যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়
গুনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ করে ফেলে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহের ওপর অটল থাকা। মুমিন ব্যক্তি কখনো গুনাহের ওপর অটল থাকে না। সে তওবা করে এবং এমন সব কাজে নিয়োজিত হয় যার দ্বারা গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এখানে এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলো।
নফল নামাজ আদায় : হজরত মাদান ইবনে আবু তালহা (রহ.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত গোলাম সাওবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনো চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সেজদা (অর্থাৎ নফল নামাজ আদায়) করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সেজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (জামে তিরমিজি ৩৮৮)
সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় হওয়া : সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় আচরণ করার দ্বারাও গুনাহ মাফ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও তার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে ওপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহতায়ালা তার আমল কবুল করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকি আছে।’ (সহিহ বুখারি : ২৩৬৩)
অজু করে মসজিদে যাওয়া : উত্তমরূপে অজু করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি মাফ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, নামাজের জন্য বেশি পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক (ওয়াক্ত) নামাজের পর আরেক (ওয়াক্ত) নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)।’ (সহিহ মুসলিম ৪৭৫)
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া : জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। হজরত উসমান (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।’ (ইবনে খুজায়মাহ ১৪৮৯)
ভালো কাজ করা : মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাজ করলে গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কাজ মুছে ফেলে মন্দ কাজ।’ -(সুরা হুদ ১১৪) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জার (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহতায়ালাকে ভয় করো। আর মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। (জামে তিরমিজি ১৯৮৭)
তওবা করা : তওবার দ্বারা অতীতের পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা নয়, তবে যারা তওবা করে, ইমান আনে, সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ পরিবর্তন করে দেবেন নেকি দিয়ে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান ৭০)
দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ : মুমিন মুসলমান বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করলে এর প্রতিদানে তার গুনাহ মাফ হয় এবং সে পুণ্য লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম ক্লান্তি, রোগ-ব্যাধি, দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট পেলে এমনকি তার শরীরে কাঁটাবিদ্ধ হলে আল্লাহ এর মাধ্যমে তার সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’
No comments