বছর সেরা পাঁচটি দর্শনের বই
প্রতি বছর বিভিন্ন বিভাগের সেরা বই নিয়ে বর্ষসেরা পাঁচটি বইয়ের ওপর আলোচনা করে ফাইভবুক ডটকম। ওয়েবসাইটির ফিলোসোফি সম্পাদক নাইজেল ওয়ারবার্টন ২০২৪ সালের সেরা পাঁচটি বই নির্বাচন করেছেন। ফাইভবুক ডটকমের ফিলোসোফি বিভাগের সম্পাদকের বাছাই করা এ পাঁচটি বই নিয়ে তার মূল্যায় সংক্ষেপে আলোচনা করব-যাতে আগ্রহীরা মূল বইগুলো বিস্তারিত পড়ার উৎসাহ পান।
বাংলাদেশের দর্শনচর্চার বেহাল দশার কথা আমরা সবাই জানি। চলতি দুনিয়ার দার্শনিক বইপত্র ও চিন্তার বিষয়ের সঙ্গে সংযোগের প্রয়োজনীয়তা আমরা পুরোপুরি বুঝি না। নিজের পছন্দের মতাদর্শকে প্রমোট করাই এখানে দর্শনচর্চা। খোলা মনে বিভিন্ন চিন্তার ধারাগুলো নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে বোঝার চেষ্টা খুবই বিরল। এসব বইপত্রের সঙ্গে পরিচয় আমাদের চিন্তার বিকাশে কাজে আসতে পারে। ২০২৪ সালে সেরা বই বিষয়ে নাইজেলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ক্যাল ফ্লাইন। হুবহু অনুবাদ না করে, বইগুলো নিয়ে নাইজেলের মূল বক্তব্যকে সংক্ষেপে ধরতে চেষ্টা করেছি।
শেষ হতে চলা এ ২০২৪ সালে দর্শনের ভালো বইপত্র তেমন কিছু প্রকাশ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নাইজেল বলেন, ‘এটা একটা ভালো বছর ছিল এই অর্থে যে, বেশকিছু ভালো বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে এটি এমন কোনো বছর না যে, দর্শনের বইয়ের জন্য সালটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বই থেকে বেছে নেওয়ার জন্য শত শত অসামান্য দর্শনের বই কিন্তু আমাদের সামনে ছিল না। আমি জানি না এটি কোভিডের বিলম্বিত প্রভাব কিনা? দর্শনের বইয়ের সমালোচক হিসাবে আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে। অন্যদের কাছে হয়তো এটার ভিন্ন রকম ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এটা একদমই আমার ধারণা। আমরা এবার তেমন কোনো সত্যিই আশ্চর্যজনক বা আপ্লুত হওয়ার মতো দর্শনের বই পাইনি।’
এটা খুবই ইন্টারেস্টিং। তিনি সরাসরি স্বীকার করেছেন, এবার তেমন কোনো স্মরণীয় বই প্রকাশ হয়নি। তারপরও এখানে যে পাঁচটি বই তিনি সিলেক্ট করেছেন, এটি নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওহ, হ্যা। কিছু গ্রেট বই অবশ্য প্রকাশিত হয়েছে। এবং আগামী বছর মানে ২০২৫ সালে বেশকিছু ভালো বই প্রকাশিত হবে বলে আমি খবর পেয়েছি। এ বছরের জন্য তিনি যে পাঁচটি বই নির্বাচন করেছেন তা হলো-
1. Herald of a Restless World: How Henri Bergson Brought Philosophy to the People (October 22, 2024) by Emily Herring
2. Facing Down the Furies: Suicide, the Ancient †reeks, and Me ( March 19, 2024)
by Edith Hall
3. Marx ((September 5, 2024)
by Jaime Edwards & Brian Leiter
4. The Edge of Sentience: Risk and Precaution in Humans, Other Animals, and AI ((November 15, 2024), by Jonathan Birch
5. We Are Free to Change the World: Hannah Arendt’s Lessons in Love and Disobedience (January 16, 2024), by Lyndsey Stonebridge
১.
এবার সংক্ষেপে আমরা এ পাঁচটি বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে একটু কথা বলব। প্রথম বইটি নিয়ে আলাপ শুরু করা যাক। নাইজেল প্রথমে নির্বাচন করেছেন, Emily Herring এর লেখা Herald of a Restless World: How Henri Bergson Brought Philosophy to the People?
