সাপের কামড়ে বেজি মরে না কেন?
একসময় আমাদের দেশের বড় একটি জনপ্রিয় ও আনন্দদায়ক একটি খেলা হলো দুই মোরগের লড়াই। এই খেলা দেখতে যেমন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এক জায়গায় জড়ো হতো, তেমনি যেসব মোরগের মধ্যে লড়াই হতো তাদের কদরও ছিলো অনেক বেশি। মোরগ-মোরগের লড়াইয়ের মতো যদি কোথাও সাপ ও বেজির মধ্যে লড়াই আমরা দেখি, সেটাও আমাদের খুবই আনন্দ দেয়।
কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, সাপ যতই বিষাক্ত হোক না কেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাকে কাবু করে ফেলে বেজি। যেখানে সাপের কামড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, সেখানে বেজি কী করে পার পায়?
কোবরার মতো বিষাক্ত সাপের ছোবল খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কারণ, সাপের বিষ দ্রুত মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করে দেয়। ফলে মস্তিষ্ক, স্নায়ু এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু কোবরার ছোবলেও কেন কাবু হয় না বেজি? চলুন এর উত্তর জেনে নেওয়া যাক-
আসলে বেজিদের মস্তিষ্কে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার থাকে। এই নিউরোট্রান্সমিটারই সাপের বিষকে বেজির শরীরে অকেজো করে দেয়।
সাপ যখন বেজিকে ছোবল মারে, তখন এই নিউরোট্রান্সমিটার সক্রিয় হয়ে সাপের বিষকে বেঁধে ফেলে। ফলে তা ছড়িয়ে পড়ে বেজির স্নায়ুগুলোকে অকেজো করতে পারে না।
ফলে বেজির শরীরে প্রবেশ করলেও সাপের বিষ রক্তের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয়ে বেজির কিডনি এবং লিভারে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে অন্যান্য বর্জ্যের মতোই শরীরের বাইরে চলে যায়।
তাহলে কি সাপের কামড়ে কখনো বেজি মরে না? হ্যাঁ মরে। একটি বেজিকে যদি ক্রমাগত সাপ কামড়াতে থাকে, সেক্ষেত্রে বেজির স্নায়ুতন্ত্রেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করে।
ফলে বেজিটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে সাপও তাকে আক্রমণের সুযোগ পায় এবং শেষ পর্যন্ত বেজির মৃত্যুও হয়।
সাধারণত বড় কোনো বিষধর সাপের মুখে পড়লে অনেকসময় বেজি পেরে উঠতে পারে না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই প্রাণীর লড়াইয়ে জয়ী হয় বেজিই।
No comments