সামরিক আইন জারির জন্য ক্ষমা চাইলেন দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি যা ঘটে গেল, সেজন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং সবার কাছে অন্তর থেকে ক্ষমা চাইছি।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল আরও বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য আমার দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা বিনা আপত্তিতে মেনে নেবো। আমি আর এই পদে থাকব কি না— সে ব্যাপারেও দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকবে।
তার ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই ক্ষমতাসীন দল পিপিপির শীর্ষ নেতা হান ডং হুন সাংবাদিকদের জানান, এ ইস্যুতে দল কোনোভাবেই ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। প্রেসিডেন্ট সুক ইয়োল তার পদে থাকা এবং দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে।
গত ৩ ডিসেম্বর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে আকস্মিকভাবে দেশজুড়ে সামরিক শাসন জারি করেন ইউন সুক ইয়োল। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া ও তাদের সমর্থক শক্তিগুলোর হাত থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানকে রক্ষা করতে সামরিক আইন প্রয়োজন।
টেলিভিশনে সামরিক আইন জারির ঘোষণা শোনার পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পার্লামেন্টের বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারি এমপিরাও। কারণ, সামরিক আইন জারি হলে পার্লামেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশকদের সামরিক আইন কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা একযোগে প্রেসিডেন্ট ইউনের জারি করা এ ডিক্রি প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে সামরিক আইন জারির ঘোষণার পরপরই সশস্ত্র সেনারা জানালা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন। একই সময়ে পার্লামেন্টের ছাদের ওপরে চক্কর দিতে শুরু করে হেলিকপ্টার। পার্লামেন্টের কর্মীরা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র থেকে গ্যাস স্প্রে করে সেনাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন প্রতিবাদকারীরা।
চাপের মুখে সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টা পরই তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ইয়োল। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সামরিক আইন জারির পর মধ্যরাতেই মন্ত্রিসভা আইন বাতিল করার ব্যাপারে একমত হয়। এরপর বুধবার সকালে এমপিরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ইউন সুক ইয়োল সামরিক শাসন জারির পর দেশটির রাজনীতিতে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল, গত কয়েক দশকে এমনটা দেখা যায়নি। বিরোধীদলীয় এক এমপি ইয়োনহ্যাপকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করুন আর নাই করুন, আমরা তাকে অভিসংশন করব।
No comments