Adsterra

দেশে চিকিৎসা খাতে ব্যবস্থাপনার অভাবে বিদেশে যাচ্ছেন রোগীরা

দেশে চিকিৎসা খাতে ব্যবস্থাপনার অভাবে বিদেশে যাচ্ছেন রোগীরা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangl

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থার সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে বিদেশে সেবা নিতে যাচ্ছেন রোগীরা। এতে দেশে অর্থনৈতিক খাতে প্রভাব পড়ছে। ‘চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশীজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ শনিবার রাজধানীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র বা সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন এই বৈঠকের আয়োজন করে।


বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেডিকেল টুরিজম কেবল অন্য একটি দেশে সেবা নেওয়া নয়। এর কারণে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা ও দুর্বলতার চিত্র ফুটে ওঠে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে।


অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর, বি) বিজ্ঞানী (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য) আহমেদ এহসানুর রহমান। বক্তব্যে তিনি বিদেশে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার কারণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেন।


বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, গবেষকসহ স্বাস্থ্য খাতের অংশীজনেরা অংশ নেন। নিজ নিজ বক্তব্যে তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দরকার প্রতিযোগিতামূলক বিপণন প্রচারণা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূমিকা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার মানচিত্রে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব এই উদ্যোগে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রচারণা, প্রাথমিক চিকিৎসা অবকাঠামো এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অনেক রোগের স্থানীয় সমাধান করতে পারে। এতে ব্যয়বহুল এবং রোগের শেষ পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন কমে আসবে।


স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, রোগ নির্ণয়ের দুর্বলতার কারণে নাগরিকদের বড় একটি অংশ বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। নগরাঞ্চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা অনুপস্থিত। ভবিষ্যতে জনসংখ্যা অর্ধেকই থাকবে শহরে। ফলে আমাদেরকে ওই দিকে নজর দিতে হবে। চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের যত্নশীলতা যেন বাড়ে তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীর সংখ্যা কম রয়েছে।


স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, একজন চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী কেন বিদেশ যাচ্ছেন, এই বিষয় আমাদের বোঝা প্রয়োজন। অসুস্থ একজন মানুষ বিপদে না পড়লে বিদেশে যান না। চিকিৎসার সেবায় অসন্তুষ্টি এবং অনাস্থা রয়েছে। আমাদের দেশে দক্ষ চিকিৎসক, সুবিধা থাকার পরও আমরা বিনা কারণে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বিদেশমুখিতা ঠেকাতে পারছি না। সুবিধার সংকট রয়েছে, বিনিয়োগের সংকটও রয়েছে। অন্যদিকে ওষুধে মূল্য বেশি। স্বাস্থ্যসেবা খরচ বেশি। এসব কমিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করব।


নাজমুল হোসেন আরও বলেন, বিশেষায়িত চিকিৎসার বেশির ভাগই রাজধানীকেন্দ্রিক। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার বাইরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদ্‌রোগের অস্ত্রোপচার শুরুর জন্য কাজ চলছে। খুলনা, বগুড়া, সিলেট এবং চট্টগ্রামে জরুরি মুহূর্তে ভাসকুলার সার্জারি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই এসব চালু করা যাবে।


বৈঠকে বক্তারা বলেন, চিকিৎসার বিদেশমুখিতার জন্য বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারায়। অর্থপ্রবাহ কেবল একটি আর্থিক বিষয় নয় এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের সমস্যা। এ লক্ষ্যে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।


বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সহসভাপতি অধ্যাপক মো. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.