এটি একটি বায়োগ্রাফি। বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক হেনরি বার্গসনের ওপর লেখা এটি। অনেকে ভেঙে ভেঙে উচ্চারণ করেন। অনেকে একসঙ্গেও উচ্চারণ করেন-Berg-son। এমিলি যেহেতু এংলো-ফরাসি, ফলে তার উচ্চারণে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি জানেন কীভাবে উচ্চারণ করতে হয়। যেভাবে ইংলিশরা উচ্চারণ করেন, তারচেয়ে আলাদাভাবে তিনি উচ্চারণ করতে পারেন। যদিও ইংলিশ এলাকায় মানে-ব্রিটেন ও আমেরিকাতে এখন বার্গসন তেমন পরিচিত নন। কিন্তু তিনি এখনো ফ্রান্সে ব্যাপক পরিচিত। এবং এ বইতে এমিলি আমাদের এ বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যাও হাজির করেছেন। কেন তিনি ফ্রান্সে এখনো এত পরিচিতি ইংলিশ এলাকার চেয়ে? এটির একটি কারণ হলো-বার্ট্রান্ড রাসেল বার্গসনকে খুবই অপছন্দ করতেন। তার দর্শনকে রাসেল একদম খারিজ করে দিতেন। এর কারণ হতে পারে-সেই সময়ে বার্গসন প্রচণ্ড জনপ্রিয় পাবলিক স্পিকার ছিলেন। এবং রাসেলের প্রভাব বিস্তারের অন্যতম বাধা হয়ে উঠেছিলেন বিভিন্নভাবে। এমিলি লিখেছেন, বার্গসন একবার নিউইর্কের ব্রডওয়েতে একটা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন এবং রাস্তায় পুরো জ্যাম লেগে গিয়েছিল। তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন, পাবলিক জানালায় উঁকি দিয়ে ও গ্লাসে কান লাগিয়ে তার কথা শুনতে চেষ্টা করত হলের ভেতরে জায়গা না পেয়ে।
যদিও তিনি দেখতে তেমন আহামরি কিছু ছিলেন না, কিন্তু তিনি কথা বলতেন খুবই চমৎকার ভঙ্গিতে। দুঃখজনক হলো, তার কোনো আলোচনার রেকর্ড সংরক্ষণ করা নেই। এমিলি এ বইতে আরও যা তুলে এনেছেন, তার মধ্যে একটি হলো, উনার অনেক নারী ভক্তও ছিল। এটির কারণ ছিল-তিনি খুব কাব্যিকভাবে দর্শনকে ডিল করতেন। তিনি এমনভাবে ভাষাকে ব্যবহার করতেন, তা সরাসরি চিন্তাকে প্রভাবিত করত। ব্যাপক ব্যাখ্যার বদলে তিনি এমনভাবে চিন্তাকে প্রকাশ করতেন, তা অনুভূতিকে ছুঁয়ে যেত। এটাই তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। বিশেষ করে নারীদের কাছে জনপ্রিয় করেছিল।
বার্গসনের মূল চিন্তা বা আইডিয়া বিষয়ে নাইজেল জানান, তার সবচেয়ে বিখ্যাত ধারণাগুলোর একটি ‘সময়’ বিষয়ে। তিনি সময়ের ধারণা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন, যা কখনো কখনো ‘সময়কাল’ বা ডিউরেশন হিসাবে অনুবাদ করা হয়। তবে কমবেশি ‘লিভ টাইম’ বা যাপিতকালের সঙ্গে এটাকে মিলিয়ে বুঝতে পারা সম্ভব। যাপিত সময় বা যেই সময়টা আমাদের ‘অনুভূত সময়’ এবং এটা ঘড়ির সময় থেকে খুব আলাদা।
তিনি মনে করেন, যে সময়ের অনেক আলোচনায় ‘সময়’ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটিকে একেবারে উপেক্ষা করা হয়। ‘সময়’ এমন একটা বিষয়/ধারণা, যার মধ্যে আমরা বাস করি। এটি এমন কিছু নয়, যা বিগত হয়ে গিয়েছে বা এটি এমনভাবে মাপার কিছু নেই, যা আগে ছিল। এটা একটা অতি সংক্ষিপ্তভাবে উনার সময় বিষয়ক ধারণার আলাপ। কিন্তু তার ডিউরেশনের ধারণার সঙ্গে সময়কে সাবজেক্টিভ বা কর্তা হিসাবে বিবেচনার বিষয়টি ছিল। বার্গসন ইভিউলিশন ও তার কালের বিজ্ঞানের অগ্রগতির বিষয়েও বেশ সজাগ ছিলেন। সব মিলে নাইজেল মনে করেন, এ বইটি বার্গসনের মতো একজন অসাধারণ দার্শনিকের চিন্তা ও জীবনকে জানার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এতে শুধু জীবনী না, তার চিন্তার বিকাশের ইতিহাসও একইসঙ্গে জানা যাবে। এবং এমিলি এ বিষয়ে ভালোই কাজ করেছেন, এর আগে তিনি বার্গসনের ওপর তার পিএইডি করেছেন। সব মিলে এ বিষয়ে তিনি বেশ ভালো দখল রাখেন। তিনি-ই এই বিষয়ের যোগ্য মানুষ এবং কাজটাতে তিনি সেই প্রমাণ রেখেছেন।
২.
