Adsterra

হজরত দাউদ (আ) এর জীবনী

হজরত দাউদ (আ) এর জীবনী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (সা) বনি ইসরাইল সম্প্রদায় থেকে নবী হিসেবে দুনিয়ায় আগমণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইশা। হজরত দাউদ (আ) খুব সাহসী ও নির্ভিক ছিলেন। তিনি বীরত্বের জন্য সবার শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। আল্লাহ তাঁকে নবীর মর্যাদার পাশাপাশি রাজার সম্মানও দান করেন। তিনি ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্দান ও হিজাজ শাসন করেন। দাউদ (আ) ‘জবুর’ কিতাব লাভ করেছিলেন।


আল্লাহ তাঁকে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দান করেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত সুমিষ্ঠ। তিনি মধুর সুরে জবুর কিতাব তেলাওয়াত করলে পশু-পাখি, এমনকি পাহাড়-পর্বতও আল্লাহর প্রশংসায় মেতে উঠতো। আল্লাহর সাহায্যে তিনি গুলতি দিয়ে তখনকার অত্যাচারী শাসক জালুতকে হত্যা করেন এবং বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করেন। তাঁর জীবনের আরো অনেক চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয় ঘটনা।


মহান আল্লাহ হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের প্রতি যে অসংখ্য অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলেন সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন বাইতুল লাহমের ইয়াহুদা গোত্রের একজন সাধারণ যুবক। ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের জালুতের মতো এক বিশাল দেহী ভয়ংকর শত্রুকে হত্যা করে তিনি রাতারাতি বনী ইরাঈলের নয়নমণিতে পরিণত হন। এ ঘটনা থেকেই তার উত্থান শুরু হয়।


এমনকি তালুতের ইন্তিকালের পরে প্রথমে তাকে ‘হাবরূনে’ (বর্তমান আল খালীল) ইয়াহুদিয়ার শাসনকর্তা করা হয়। এর কয়েক বছর পর সকল বনী ইসরাঈল গোত্র সর্বসম্মতভাবে তাকে নিজেদের বাদশাহ নির্বাচিত করে এবং তিনি জেরুসালেম জয় করে ইসরাঈলী রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। তারই নেতৃত্বে ইতিহাসে প্রথমবার এমন একটি আল্লাহর অনুগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় যার সীমানা আকাবা উপসাগর থেকে ফোরাত নদীর পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এসব অনুগ্রহের সাথে সাথে আল্লাহ তাকে আরো দান করেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা, আল্লাহভীতি, আল্লাহর বন্দেগীও তার প্রতি আনুগত্যশীলতা।


দাউদ আলাইহিস সালামের জন্য নয় বরং “তার সাথে” পাহাড় ও পাখীদেরকে অনুগত করা হয়েছিল এবং সে কারণে তারাও হযরত দাউদের (আ) সাথে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতো। একথাটিই সূরা সাদ-এ বলা হয়েছেঃ “আমি তার সাথে পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম। সকাল-সাঁজে তারা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। আর পাখিদেরকেও অনুগত করা হয়েছিল। তারা একত্র হতো, সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করতো”।


সূরা সাবায় এর ওপর অতিরিক্ত বলা হয়েছে: ()”পাহাড়গুলোকে আমি হুকুম দিয়েছিলাম যে, তার সাথে সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করো এবং এই একই হুকুম পাখিদেরকেও দিয়েছিলাম। এ বক্তব্যগুলো থেকে যেকথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, হযরত দাউদ যখন আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা গীতি গাইতেন তখন তাঁর উচ্চতর ও সুরেলা আওয়াজ পাহাড় গুঞ্জরিত হতো, পাখিরা থেমে যেতো এবং একটা অপূর্ব মূর্ছনার সৃষ্টি হতো।


এ অর্থের সমর্থন একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একবার হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রা) কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল অসাধারণ সুরেলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার আওয়াজ শুনে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অনেকক্ষণ শুনতে থাকলেন। তার পড়া শেষ হলে তিনি বললেনঃ () অর্থাৎ এ ব্যক্তি দাউদের সুরেলা কণ্ঠের একটা অংশ পেয়েছে।


সূরা সবায় এর ওপর আরো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে: “আর আমি তার জন্য লোহা নরম করে দিয়েছি (এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছি) যে পূর্ণমাপের বর্ম তৈরী করো এবং বুনন করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিমাণ রক্ষা করো”। এ থেকে জানা যায়, আল্লাহ হযরত দাউদকে লোহা ব্যবহার করার ক্ষমতা দান করেছিলেন। বিশেষ করে, যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বর্ম নির্মাণের কায়দা কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান যুগের ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্বিক গবেষণা ও অনুসন্ধান থেকে এ আয়াতের অর্থের ওপর যে আলোকপাত হয় তা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীতে লৌহ যুগ() শুরু হয় খৃস্টপূর্ব ১২০০ ও ১০০০অব্দের মাঝামাঝি সময়ে।


