Adsterra

বিডিআর বিদ্রোহের ১৬ বছর: বিচার এখন যে পর্যায়ে

বিডিআর বিদ্রোহের ১৬ বছর বিচার এখন যে পর্যায়ে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এর আগে গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে আদালতে দুটি মামলা চলমান। তাই কমিশন গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কমিশন গঠন হচ্ছে না। তার দুই দিন পর তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা এল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছ থেকে।


জানা যায়, এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।


তবে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া গতকাল বলেন, ‘এই মামলা দুটিরই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে রাজধানীতে আলিয়া মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে অবস্থিত অস্থায়ী আদালতে। তবে এই আদালত সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নেওয়ার কথা সরকার ভাবছে বলে জেনেছি। আগামী ৯ জানুয়ারি এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য আছে। এই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম কোথায় পরিচালিত হবে আশা করি এর আগেই জানতে পারব।’ 


নবনিযুক্ত এই স্পেশাল পিপি বলেন, ‘আমরাও তো মাত্রই দায়িত্বে এসেছি। এই মামলাটিও অনেক বড় মামলা। আগামী ধার্য তারিখের আগে আমরা পিপি অফিসে বসে পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণ করব।’


এদিকে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় থাকা হত্যা মামলার শুনানি কবে শুরু হবে, এই নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে আপিল বিভাগে এত বিশালসংখ্যক আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) মামলার আপিল শুনানি করা কঠিন। কারণ আপিল বিভাগে বর্তমানে বিচারপতি রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। এ মামলার শুনানি করতে হলে বেঞ্চে তিনজনের বেশি বিচারপতি থাকতে হবে। কারণ হাইকোর্টে এই মামলার রায় দিয়েছিলেন তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। অর্থাৎ আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতিকে নিয়ে এই মামলার শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করা হলে অন্য সব মামলার শুনানি অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে এত বেশিসংখ্যক আসামির মামলাটি শুনানি শুরু করলে বিচারপতিরা অন্য মামলা শুনতে পারবেন কি না, সে ভাবনা সামনে চলে আসে। সব মিলে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে।


এদিকে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের বিচারের জন্য একদিকে যেমন অপেক্ষার প্রহর গুনছে ভুক্তভোগীদের পরিবার, অন্যদিকে হত্যা মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বা সাজা খাটা শেষ হলেও অনেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। কারণ তারা বিস্ফোরক মামলারও আসামি। 


প্রসঙ্গত, ওই ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় ওই ঘটনায়।


প্রায় ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের সদর দপ্তর রাজধানীর পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। প্রায় দুই দিন ধরে চলা ওই বিদ্রোহের ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। ওই রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।


বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ ওই রায় প্রকাশিত হয়। এতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়, আর যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। তা ছাড়া খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।


আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। আর হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের সাজা কমেছে- তেমন ৮৩ জনের বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই শুনানি হবে আপিল বিভাগে।


এদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের সাক্ষ্যও সম্পন্ন হয়নি। এই মামলার আসামি ৮৩৪ জন। 


হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার বিচার আদালতে হলেও ওই বিদ্রোহের ঘটনায় বিচার হয়েছে বাহিনীটির নিজস্ব আইনে, যা সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) নামে পরিচিত। তাতে ১০ হাজার ৯৭৩ জনকে বিভিন্ন ধরনের সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আর অন্যরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগ দেন। এ ছাড়া সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিদ্রোহের বিচার করা হয়। বিশেষ আদালত ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন জওয়ানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। বিশেষ আদালতে বিচার চলার সময় মারা গেছেন ৫ জন।

No comments

Powered by Blogger.