Adsterra

২০২৪ সালে জলবায়ুর কোন রেকর্ডগুলো ভেঙে গেল ?

২০২৪ সালে জলবায়ুর কোন রেকর্ডগুলো ভেঙে গেল, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় রেকর্ডে থাকা ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০২৪ সাল ২০২৩ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) জানিয়েছে, ২০২৪ সাল রেকর্ডের সবচেয়ে উষ্ণতম হতে যাচ্ছে।

প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের মধ্যে প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যাবে। এটি প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমা।

এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর দিকে দেশগুলোকে কাজ করানো। লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার চেষ্টা করা।

'এর অর্থ এই নয়, প্যারিস চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে এর অর্থ হলো - উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু পদক্ষেপ আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে', সি3এস-এর উপ-পরিচালক সামান্থা বার্গেস বলছিলেন।

ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ২০২৪ সালে নাইজেরিয়া এবং ইউরোপে মারাত্মক বন্যা, দক্ষিণ আমেরিকায় বিধ্বংসী দাবানল, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক তাপপ্রবাহ এবং বিপর্যয়কর হারিকেনসহ বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো সৃষ্টি করেছে।


জানুয়ারি

বছরটিই শুরু হয়েছিল উত্তাপ দিয়ে। কারণ বিশ্ব রেকর্ডে থাকা সবচেয়ে উষ্ণ জানুয়ারির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল এই গ্রহ।

গড় ভূপৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা ছিল ১৩.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ২০২০ সালের জানুয়ারির উষ্ণতম তাপমাত্রার আগের রেকর্ডের চেয়ে ০.১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।


ফেব্রুয়ারি

ফেব্রুয়ারিতে উত্তর গোলার্ধ রেকর্ডের উষ্ণতম শীতকাল পার করেছে। সময়টিতে সমুদ্রের তাপমাত্রা অভূতপূর্ব স্তরে বেড়েছে।

এ মাসে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ২১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের আগস্টে নির্ধারিত ২০.৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও এই বৃদ্ধির জন্য আংশিকভাবে 'এল নিনো' জলবায়ু প্যাটার্নকে দায়ী করা হয়।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী রিচার্ড অ্যালান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের গভীর প্রভাবের ওপর জোর দিয়ে বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এল নিনোর কেন্দ্র থেকে দূরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের মতো অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড মাত্রায় রয়েছে।


জুন

সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পীভবনের গতি বাড়ে, মহাসাগর থেকে বাতাসে আরও তাপ স্থানান্তরিত হয়। যখন ঝড় উষ্ণ সমুদ্রের উপর দিয়ে যায়, তখন আরও জলীয় বাষ্প এবং তাপ শোষণ করে। এর ফলে ঝড় স্থলভাগে পৌঁছালে শক্তিশালী বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত এবং বৃহত্তর বন্যার সৃষ্টি হয়। জুনে আটলান্টিকে এটি দেখা গিয়েছিল।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, মৌসুমের প্রথম হারিকেন 'বেরিল' আটলান্টিকের রেকর্ড করা হয়। ক্যাটাগরি-৫ হারিকেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫২ কিলোমিটার বা তারও বেশি বাতাস নিয়ে বিপর্যয়কর ক্ষয়ক্ষতি করে।

২৮ জুন হারিকেন 'বেরিল' আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত ঘনীভূত হয়ে একটি বড় হারিকেনে পরিণত হয়। ২৯ জুন থেকে ৩০ জুন সকালের মধ্যে এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেড়ে 'অত্যন্ত বিপজ্জনক' ক্যাটাগরি-৪ এ পৌঁছায়।

১ জুলাই ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্যারিয়াকৌ দ্বীপে আঘাত হানার পর বেরিল আরও শক্তিশালী হতে থাকে। এটি ২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আটলান্টিক অববাহিকায় রেকর্ড করা ক্যাটাগরি-৫ এর হারিকেন হয়ে ওঠে।


জুলাই

১৯৪০ সালে শুরু হওয়া কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সি৩এস) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ২২ জুলাই দিনটি পৃথিবীর উষ্ণতম দিন ছিল। ওই সময় দৈনিক বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৭.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। এটি ২০২৩ সালের ১৭.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়।

বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা হল সমস্ত উষ্ণতম অঞ্চল, শীতলতম অঞ্চল এবং এর মধ্যবর্তী সর্বত্র গড়। এটি পৃথিবীর জটিল সিস্টেমের মধ্যে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

ইইউ ক্লাইমেট মনিটরের পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো এক বিবৃতিতে বলেন, গত ১৩ মাসের তাপমাত্রা এবং আগের তাপমাত্রার রেকর্ডের মধ্যে পার্থক্যটি সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা এখন সত্যিকার অর্থে অচিহ্নিত অঞ্চলে রয়েছি এবং জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকায় আমরা ভবিষ্যতের মাস এবং বছরগুলোতে নতুন রেকর্ড ভাঙতে বাধ্য।


জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের শহরগুলোতে রেকর্ড তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে আর্দ্রতা বিবেচনায় তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে।


আগস্ট

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গোলার্ধে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর আগস্ট সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্ম নিয়ে এসেছিল।