আর এটিই ছিল হযরত দাউদ আলাহিস সালামের যুগ। প্রথম দিকে সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের হিত্তী (Hittites) জাতি লোহা ব্যবহার করে। ২০০০ থেকে ১২০০খৃস্ট পূবাব্দ পর্যন্ত এ জাতির উত্থান দেখা যায়। তারা লোহা গলাবার ও নির্মাণের একটা জটিল পদ্ধতি জানতো। সারা দুনিয়ার দৃষ্টি থেকে তারা একে কঠোরভাবে গোপন রাখে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে যে লোহা তৈরী করা হতো তা সোনা রূপার মতো এত বেশী মূল্যবান হতো যে, তা সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতো না। পরে ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলকে যেভাবে গোপন রাখে।


তালূতের রাজত্বের পূর্বে হিত্তী ও ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলকে যেভাবে উপর্যুপরি পরাজিত করে ফিলিস্তীন থেকে প্রায় বেদখল করে দিয়েছিল বাইবেলের বর্ণনা মতে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল এই যে, তারা লোহার রথ ব্যবহার করতো এবং তাদের কাছে লোহার তৈরী অন্যান্য অস্ত্রও থাকতো। (যিহোশূয়১৭:১৬ বিচারকর্তৃগণ ১:১৯, ৪:২-৩)খৃস্ট পূর্ব ১০২০ অব্দে তালুত যখন আল্লাহর হুকুমে বনী ইসরাঈলদের শাসক পদে অধিষ্ঠিত হন তখন তিনি তাদেরকে পরপর কয়েকবার পরাজিত করে ফিলিস্তীনের বেশীর ভাগ অংশ তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন। তারপর হযরত দাউদ(১০০৪-৯৬৫খৃঃ পূঃ) শুধুমাত্র ফিলিস্তিনীন ও ট্রান্স জর্দানই নয় বরং সিরিয়াও বড় অংশে ইসরাঈলী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময়ে লৌহ নির্মাণ শিল্পের যে গোপন কলাকৌশল হিত্তী ও ফিলিস্তীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা উন্মোচিত হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র উন্মোচিত হয়েই থেমে যায়নি বরং লৌহ নির্মাণের এমন পদ্ধতিও উদ্ভাবিত হয় যার ফলে সাধারণ ব্যবহারের জন্য লোহার কম দামের জিনিসপত্রও তৈরী হতে থাকে। ফিলিস্তীনের দক্ষিণে আদূম এলাকা আকরিক লোহায়(Iron Ore) সমৃদ্ধ ছিল।


সম্প্রতি এ এলাকায় যে প্রত্মতাত্বিক খননকার্য চালানো হয় তার ফলে এমন অনেক জায়গার প্রত্মতাত্বিক নিদর্শনসমূহ পাওয়া গেছে যেখানে লোহা গলাবার চুল্লী বসানো ছিল। আকাবা ও আইলার সাথে সংযুক্ত হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের জামানার বন্দর ইসয়ুন জাবেরের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে যে চুল্লী পাওয়া গেছে তা পর্যবেক্ষণের পরে অনুমান করা হয়েছে যে, তার মধ্যে এমনসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো যা আজকের অত্যাধুনিক যুগের এ প্রয়োগ করা হয়।


এখন স্বাভাবিকভাবেই হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম সবার আগে ও সবচেয়ে বেশী করে এ নতুন আবিস্কারকে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকবেন। কারণ কিছুকাল আগেই আশপাশের শত্রু জাতিরা এ লোহার অস্ত্র ব্যবহার করে তাঁর জাতির জীবন ধারণ কঠিন করে দিয়েছিল।

দাঊদ (আঃ)-এর জীবনীতে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:


১. নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান ও আমানতদার হওয়া। আরও প্রয়োজন প্রজ্ঞা, ন্যায়নিষ্ঠা ও উন্নতমানের বাগ্মিতা। যার সব কয়টি গুণ হযরত দাঊদ (আঃ)-এর মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে ছিল।


২. এলাহী বিধান দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিকেই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। বরং দ্বীনদার শাসকের হাতেই দুনিয়া শান্তিময় ও নিরাপদ থাকে। হযরত দাঊদ-এর শাসনকাল তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।


৩. দ্বীনদার শাসককে আল্লাহ বারবার পরীক্ষা করেন। যাতে তার দ্বীনদারী অক্ষুণ্ণ থাকে। দাঊদ (আঃ) সে পরীক্ষা দিয়েছেন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন। বস্ত্ততঃ তিনি ছিলেন আল্লাহর দিকে সদা প্রত্যাবর্তনশীল।


৪. যে শাসক যত বেশী আল্লাহর শুকরগুযারী করেন, আল্লাহ তার প্রতি তত বেশী সদয় হন এবং ঐ রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নাযিল করেন। বস্ত্ততঃ দাঊদ (আঃ) সর্বাধিক ইবাদতগুযার ছিলেন এবং একদিন অন্তর একদিন ছিয়াম পালন করতেন।


৫. যে শাসক আল্লাহর প্রতি অনুগত হন, আল্লাহ দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে তার প্রতি অনুগত করে দেন। যেমন দাঊদ (আঃ)-এর জন্য পাহাড়-পর্বত, পক্ষীকুল এবং লোহাকে অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.