Adsterra

৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ

৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাদের দেহাবশেষ জাপানে নেওয়া হচ্ছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ–গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম।

আবদুর রহিম জানান, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানে আছেন ২৪ জন। ফরেনসিক দল এই ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাবেন। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা আছে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি।

কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক বলেন, জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই সময়ে সেটি সম্ভব হয়নি। গত বছর থেকে তারা বিষয়টি নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকার আমাদের সরকারের কাছে চিঠি লেখে এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে। এখানে জাপানের পক্ষ থেকে সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যারা এ কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাদের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো। এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি।

দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা-ই পাচ্ছি, সবকিছুই জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্নসহকারে সংরক্ষণ করছে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই তারা (জাপানের প্রতিনিধিদল) দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে জাপান আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু ছিল। এ কারণে তাদের এ কাজে সহায়তা করতে পেরে আমার ভালো লাগছে। জেলা পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আমাদের খুবই সহযোগিতা করছে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আশা করছি কাজটি শেষ হবে। সেটি সম্ভব না হলে জাপান সরকার হয়তো আমাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলে সময় বৃদ্ধি করবে।

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধধর্মের ২৪ জন, হিন্দুধর্মের ২ জন ও বাকিরা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) ১, বেলজিয়ামের ১, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জনের সমাধি আছে।

ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য

প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকেরা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

No comments

Powered by Blogger.