বিয়ে না করার কারণ জানালেন মারজুক রাসেল
চলতি মাসের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ঢালিউড নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘৮৪০’। এ ছবিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা মারজুক রাসেল। এ চরিত্রে তার অভিনয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ‘৮৪০’-সহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে একটি গণমাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন মারজুক রাসেল। এটি যুগান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
আপনাকে সিনেমায় অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায় না। যাও দেখা গেছে, তার প্রায় সবকটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায়। ‘৮৪০’–এ অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা সম্পর্ক, কতটা গল্পের মুগ্ধতা কাজ করেছে? মারজুক রাসেল বলেন, আমি তো সেই অর্থে একাডেমিক অভিনেতা নই, তাই অনিয়মিত। আসলে আমি যা যা করি, তার সবকিছুতেই অনিয়মিত, ২০২১ থেকে সেমি-নিয়মিত। কিশোরবেলার কৌতূহল আমারে ভিজ্যুয়াল মিডিয়ামে জড়াইতে উসকানি দিছে। পরে ২০০০ সালের দিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ছবিয়াল’-এ যোগ দিলে টানা ১৫ বছর টেলিভিশন-সিনেমার পেছন-সামনের অ, আ, ক, খ শেখা হয়েছে। ফিলোসফিতে (দর্শনে) ভিন্নতা থাকলেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে বন্ধু-বস-সম্পর্ক সব সময় অটুট, ৮৪০-এর ক্ষেত্রে গল্প ও ‘আমার সাম্প্রতিক পপুলারিটি’ কাজ করেছে,―কাজের সময় নিজেকে বহিরাগত মনে হয়নি।
চলচ্চিত্রে আপনার একটি সংলাপ ছিল— ‘রাজনীতিতে সবসময় অ্যাটাক চলে না...’। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কিছুই রাজনীতির বাইরে না’—এই হিসাব খালি জীবনের নয়, মরণেরও; জীবন–মরণের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাজনীতি মানে ‘মনুষ্যগঠিত কয়েকটা স্থানীয় সংগঠনের কার্যক্রম’ নয়।
‘৮৪০’–এর প্রচারণায় আপনি প্রেক্ষাগৃহে গেছেন। দর্শকরা ছবিটি দেখে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা বলেছেন, তা কী আপনার নজরে এসেছে? মারজুক বলেন, সরাসরি প্রতিক্রিয়া ছিল ‘ভালো হইছে’, ‘সমসাময়িক’, ‘ফানি’, ‘রিয়েলিস্টিক’—এ রকম আরও কিছু শব্দ ও শব্দের বাক্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল/আইডি চালাই না, পেজ চালাই বইলা কিছু ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’ টাইপ আর মিশ্র প্রতিক্রিয়া নজরে এসেছে; এসে থাকতে পারে নাই, চইলাও গেছে।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। একটা সময় আপনার লেখা গান নিয়মিতই আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, এরপর আসিফ আকবরসহ অন্যরাও গেয়েছেন। এখন গান লেখালেখিতে আপনাকে সেভাবে পাওয়া যায় না কেন? এ অভিনেতা উত্তরে বলেন, শুরুতেই বলছিলাম, আমি যা যা করি, তার সবকিছুতেই অনিয়মিত ও গানেও। ‘গানের কবিতা’ স্বেচ্ছায় এলে এখনো লিখি; অর্ডার বা ফরমাশে, বিষয় নির্বাচন করে দিলে লিখতে পারি না। অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গেলে হাঁপাইয়া উঠি। গান হয়ে ওঠায় গীতিকবি, সুরকার, সংগীতশিল্পী, কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয় না হওয়ায় ‘কারও হয়ে’ বা ‘কারও জন্য’ আমার গান লেখার আগ্রহে ভাটা পড়ছে সত্যি; কিন্তু স্বেচ্ছায় আসা নানান লেখায় জোয়ার আর জোয়ার।
এখনো তো গান হচ্ছে, শোনা হয় কি? শোনা হলে গীতিকবিতা বা গায়কী ও সুরে মুগ্ধ হয়েছেন, এমন কেউ আছেন? মারজুক রাসেল বলেন, জুনায়েদ ইভানের গান আর আলী হাসানের র্যাপে মুগ্ধ আছি দীর্ঘদিন। ‘তোরা বাতাস কর বাতাস কর’ গাওয়া সুমনের গায়কীতেও মুগ্ধ ছিলাম। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে অকালপ্রয়াণ হইল তার!
