প্রটোকল ছাড়াই ফুটপাতের দোকানে পিঠা-চা খেলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত
অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন যশোর শহর ঘুরে দেখেছেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে জেলার দড়াটানা, শহরের ধর্মতলা এলাকাসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে জনতার সঙ্গে তিনি দিয়েছেন আড্ডা। এ সময় ফুটপাতের দোকানে পিঠাপুলি ও চা খেয়েছেন উপদেষ্টা।
প্রটোকল ছাড়াই উপদেষ্টার সাধারণ বেশে শহর ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়ার বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সবাই। সড়কের পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে খাবার খাওয়া ও আড্ডা দেওয়ার এমন ছবিও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন।
জানা গেছে, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সকালে যশোরে যান অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর তিনি বেনাপোল বন্দর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এদিন বিকালে সাখাওয়াত হোসেন যশোর সার্কিট হাউজে উঠেন। বিশ্রাম শেষে তিনি রাতে যশোর শহর ঘুরার উদ্দেশ্য বের হন।
শ্রম উপদেষ্টা যশোরের ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবন ও পার্ক ঘুরে দেখেন। তারপর যান কালেক্টরেট ভবনের সামনের সড়কে অবস্থিত কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরিচালিত পিঠার দোকানে। সেখানে ভ্যানে সাজানো দেশীয় সব পিঠার স্বাদ নেওয়ার সময় স্মৃতিমন্থর করেন শৈশবকালের পিঠায় দাদি-নানিদের স্পর্শের কথা। এসময় তিনি আড্ডাকালে স্মৃতিচারণ করেন এই শহরের নানা স্থাপনা, ব্যক্তি ও সড়কগুলোকে নিয়ে।
এ সময় সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই শহর অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি আমার। অনেক সড়ক এবং স্থাপনা আছে যা এখনও স্মৃতিচারণ করি। সময়ের সঙ্গে এই শহর পরিবর্তন ঘটেছে। তবে সুপরিকল্পিতভাবে শহরটাকে সুন্দর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতাকে এই শহরে তার স্মৃতির নানা ঘটনা বলে শোনান। পরে তার সঙ্গে সেলফি তুলতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়।
এরপর উপদেষ্টা যশোর শহরের অন্য প্রান্তে ধর্মতলাতে যান। সেখানে তিনি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় গরুর দুধের চা পান করেন এবং জনসাধারণের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
স্থানীয় সাংবাদিক মনিরুল ইসলামও উপদেষ্টার সঙ্গে শহরের এক মোড়ে আড্ডা জমিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন ব্যক্তি হয়েও যশোরে ফুটপাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আড্ডায় বসে পিঠাপুলির স্বাদ নেওয়াটা সত্যিই বিরল ঘটনা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলা। যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, খোলামেলা আলাপের সময়ে আমি তাকে বলেছি, উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত তরুণদের মধ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে চরম হতাশা রয়েছে। এই হতাশা দূর করতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছি। তিনি গুরুত্বের সঙ্গে এসব কথা শুনেছেন। এটা খুব ভালো লেগেছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, দেশকে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের আমরা সবসময়ই গণ মানুষের কাতারে আশা করি। গণ মানুষের কাতারে না এলে গণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া কিংবা চাওয়া পাওয়ার অমিলকেও উপলব্ধি করা যায় না। আজ একজন উপদেষ্টা যেভাবে রাস্তার পাশে বসে পিঠা খেলেন, জনতার সঙ্গে সাবলিলভাবে মিশলেন এটি অনুকরণীয়। নেতৃত্ব কোনো ক্ষমতা নয় বরং একটি দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব জনতার কাতারে নেমেই পালন করতে হয়, আজ এই সত্য আরও একবার উপলব্ধি করলাম। উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রসঙ্গত, শনিবার উপদেষ্টা সাখাওয়াত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শন শেষে এদিনও যশোরে অবস্থান করে পরদিন ঢাকা ফিরবেন তিনি।
No comments