Adsterra

আরব বসন্ত থেকে বিদ্রোহ, ফের গৃহযুদ্ধের সূচনা হবে ?

আরব বসন্ত থেকে বিদ্রোহ ফের গৃহযুদ্ধের সূচনা হবে, সিরিয়া, ঢাকা ভয়েস, আল কায়েদা, জোলানি, বাশার আল আসাদ Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top

স্নাতক পাস করে তিউনিসীয় যুবক বুআজিজি (২৬) কোনো চাকরি না পেয়ে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করতেন। কিন্তু এতে সরকার বাধা দেয়। তার সবজি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়েছিলেন তিনি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ওই যুবকের সেই পদক্ষেপ থেকে জন্ম নিয়েছিল আরব বসন্ত আন্দোলনের। সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। পতন ঘটেছিল বহু স্বৈরশাসকের। মানুষ পরিবর্তনের দাবিতে নেমে এসেছিল রাস্তায়। ২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাওয়া গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।


গণবিক্ষোভের শুরু তিউনিসিয়ায়। এরপর তা মিসর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। প্রথমে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন হয়। পরে লিবিয়ায় মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফি জমানার অবসান হয়। আরব বিশ্বের এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটনে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত সহচর রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটায়।

ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য

সিরিয়ানরা বলেছেন, আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল তা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। রাজধানী দামেস্কের পতনের পর মানুষ রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অনেকে বাশার আল-আসাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলছেন, তার বাবা হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে ফেলেছেন। মানুষ যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দামেস্কের বাসিন্দারা গত কয়েক ঘণ্টায় দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় একজন বিবিসিকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো, প্রকৃত স্বাধীনতার অনুভূতি এসেছে আমাদের জীবনে। এটি এমন এক অনুভূতি যা আমরা আগে কখনো পাইনি এবং এটি আমাদের অবাক করেছে।’


দামেস্কের ওই বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তাগুলোতে চলছে মানুষের উদযাপন, তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেন্দ্রীয় উমাইয়া স্কয়ারে মানুষ খুবই শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করছে। তারা আতশবাজি ফুটাচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা কিছু বন্দুকের গুলির শব্দও শুনছি, কিন্তু বেশির ভাগই আতশবাজি।’ ১৩ বছর আগে সিরিয়ায় যে স্বপ্ন নিয়ে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল সেই ঘটনার স্মৃতিচারণে ফিরে যান দামেস্কের ওই বাসিন্দা।


কিন্তু আরব বসন্ত সিরিয়ায় আবার ফের গৃহযুদ্ধে ফিরে যাবে কি না তা নিয়ে এখনই মানুষের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে। সিরিয়া এখনো একটি বিভক্ত দেশ, বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের গভীর ক্ষত এখনো দগদগে। গত চার বছর ধরে যে অচলাবস্থা এবং স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছিল, তা মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিদ্রোহীরা হঠাৎ করেই কঠোর আঘাত করেছে, ফলে আসাদ বাহিনী প্রতিঘাত বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।


যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি কার্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় যে গণ-বিদ্রোহ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন হচ্ছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ পর্যন্ত আলজেরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, মিসর, ইরান, জর্ডান, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় বড় ধরনের বিদ্রোহ হয়েছে এবং ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়াতে ছোট আকারের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিদ্রোহে প্রতিবাদের ভাষারূপে গণবিদ্রোহের অংশ হিসেবে হরতাল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, জনসভা, র‌্যালি প্রভৃতি কর্মসূচি নেওয়া হয়। দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাজ, যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার থেকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত স্বৈরাচারবিরোধী তথাকথিত গণ-অভ্যুত্থানের জোয়ার সিরিয়াতেও এসে লাগে ২০১১ সালে। ওই বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরে এই জোয়ারের সুফল না মিললেও এই সময়ে হতাহত হয়েছে বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠী। সরকার-বিরোধী গোষ্ঠীকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে নির্যাতন, অপহরণ, অবৈধভাবে মানুষকে আটক করা, বেসামরিক লোক ও সৈন্য হত্যা। জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশনের বিভিন্ন রিপোর্টে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। বেসামরিক মানুষকে ঘরছাড়া করার পেছনে বিদ্রোহীদেরও হাত রয়েছে। 


সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামসহ সিরিয়ায় শতাধিক বিদ্রোহী দল তৈরি হয়েছে। এ কারণেই সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করা কঠিন। ২০১৮ সাল থেকে দেশটি কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। সিরিয়া এখন এক বৈশ্বিক দাবা বোর্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিত্রদের সাহায্য করার ভান ধরে আসছে। সিরিয়ায় এখন এমন একটি মানবিক সংকট তৈরি করেছে যেখান থেকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই। ওয়ার্ল্ডভিশন সিরিয়ার রেসপন্স পরিচালক ইমানুয়েল ইশ বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল এবং অনিশ্চিত।’ সে কারণে বলা যায়, সেখানে আরব বসন্ত ফের গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.