Adsterra

পৃথিবীর সবচেয়ে কৃপণ নারীকে চেনেন কি ?

পৃথিবীর সবচেয়ে কৃপণ নারীকে চেনেন কি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

আমাদের সমাজের আশেপাশে বা বন্ধুমহলে আমরা অনেক মিতব্যয়ী মানুষকে দেখি, তারা একেকজন একেকরকম কৃপণ। তারা সবসময় চেষ্টা করে কীভাবে কম ব্যয়ে জীবন পরিচালনা করা যায়। তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে ব্যয় কম সঞ্চয় বেশি। তবে পৃথিবীর এমন একজন নারী রয়েছেন যিনি এতটাই কৃপণ যে, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কৃপণ নারীর স্বীকৃতি পেয়েছেন।


এই কৃপণ নারীর নাম হেট্টি গ্রিন। তার পুরো নাম হেনরিয়েটা হাওল্যান্ড গ্রিন হলেও তিনি হেট্টি গ্রিন নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি ওয়াল স্ট্রিটের ডাইনী এবং বিশ্বের সবচেয়ে কৃপণ নারী নামে পরিচিতি পান। নিজের অসাধারণ আর্থিক দক্ষতা এবং একই সঙ্গে কঠোর মিতব্যয়ীতার কারণে হেট্টি গ্রিন আজও আলোচনায়।


হয়তো ভাবছেন হেট্টি গ্রিন অভাবে পড়ে হয়তো কৃপণতা করতেন। আসলে একেবারেই তেমনটা নয়। হেট্টি গ্রিন ১৮৩৪ সালের ২১ নভেম্বর ম্যাসাচুসেটসের নিউ বেডফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ধনী পরিবারের সন্তান। হেট্টির পরিবার তিমি শিকারের ব্যবসা, শিপিং এবং রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিল।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

ছোটবেলা থেকেই তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি পরিবারের অ্যাকাউন্টস পড়তে শুরু করেন এবং ১৩ বছর বয়সে পারিবারিক বিনিয়োগের দায়িত্ব নিতে শেখেন। ১৮৬৫ সালে হেট্টির বাবা এবং চাচা মারা যান। এর ফলে তিনি প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলারের বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। তবে সেই সম্পদকে তিনি আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছিলেন।


হেট্টি গ্রিন ছিলেন একাধারে একজন ব্যতিক্রমী বিনিয়োগকারী এবং মিতব্যয়ী। তিনি তার মূলধনকে বন্ড, রিয়েল এস্টেট, রেলওয়ে শেয়ার এবং ঋণে বিনিয়োগ করতেন। যেখানে বেশিরভাগ নারী সামাজিক এবং পারিবারিক কাজে সময় ব্যয় করতেন, হেট্টি তার সময় এবং মেধা ব্যয় করতেন আর্থিক হিসাব এবং বাজার বিশ্লেষণে।


অন্য বিনিয়োগকারীরা যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় লাভের আশায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন, হেট্টি সেখানে দীর্ঘমেয়াদী এবং নিরাপদ বিনিয়োগে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি রেলওয়ে শেয়ার, সোনা এবং নগদ অর্থে বিনিয়োগ করতেন। তার সময়কালে মার্কিন অর্থনীতি নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে ছিল, তবে হেট্টি দক্ষতার সঙ্গে সেসব পরিস্থিতি সামলে তার সম্পদকে বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করেন।


তবে নিজের বেলায় তিনি এক পয়সাও খরচ করতে চাইতেন না। হেট্টি গ্রিনের কৃপণতার গল্পগুলো তার আর্থিক দক্ষতার মতোই বিস্ময়কর। তিনি এতটাই মিতব্যয়ী ছিলেন যে, শীতকালে গরম করার খরচ বাঁচাতে একমাত্র কালো পোশাক পরতেন। তার এই পোশাকটিও ছিল জরাজীর্ণ। এমনকি তিনি ১৬ বছর বয়সে যে অন্তর্বাস কিনেছিলেন সেটিই জোড়াতালি দিয়ে শেষ বয়স পর্যন্ত পরেছেন।


তিনি নিজের এবং পরিবারের চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও চরম মিতব্যয়িতা দেখাতেন। একবার তার ছেলে নেড গ্রিন পায়ের চোট পান। হেট্টি এতটাই কৃপণ ছিলেন যে তিনি ছেলেকে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা না করানোর কারণে নেডের পা কেটে ফেলতে হয়। এই ঘটনার পর থেকে তিনি সবচেয়ে কৃপণ মা হিসেবেও পরিচিত হন।


নিজের খাবারের জন্যও তেমন খরচ করতেন না। যদিও তার স্বামীও ছিলেন এক ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী। যার টাকার কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু হেট্টি একেবারেই খরচ করতে চাইতেন না।


তিনি নিউ ইয়র্কের কোনো ব্যাঙ্কে নিজস্ব অফিস না রেখে সাধারণ পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে কাজ করতেন। কারণ, সেখানে আলোর খরচ লাগত না। এমনকি তিনি তার নিজের খাবারের জন্য অতি সামান্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন এবং সর্বদা কম খরচে চলার চেষ্টা করতেন।


মুদি দোকানের অবশিষ্ট কেক এবং ভাঙা বিস্কুট খেতেন এবং প্রতিদিনই তার কুকুরের জন্য একটা ফ্রি হাড় পাওয়ার জন্য দোকানীর সাথে ঝগড়া করতেন! তিনি মাত্র দুই সেন্ট দামের একটি পাই খেয়ে বেঁচে ছিলেন বহুদিন। সাবান খরচ বাঁচানোর জন্য তার পোশাক যখন অতিরিক্ত ময়লা হয়ে যেত তখন শুধু ময়লা অংশটুকু ধুয়ে নিতেন।


হেট্টি গ্রিন তার কৃপণতা এবং কঠোর জীবনধারার কারণে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে তার এই মিতব্যয়িতার মাধ্যমেই তিনি বিশাল এক সম্পদ তৈরি করতে পেরেছিলেন। ধারণা করা হয়, তার মৃত্যুর সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার, যা আজকের বাজারে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের সমান।


তার কঠোর আচরণ এবং আর্থিক সফলতা অনেক পুরুষ বিনিয়োগকারীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণেই তাকে ওয়াল স্ট্রিটের ডাইনী নামে ডাকা হতো। হেট্টি গ্রিনের ব্যক্তিগত জীবনও তার কৃপণতার মতোই আকর্ষণীয় এবং জটিল ছিল। ১৮৬৭ সালে তিনি এডওয়ার্ড গ্রিন নামে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে তার কৃপণ স্বভাব এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণের কারণে এই সম্পর্ক অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে।


১৯১৬ সালে ৮১ বছর বয়সে হেট্টি গ্রিনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার বিশাল সম্পদ দুই সন্তান, নেড এবং সিলভিয়া গ্রিনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। তারা তাদের মায়ের মতো কৃপণ ছিলেন না এবং ধীরে ধীরে এই সম্পদ বিলাসী জীবনযাত্রার মাধ্যমে শেষ করে ফেলেন। তবে তার মেয়ে তার মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে কিছুটা খরচ করেছিলেন হাসপাতালের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.