সি৩এস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেন, জুন ও আগস্টে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন এবং রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম বোরিয়াল গ্রীষ্ম ছিল।

এদিকে, দক্ষিণ গোলার্ধে, অস্ট্রেলিয়া ২৬ আগস্ট তার উষ্ণতম শীতের দিন রেকর্ড করেছে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিম্বারলি অঞ্চলের ইয়াম্পি সাউন্ডে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রেকর্ডে উষ্ণতম আগস্ট রেকর্ড করা হয়েছে।

শীতের গড় গড় তাপমাত্রা ১৯৬১-১৯৯০ সালের গড়ের চেয়ে ১.৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল, যা এটিকে রেকর্ডে দ্বিতীয় উষ্ণতম শীতকালেও পরিণত করে। ১৯১০ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে উষ্ণতম শীতকাল ছিল এটি। এছাড়া উষ্ণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে যায় শীত।


সেপ্টেম্বর

এই মাসে বরিস নামের একটি নিম্নচাপ প্রণালী মধ্য ইউরোপে মুষলধারে বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে। যার ফলে প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড এবং স্লোভাকিয়ার কিছু অংশে মাত্র পাঁচ দিনে তিন মাসের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যায় রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে, পুরো এলাকা ডুবে গেছে এবং বেশ কয়েকটি এলাকায় গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ বিঘ্নিত হয়েছে।

১৮ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওডার নদীর পানির স্তর দেশটির ইনস্টিটিউট অব মেটিওরোলজি কর্তৃক নির্ধারিত 'সর্বোচ্চ সতর্কতা' ক্যাটাগরির চেয়ে বেশি ছিল।

সেপ্টেম্বরে পশ্চিম আফ্রিকাতেও অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। নাইজেরিয়া, নাইজার, চাদ এবং মালিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বন্যা দেখা দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ প্রভাবিত হয়েছে।

নাইজেরিয়ায় বন্যায় ৩৪টি রাজ্যের ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে বন্যা অস্বাভাবিক কিছু না হলেও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বোর্নো রাজ্যের রাজধানী মাইদুগুরিতে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে।

১০ সেপ্টেম্বর একটি আঞ্চলিক নদীকে আটকে রাখা বাঁধের তীর ভেঙে গেলে এই বিপর্যয় ঘটে। এর ফলে পানি জমে মাইদুগুরির অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয়, ভবন ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বিশ্বের অন্য প্রান্তে, বলিভিয়ায় দাবানল এই বছর ১০ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি ধ্বংস করেছে। প্রাথমিকভাবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় পূর্বে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ দাবানল মৌসুম চিহ্নিত হয়েছে এটি। টিয়েরা ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, পোড়া এলাকাটি আয়তনে আইসল্যান্ড বা কিউবার সঙ্গে তুলনীয়।

দাবানল থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অংশে বায়ুর গুণমানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেপ্টেম্বর, দাবানল থেকে কার্বন নিঃসরণ ২০১০ সালের আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে কার্বন নিঃসরণ ১০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি পৌঁছেছে - যা জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে বলিভিয়ার ২০২৩ সালের কার্বন নির্গমনের চারগুণ।

বিজ্ঞানীরা দাবানলের দ্রুত বিস্তারের জন্য মানুষের ক্রিয়াকলাপকে দায়ী করেছেন। গত বছর থেকে টানা তাপপ্রবাহ ও দীর্ঘস্থায়ী খরাও সহ্য করছে দক্ষিণ আমেরিকা।

তিয়েরা ফাউন্ডেশনের পরিচালক গঞ্জালো কোলক বলেন, ২০২৪ সাল বলিভিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের বছর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


অক্টোবর

অক্টোবরের শেষের দিকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে স্পেনে মারাত্মক বন্যা দেখা দেয়। ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা এইএমইটি জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবর চিভার একটি আবহাওয়া স্টেশন মাত্র আট ঘণ্টায় ৪৯.১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে, যা এক বছরের সমান বৃষ্টিপাতের সমান।

মৃতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক হারে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হয়। ভ্যালেন্সিয়ায় হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং পরিবহন পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। যানবাহন ও দ্রুতগতিতে বয়ে যাওয়া বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বহু মানুষ।


নভেম্বর

এই মাসে দক্ষিণ কোরিয়া শীতল আবহাওয়ার সূচনা অনুভব করেছিল। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে একটি ঝড় সিউলে রেকর্ড ব্রেকিং তুষারপাত নিয়ে আসে। ফলে যাতায়াত ব্যাহত এবং রাজধানী ও আশেপাশের অঞ্চলে কাঠামোগত ক্ষতি হয়।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সিউলে নভেম্বরের সবচেয়ে ভারী তুষারপাত রেকর্ড ছিল এটি। কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসনের মতে, ২৮ নভেম্বর সিউল এবং আশেপাশের অঞ্চলে ১৬.৫ সেন্টিমিটার (৬.৫ ইঞ্চি) তুষারপাত হয়েছে, যা ২৮ নভেম্বর ১৯৭২ সালের ১২.৪ সেন্টিমিটার (৪.৮ ইঞ্চি)-এর রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.