যত দূর শুনেছি, আপনি যখন যা করতে চেয়েছেন, করেছেন। এরপরও এমন কিছু করতে চেয়েছেন কিন্তু করা হয়নি—এ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, অর্গানিক ‘ক্রিয়া’ ছাড়া অনেক ‘হাইব্রিড ক্রিয়া’–ও করতে হইছে, হইতেছে, হবে। নিজের লেখা কিছু লিরিক গাওয়ার চাওয়া আছে আমার অসুরা-কণ্ঠে,―মেশিন ভরসা।
ব্যক্তিজীবন প্রসঙ্গে আসি। শুনেছি, জেরিন নামের এক তরুণীর সঙ্গে আপনার প্রেম ছিল। এরপর তিনি বিয়ে করে সংসারী হলেও আপনি হননি। এই প্রেমই কি আপনাকে সংসারবিবাগী করেছে? আপনার কি সংসারী হতে ইচ্ছা করে না? মারজুক রাসেল বলেন, একটু আগেও যা বলে এলাম, তা–ও আমার ব্যক্তিজীবনের বাইরের প্রসঙ্গ নয়। যা–ই হোক, ওইটা একতরফা ছিল, আমার তরফে, ওয়ান-সাইডেড। কিশোরবেলায় প্রকৃতি আমারে দিয়া ওই পাগলামি করাইয়া নিছিল।
তিনি বলেন, দাম্পত্য জীবন আর সংসারজীবন এক নয়। একলাও সংসার করা যায়। কাজকর্মে, দূরে একলা থাকলেও আমি সংসারবিবাগী নই—নানু, মা, বোন, ভাইদের নিয়েই আমাদের সংসার। দাম্পত্যে জড়াইতে প্রথম চেষ্টা করছি ১৯৯৬ সালেই, ম্যাচ হয়নি।―ম্যাচ না করলে সামাজিক আইন মাইনা, জোর কইরা ম্যাচ করাইয়া আজীবন বা বিচ্ছেদের পূর্বাপর ‘ক্যাচক্যাচ, ঘ্যাচঘ্যাচ’ কইরা যাওয়ায় আমি আগ্রহী নই। ইংরেজি ‘ম্যাচমেকিং’ শব্দবন্ধটা এই ক্ষেত্রে স্মরণীয়। ‘ম্যাচ’ করে না!
আপনার লেখা গান, জিঙ্গেল, বই অনেককে মুগ্ধ করেছে। কার বই আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছে, মুগ্ধ করেছে? এ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, অসংখ্যের লেখা। তাদের নাম উল্লেখ করে কাউকে ছোট, বড়, মেজ বানানোর চর্চা আমার ইদানীং নেই।
সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে অনেকে প্রকৃতি কিংবা নির্জনতা পছন্দ করেন। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা?
মারজুক রাসেল বলেন, সৃজনশীল কাজের পরিবেশ, স্থান–কাল–পাত্র— এসব মিথের কারাগার থেকে অনেক আগেই মুক্তি পাইছি। এখন আমার যা কিছু লেখা হয়, সব অভ্যাসবশত অভিজ্ঞতা, রিয়েল ইভেন্ট, কল্পনা, আড্ডা, পাঠ, দর্শন, শ্রবণ, খাওন, ঘুম, গোসল, প্রেম প্রভৃতির অংশগ্রহণে।
No comments