‘আত্মসমর্পণ বা অনাহার’ নীতি নিয়েছে ইসরায়েল !
জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, এই আক্রমণের মাধ্যমে ইসরায়েল তাদের নতুন নীতি রূপায়ণের কাজ শুরু করেছে। এই নীতি হলো, হয় আত্মসমর্পণ, অথবা অনাহার। তারা উত্তর গাজা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দিয়ে পুরো জায়গাটা সিল করে দিতে চায়। ইসরায়েল এই পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলের সেনা উত্তর গাজাকে পুরো বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। ৪১ বছর বয়সি মোহাম্মদ বলেছেন, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান কাছের শহরে আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়েছিল। এরপর ইসরায়েলের কামান ও বিমান আক্রমণ শুরু হয়। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের আসতে মানা করে দিয়েছেন।
তাওফিক মেসেজ করে জানিয়েছেন, তিনি দক্ষিণ গাজায় যেতে চান না। তিনি সেখানে টেন্টে থকতে চান না। তারপর সেখানেও বোমা ফেলা হবে এবং মৃত্যু হবে। তিনি জানিয়েছেন, জাবালিয়ার অবস্থাও ভয়ংকর। তার পরিবার যে জায়গায় আছে, লড়াই তার খুব কাছে হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, আমরা বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছি। কামানের আওয়াজ পাচ্ছি। আমাদের মাথার উপর দিয়ে ড্রোন যাচ্ছে। মানুষ সমানে নিরাপদ জায়গার খোঁজে ছোটাছুটি করছে। আর কোনোদিন বাড়ি ফিরতে না পারার আতঙ্ক।
গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সব জায়গায় প্রবল সংঘর্ষ চলছে, সেখানে তারা যেতে পারছেন না। প্রচুর মানুষ আহত হচ্ছেন। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। রাস্তায় মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হিসাব, উত্তর গাজায় চার লাখ মানুষ আছেন। বিভিন্ন কারণে তারা উত্তর গাজা ছেড়ে যাননি। কেউ বয়স্কদের দেখভাল করছেন। কেউ অসুস্থ আত্মীয়দের সেবার জন্য থেকে গেছেন। অন্যরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি। কিন্তু সেখানে যেভাবে বিমান হামলা হচ্ছে, তাতে তারা নিরাপদ বোধ করছেন না। কিন্তু তাওকিফ ও মোহাম্মদের আশঙ্কা, তারা একবার চলে গেলে আর উত্তর গাজায় নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। কারণ, উত্তর গাজায় আসার সব রাস্তা এখন ইসরায়েলের সেনা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা আর তাদের ফিরতে দেবে না।
বিভিন্ন মিডিয়া, সংস্থা ও ফিলিস্তিনিদের মতে, ইসরায়েলের সরকার ক্রমশ আত্মসমর্পণ বা অনাহার নীতি রূপায়ন করছে। এটাই হতে চলেছে উত্তর গাজার জন্য তাদের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার জনক হলেন সাবেক এক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং কয়েকজন আমলা।
ইসরায়েলের মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে সেদেশের মন্ত্রিসভা সম্প্রতি এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে কথা হয়েছে। তবে তারা এই নীতি নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এই কৌশলের উদ্দেশ্য হলো হামাস ও তাদের নেতা সিনওয়ারকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা। সেজন্যই উত্তর গাজার মানুষের উপর এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
পরিকল্পনাটা হলো, উত্তর গাজার বেসামরিক মানুষকে দক্ষিণে যেতে বলা হবে। তারপর উত্তর গাজা সিল করে দেয়া হবে। যারা উত্তর গাজায় থাকবে, বুঝতে হবে তারা হয় হামাস সদস্য বা তাদের সাহায্যকারী। সেখানে সব সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে। তওফিক জানিয়েছেন, তারা আগের থেকেও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তারা সমানে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
No comments