Adsterra

ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ায় সাধারণ জনগণ তাদের জমিদার বাড়ির নাম দিয়েছিলো দালাল বাজার জমিদার বাড়ি

দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ায় সাধারণ জনগণ তাদের জমিদার বাড়ির নাম দিয়েছিলো দালাল বাজার জমিদার বাড়ি। লক্ষ্মীপুর সদর,লক্ষ্মীপুর।


ব্রিটিশ শাসনামলে তাদের বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ার কারনে স্থানীয় লোকজন তাদের দালাল হিসেবে ডাকতেন পরবর্তীতে লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব এর বাড়িটি দালাল বাজার জমিদার বাড়ি হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।
আমাদের ফিরে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে,কলকাতা থেকে তৎকালীন নোয়াখালী পরগণার লক্ষীপুর মৌজায় কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব।লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণবের ছেলে ব্রজবল্লভ স্বীয় দক্ষতায় তার বাবার ব্যবসার প্রসার ঘটান।এরপর শুরু হলো নতুন এক ইতিহাসের ,ব্রজবল্লভের ছেলে গৌরকিশোর কলিকাতায় পড়ালেখা করতো সেই সুবাদে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহচর্যে আসেন।উচ্চশিক্ষিত গৌরকিশোর সাথে পারিবারিক ব্যবসা তখন তুঙ্গে।গৌরিকিশোরের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে কোম্পানির লোকদের,এই সম্পর্কের বদৌলতে তিনি জমিদারি খরিদ করলেন।
পাচঁ একর জমির উপর গড়ে তুললেন বিশাল অট্রালিকা।রাজ গেইট, জমিদার প্রাসাদ,অন্দর মহল, অন্দর পুকুর,শান বাধাঁনো ঘাট কি ছিলো না সেখানে।
শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন।
গৌরকিশোর ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা উপাধী লাভ করে গৌরকিশোর।গৌরকিশোর রায় বিয়ে করেন রাণী লক্ষ্মী প্রিয়াকে কিন্তু তারা ছিলো নিঃসন্তান।বিশাল জমিদারি তাদের কিন্তু কে দেখবে এই জমিদারি সেজন্য তারা ঢাকার বিক্রমপুর থেকে গোবিন্দকিশোরকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন। গৌরকিশোরের পর এই জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পরে গোবিন্দকিশোরের উপর ,গোবিন্দকিশোরের ছেলের নাম ছিলো নলীনি কিশোর রায় যিনি পরবর্তীতে এই জমিদার বাড়ির দেখভাল করেন।জমিদারি খাজনা আদায়, দেখভাল এবং জমিদারি প্রসারে তিনি নাকি অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন।
লোহার বিশাল ভীমের ব্যবহার হয়েছিলো এই জমিদার বাড়িতে,এই জমিদার বাড়ির নৃত্যশালা এখনও রঙ ছড়াচ্ছে তার আপন মনে শুধু এখানকার জমিদারিটা নেই।পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়িটি এখন শূন্যতায় হাহাকার করছে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্যের আক্ষেপে হয়তো একদিন রাজ প্রাসাদসম জমিদার বাড়িটি মাটিতে মিশে যাবে।অন্দরমহলে আর রঙ্গতামাশা হয় না,কড়া নিরাপত্তায় থাকতো যেই অন্দরমহর আজ তা উন্মুক্ত ধ্বংসযজ্ঞে রুপ নিয়েছে।যেই শান বাধাঁনো ঘাট রাণী, জমিদার কন্যাদের ছোয়া পেয়েছে আজ তা চরম অবহেলায় তার ক্ষয় গুনছে।নাট মন্দিরে এখনো আর নৃত্যগীত হয় না,পূজাঁ মন্ডপ পরে আছে চরম অবহেলায় সবকিছু মিলিয়ে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি তার চূড়ান্ত ধ্বংসের সময় গুনছে।
আরেকটা তথ্য দিয়ে রাখি তা হল লক্ষ্মীপুরের নামকরনের সাথে এই দালাল বাজার জমিদার বাড়ির লক্ষ্মীনারায়ন/ লক্ষ্মীপ্রিয়ার এর নাম জড়িয়ে আছে যদিও ইতিহাসবিদগনের কাছে এর ভিত্তি কম।এই ব্যাপারে যেই তথ্য পাওয়া গেছে তা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম -
শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন। তার বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ণ রায় (বৈষ্ণব) এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।
আগেই বলে রেখেছি এই ব্যাপারে সমর্থন কম।
দালাল বাজার জমিদার বাড়ির ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি,জমিদার যেখানে বসতেন সেই জমিদারি আসন এবং নৃত্য আসনটি চুরি হয়ে গিয়েছি।দেশভাগের সময় প্রবল জনআক্রোশের মুখে পরে এই জমিদার বাড়ির লোকজন।এমনেই ব্রিটিশদের তাবেদারি করার কারনে তারা দালাল হিসেবে পরিচিত লাভ করে।পূর্ববর্তী সকল জমিদার বাড়ির ইতিহাসের মত এই জমিদার বাড়ির ইতিহাসও একই, দেশভাগের সময় এই দেশ ত্যাগ করে ভারতে গমন।
এই জমিদার বাড়ির লোকজন এই এলাকায় কিছু কৃতি রেখে গেছেন তাদের স্মৃতি হিসেবে। প্রায় ২২ একর জমির উপর খনক করেছিলেন ঐতিহাসিক খোয়া সাগর দিঘী যার একপাশে রয়েছে এই জমিদার বাড়ির মঠ স্থানীয় ভাবে যা মঠবাড়ি হিসেবে পরিচিত। দালাল বাজার এন কে উচ্চ বিদ্যালয়,দাতব্য চিকিৎসালয়,ঠাকুর মন্দির এই জমিদার বাড়ির অবদান।
জমিদার বাড়িতে যাতায়াত-
লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে দালাল বাজার যেতে সিএনজি কিংবা বাসে জন প্রতি ভাড়া মাত্র ২০ টাকা। বাজার থেকে প্রায় ১৫০ গজ পূর্বে ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কের উত্তর পাশে ‘খোয়া সাগর দীঘি’। এ দীঘিতে জমির পরিমাণ প্রায় ২২ একর। দীঘি বরাবার মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে জমিদার বাড়ির মঠ, স্থানীয়দের কাছে যা মঠবাড়ি বলে পরিচিত। সেখান থেকে দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের পেছন দিয়ে ‘জমিদার বাড়ি’ যাওয়া যাবে। পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের রাস্তা এটি। দালাল বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার প্রধান সড়কের পাশেই পুরোনো জমিদার বাড়িটি।


লেখা-ফয়সাল মাহমুদ।

No comments

Powered by Blogger.