বীমা খাতের মাফিয়া বিএম ইউসুফ আলী
দেশে-বিদেশে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। আলাদিনের চেরাগ পাওয়া এই ব্যক্তির নাম বীমা খাতের মাফিয়া বিএম ইউসুফ আলী।
মাঠকর্মী থেকে অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছেন পপুলার লাইফের এমডি
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বীমা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। আইন ভঙ্গ করে এখন তিনি পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এনআরবি ইসলামি লাইফের উদ্যোক্তা পরিচালক। শূন্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আছে বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি। দেশে-বিদেশে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। আলাদিনের চেরাগ পাওয়া এই ব্যক্তির নাম বীমা খাতের মাফিয়া বিএম ইউসুফ আলী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএম ইউসুফ আলীর জন্ম শরীয়তপুর জেলার পালং উপজেলায়। তিনি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। পরে এমডি হওয়ার জন্য চাকরিরত অবস্থায় অবৈধ উপায়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএম ইউসুফ আলী ১৯৯১ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মাঠকর্মী হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে বীমা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন।
পরবর্তীতে ২০০২ সালে তিনি পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে নির্বাহী পরিচালক (উন্নয়ন) পদে যোগ দেন। এরপর তিনি ঊর্ধ্বতন নির্বাহী পরিচালক হন । পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি এম এ আজিজকে ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেন। পরে এই চেয়ারে বসেন এম মাহফুজুল বারী। এরপর ২০০৬ সালে বিএম ইউসুফ আলীকে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে মাহফুজুল বারীকেও বিভিন্ন বেনামী মামলা মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে পপুলার লাইফ থেকে বিদায় করেন এবং নিয়োগের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এমডির চেয়ারে বসেন।
বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ভঙ্গ
আইন ভঙ্গ করে রয়েছেন দুটি লাভজনক পদে: কোন ব্যক্তি একাধিক বীমা কোম্পানির পরিচালনার সাথে যুক্ত হতে পারবেন না বা কোন কোম্পানির পরিচালক একইসঙ্গে অন্য কোন বীমা কোম্পানিতে লাভজনক পদে চাকরিতে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বীমা আইনে এমন বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এই কাজটি করে আসছেন বিএম ইউসুফ আলী। সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদ আগলে রাখা বিএম ইউসুফ আলী একইসঙ্গে এনআরবি ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক।
বীমা আইন ২০১০ সনের ১৩ নম্বর আইনের ধারা ৭৮-এ পরিচালক কর্তৃক চাকুরি করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইন বা বীমাকারীর সংঘবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি বীমাকারীর চাকুরিতে উপদেষ্টা, নিরীক্ষক, পরামর্শক বা অন্য কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকিলে তিনি উক্ত বীমাকারীর পরিচালক হইবার বা থাকবার যোগ্য হইবেন না। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ২৫ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যাংক কোম্পানি বা একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানি বা একাধিক জীবনবিমা কোম্পানির পরিচালক থাকবেন না। এদিকে প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানির কোনো পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানি বা বীমা কোম্পানির পরিচালক থাকবেন না বা তার পক্ষে অন্য কাউকে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানি বা বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ করতে পারবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি: তৎকালীন বীমা অধিদপ্তর (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) পপুলার লাইফের এমডি হিসেবে তার নিয়োগ অনুমোদন না মঞ্জুর করে। এরপর তার এমডি নিয়োগের অনুমোদন বাতিলের বিপক্ষে সে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জুন মাসে হাইকোর্টের একটি রায়ের বলে তাকে বীমা অধিদপ্তর থেকে শর্তসাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে নিয়োগপত্র দেয়া হয়। শর্তগুলো হলো-তিনি অন্য কোন কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কোনোভাবে কর্মরত থাকতে পারবেন না, তিন অথবা তার পরিবারভুক্ত কোন সদস্য অন্য কোন বীমাকারীর উদ্যোক্তা পরিচালক বা উপদেষ্টা হতে পারবে না এবং তিনি কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক বা মুখ্য নির্বাহী হতে পারবে না। কিন্তু বিএম ইউসুফ আলী নিয়োগ অনুমোদনের সেই শর্ত ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এখন পর্যন্ত পপুলার লাইফের এমডি পদে এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক পদে একইসাথে দায়িত্বে আছেন।
No comments