Adsterra

আরব বসন্ত কি আর কিভাবেই বা তার সূচনা

আরব বসন্ত কি আর কিভাবেই বা তার সূচনা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

মধ্যপ্রাচ্যে স্বৈরশাসকদের পতনের মতো বিপ্লব থেকে শুরু করে বিদ্রোহ দমন, এধরণের কয়েকটি মূল বিষয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে যেগুলো আরব বসন্তের মূল প্রেক্ষাপট বা আরব বসন্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

১০ বছর পেরিয়ে যাওয়া আরব বসন্তের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিশেষ ঘটনাগুলোকে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সংক্ষিপ্ত আকারে আল জাজিরার বিশ্লেষণ পাতায় তুলে ধরা হয়।

পাঠকদের সুবিধার্থে শিরোনাম আকারে তার অনুবাদ তুলে ধরা হল।


তিউনিসীয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ :

২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার একজন তিউনিসীয় যুবক যিনি ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করতেন, পুলিশী হয়রানীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

অপরদিকে ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার মুহাম্মাদ বুওয়াজীজী নামী আরেক তিউনিসীয় মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যুর মূল কারণ চারদিকে ছড়িয়ে পরতে না পরতেই দেশটির স্বৈরাচারী শাসক বেন আলীর বিরুদ্ধে জ্বলে উঠে বিপ্লবী স্ফুলিঙ্গ এবং জীবনযাত্রায় উচ্চমাত্রার ব্যয়ের উর্ধ্বগতির ব্যাপারে প্রতিবাদ।

বিপ্লব শুরুর ১১ দিনের মাথায় সৌদি আরব পালিয়ে গেলে বেন আলীর ২৩ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। আর বিশ্বজুড়ে আরব বসন্ত নামে প্রসিদ্ধি পাওয়া বিপ্লবের ফলে উৎখাত হওয়া আরব নেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম উৎখাত হোন তিউনিসীয় এই আরব নেতা বেন আলী।

পরবর্তীতে তিউনিসিয়ার প্রতিবাদ ও সফল বিপ্লব পুরো আরব বিশ্বে বিপ্লবের সূচনা ঘটাতে আরবদের অনুপ্রাণিত করে এবং কর্তৃত্ববাদ, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে পুরো আরবজুড়ে লোকজন প্রতিবাদমূখর বিপ্লব শুরু করে।


হুসনী মোবারকের পতন :

২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার, হাজার হাজার মিশরীয়রা স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট হুসনী মুবারাক যিনি ৩০ বছর যাবত মিশর শাসন করে আসছিলেন, তার পদত্যাগের দাবিতে কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া সহ মিশরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিক্ষোভ ও দীর্ঘ পদযাত্রা বা লংমার্চ শুরু করেছিলো।

পরবর্তীতে, শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ১০ লক্ষাধিক মিশরীয় নাগরিক সেখানকার রাস্তায় লাগাতার অবস্থান করে গেলে হুসনি মুবারাক মিশরের মিলিটারীকে প্রশাসনিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

২০১২ সালে হুসনি মুবারাক পরবর্তী মিশরে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুড ভাবাদর্শী মুহাম্মাদ মুরসির নেতৃত্বাধীন দলকে ক্ষমতায় আনে মিশরের জনগণ কিন্তু সেই বছরই আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বাধীন মিশরীয় সেনাবাহিনী, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত মুরসি ও তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।


বাহরাইনের তাহরির :

২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার,পার্ল স্কয়ারে যাকে বাহরাইনের বিক্ষোভকারীরা তাহরির স্কয়ার নাম দিয়েছে সেখানে তারা অবস্থান গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন সংস্কারের পাশাপাশি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দাবি জানাতে থাকে।

কিন্তু বাহরাইনীদের বিপ্লবকে সফল হতে দেয়নি সেখানকার দাঙ্গা পুলিশ!

সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দাবি জানানোর ৩ দিন পর তাদের উপর হামলা করে বসে সেখানকার দাঙ্গা পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করে ৩ জনকে হত্যার পাশাপাশি অসংখ্য মিশরীয়কে গুরুতর জখম করে দেয় তারা।


বিক্ষুব্ধ লিবিয়া :

বাহরাইনে বিক্ষোভ শুরুর একই দিনে আরেক আরব রাষ্ট্র লিবিয়াতেও শুরু হয় বিক্ষোভ এবং লিবিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বেনগাজীতে লিবিয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে দমাতে বলপ্রয়োগও করে বসে লিবিয় পুলিশ।

অপরদিকে লিবিয়ার তৎকালীন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফী, তার বিরোধিতাকারীদের ইঁদুর আখ্যায়িত করে সব ইঁদুরকে ধরাশায়ী করার প্রতিজ্ঞা করে বসেন।

লিবিয়ার বিপ্লবটি শেষমেশ গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল। এমনকি এক পর্যায়ে গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফরাসিরা হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করে বসে!

আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই ৩ পরাশক্তির হস্তক্ষেপ এবং দেশীয় বিদ্রোহীদের বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ মোকাবিলা করে গাদ্দাফী বীরদর্পে বহুদিন টিকে ছিলেন কিন্তু তার শেষ রক্ষা হলো না। ক্ষমতাবলে টিকে থাকা গাদ্দাফী ক্রমান্বয়ে ক্ষমতা হারিয়ে জীবন বাঁচাতে শেষমেশ আশ্রয় নেন প্রচুর ঝড়ের পানি নিষ্কাশনের বিশালাকার ড্রেনে এবং ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিপ্লবীরা তাকে সেখানে খুঁজে পেয়ে আটক করে এবং হত্যা করে।


দেশটি এখন পূর্ব এবং পশ্চিমা ধারার প্রশাসনের দ্বন্দ্বের মাঝে বিভক্ত।


এবার সিরিয়ার পালা :

একই বছর ৬ মার্চ বেশ কয়েকজন সিরিয়ান কিশোর তাদের স্কুলের দেয়ালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ যিনি একজন তুখোড় চক্ষু বিশেষজ্ঞও বটে তাকে লক্ষ্য করে লিখেছিলো, এবার তোমার পালা ডাক্তার মশায়!

বিপ্লবী যুবকদের বিপ্লব প্রথমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে তারা গণতান্ত্রিক সংস্কারের ডাক দিলে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

কিন্তু সরকারের অমানবিক নির্যাতনের ফলে সিরিয় বিদ্রোহটি গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়।

শুধু তাই নয়, আইএসআইএল বা আইএসআইএস (ISIS) এর উত্থান এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইরাকের পুরোনো সংকটের নব উদ্ভবের পিছনেও সিরিয়ার এই গৃহযুদ্ধের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে দাবী করা হয়।


তিউনিসিয়ার প্রথম নির্বাচন :

২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর রবিবার, তিউনিসীয়রা তাদের সর্বপ্রথম অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করে এবং নির্বাচনটিতে তাহরিকুন নাহদ্বাহ বা আল- নাহদ্বাহ মুভমেন্টের নেতৃবৃন্দরা বিজয় লাভ করে।


ইয়েমেন শাসক সালেহের বিদায় :

২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার, আলী আব্দুল্লাহ সালেহ যিনি ৩৩ বছর ধরে ইয়েমেন শাসন করে আসছিলেন, ইয়েমেনে বিপ্লবের পর তিনি তার তার সহকারী আব্দু রাব্বিহি মানসুর হাদীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে সরে যান।

আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র ইয়েমেনও প্রথমেই ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ ছিল। বিক্ষোভ দমনে অন্যান্য আরব দেশের মতো তারাও তাদের সহিংস রূপে অবতীর্ণ হয়েছিল।

তাছাড়া, ২০১২ তে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ২০১১ এর ১১ জুন শনিবার ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহের উপর প্রাণঘাতী হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।


বাশার আল আসাদের ত্রাণকর্তা মস্কো :

কোণঠাসা হয়ে ধুকতে থাকা আসাদকে তার কঠিন মুহুর্তে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে তার সবচেয়ে বড় মিত্র রাশিয়া।

ইরান সহ বাশার আল আসাদের সবচেয়ে বড় মিত্র রাশিয়া, ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিরিয় বিদ্রোহীদের উপর আকাশ পথে বিমান হামলা চালাতে শুরু করলে সিরিয় যুদ্ধের গতিপথ সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়।

রাশিয়ার সরাসরি সাহায্য সত্ত্বেও সিরিয়ায় বিপ্লবীদের সাথে রাশিয়ার মদদপুষ্ট আসাদের বাহিনীর সাথে সংঘাত ও প্রতিরোধ এতো তীব্র ছিল যে, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে আসাদকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে!

যুদ্ধে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার লোকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ১০ বছর পর বাশার আল আসাদ এটাকে তার বিজয় বলে দাবী করতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় এটাকে তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন!

No comments

Powered by Blogger.