নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ অতি মাতৃভক্তি দেখাতে গিয়ে স্ত্রীকে মানুষই মনে করেনি। আবার কেউ অতি স্ত্রী-প্রীতি দেখাতে গিয়ে মায়ের সব অবদান ভুলে থেকেছে নির্মমভাবে। স্ত্রীর কথায় মায়ের গায়ে হাত তোলা আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার মায়ের কথায় স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার ঘটনাও কম ঘটছে না। এভাবে ভারসাম্যহীন জীবনযাপনের ফলে দুনিয়া-আখিরাতের অশান্তি ছাড়া কিছুই কপালে জোটে না হতভাগ্য পুরুষটির। মূলত ইসলাম না জানার কারণেই আমরা ভারসাম্যহীন জীবন তথা দুনিয়ার জাহান্নাম অশান্তিময় পরিবার বেছে নিই।


আমরা সবাই একটি হাদিস জানি। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে কে? রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমার মা। লোকটি জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? আল্লাহর রাসূল বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? রাসূল (সা.) এবারও বললেন, তোমার মা। চতুর্থবারে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমার বাবা। (বুখারি ও মুসলিম।) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি মৃত্যুর সময় কালেমা পড়তে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সে স্ত্রীর কথায় মাকে কষ্ট দিত। রাসূল (সা.) এসে তার মায়ের কাছে ছেলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান। মা ক্ষমা করার পর সাহাবির মুখ দিয়ে কালেমা আসে। (মুসনাদে আহমাদ)


একজন পুরুষের কাছে মা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও দামি। তার মানে এটি নয় যে, স্ত্রীকে অবহেলা করতে হবে। মায়ের কোনো অভিযোগ শুনে যাচাই-বাছাই না করেই স্ত্রীকে মারধর করবে। কোরআন তো ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে বলেছে। আমরা অবশ্যই মাকে গুরুত্ব দেব। স্ত্রীকেও মূল্যায়ন করব। সেও তো আমার সন্তানের মা। স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মধুময়-প্রেমময় আচরণ কর। কোনো কারণে স্ত্রীকে যদি তোমাদের অপছন্দ হয়- তবে মনে রেখ, এ স্ত্রীর মধ্যেই আল্লাহ তোমাদের জন্য সীমাহীন কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা নিসা, আয়াত-১৯।) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে না। স্ত্রীর দু-একটি অভ্যাস ভালো না লাগলেও তার অনেক ভালো গুণ আছে, যা পুরুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। (মুসলিম, হাদিস নম্বর-১৪৬৯।) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর-১১৬২)।


পরিশেষে বলতে চাই, স্ত্রীর কথা শুনে বা স্ত্রীর প্রেমে অন্ধ হয়ে কোনোভাবেই মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। আবার বাবা-মাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে স্ত্রীকেও অবহেলা করা যাবে না। মনে রাখবেন, বাবা-মায়ের অধিকারের জন্য যেমন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে, একইভাবে স্ত্রীর হক সম্পর্কেও কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে জবাব দিতে হবে। তাই আমাদের উচিত হবে, সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে মা-বাবাকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া এবং স্ত্রীকে তার অবস্থান অনুযায়ী প্রেম দিয়ে সুখী-সুন্দর আদর্শ পরিবার গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে সুখের ঘর হিসেবে কবুল করুন।


No comments

Powered by Blogger.