এর পরে দ্বিতীয় নম্বর বইটির নাম : Facing Down the Furies: Suicide, the Ancient greeks, and Me.
এটি এমন একটি বই, যেটি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হলেও এটি মূলত ব্যক্তিগত অবস্থার ও অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা হয়েছে। এডিথ হলো বইটির লেখক। তিনি বেশ আগ্রজাগানিয়া একজন লেখক ও চিন্তক। তিনি একজন ক্লাসিস্ট ও দার্শনিক। তিনি অ্যারিস্টোটলিয়ান। তিনি কবিতা নিয়েও লেখেন। তিনি প্রায় ছয় মাস পরপর একটা করে বই বের করেন।
এ বইটি অনেক বেশি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে লেখা। এটির মধ্যে আত্মকথা, পরিবারের স্মৃতি, গ্রিক ট্র্যাজেডি, দর্শন ও কনফেশনের সমন্বয় ঘটেছে। এটি আত্মহত্যাবিষয়ক একটি বই, যেটি তার নিজ পরিবারের আত্মহত্যার ইতিহাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। তার দাদার দাদা, মা এবং ভাই আত্মহত্যা করেছিল। এ বইতে তিনি নিজের আত্মহত্যার প্রচেষ্টা নিয়েও কথা বলেছেন। তবে এটি শুধু নিজের ও পরিবারে আত্মহত্যার ইতিহাস বয়ানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আত্মহত্যার বিষয়ে গ্রিক আমল থেকে পরের সময়ের বিস্তারিত বয়ান তিনি ধরার চেষ্টা করেছেন এবং এ বিষয়ে দার্শনিকদের বয়ানকে হাজির করেছেন। এমনকি আত্মহত্যার সাধে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন তার পরিচিত এবং অপরিচিতদের মধ্যে এর প্রভাব নিয়েও তিনি বিস্তারিত কথা বলেছেন। আত্মহত্যার বিস্তৃত প্রভাব এখানে উঠে এসেছে। তিনি লেখক হিসাবে খুবই ডাইনামিক। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তার এ কাজ খুবই গুরুত্ব পাবে বলে নাইজেল মনে করেন।
৩.
তিন নম্বরে আছে যে বইটি তার নাম : Marx
এটি খুবই ভিন্ন ঘরানার একটি বই। এটি অনেকটা পাঠ্যপুস্তকের মতো করে লেখা হয়েছে। এটি মূলত মার্কসের কাজের ওপর এক ধরনের ভূমিকা-পুস্তক। এটি যারা মার্কসকে একদমই জানে না, তাদের জন্য খুবই কাজের বই। প্রাথমিকভাবে তার চিন্তাকে বুঝতে খুব কাজের একটা বই হতে পারে এটি। অনেক মানুষ মার্কসের চিন্তাকে বুঝতে চেষ্টা করেন অর্থনীতির আলোকে। এরা সাধারণত শুরু করেন সরাসরি রাজনীতি অথবা কমিউনিস্ট ম্যানিফেসটো পড়ার মাধ্যমে। বাকিরা আসেন দার্শনিক চিন্তার পথ ধরে। এলিয়েনশন অথবা ইডিওলজি-এ লাইন ধরে তারা বুঝতে চেষ্টা করেন।
আর এ বইটি খুব ভালোভাবে মার্কসের চিন্তার প্রধান ধারণাগুলোকে ও জীবনকে তুলে ধরেছে। এ বইটার ইডিওলজি অধ্যায়টা সত্যিই খুব অসাধারণ। ইডিওলজি বলতে মার্কস বুঝেন এমন একটি কিছু, যার দ্বারা সমাজের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং আমরা তা বুঝি না বা উপলব্ধি করি না এবং এটি শাসকশ্রেণিকে শক্তি জোগায়। এ বইতে আরও বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে ইডিওলজিকে দেখানো হয়েছে এবং মার্কসের চিন্তার বিবর্তনটাও ধরতে চেষ্টা করেছে লেখকরা। খুব সহজে ও সংক্ষেপে অতি জটিল বিষয়কে বোঝাতে পেরেছেন তারা। বিখ্যাত মার্কসবাদী চিন্তকদের নিয়েও এখানে আলোচনা আছে। খুব সহজে ও সংক্ষেপে তাদের চিন্তা এখানে ধরা হয়েছে। মার্কসের বিশাল ও বহু বিস্তৃত কাজের এত প্রিসাইস ও সহজ উপস্থাপন বইটিকে খুব সহজ পাঠ্য করেছে। মার্কসের চিন্তার দিকে নতুন করে তাকানোর একটা সুযোগ পাওয়া যাবে বই থেকে।
৪.
চতুর্থ নম্বরে আছে-The Edge of Sentience: Risk and Precaution in Humans, Other Animals, and AI - বইটি।
এটি খুবই ব্যতিক্রমী ধারার একটি বই। বইটি অনলাইনে ফ্রি পাওয়া যায়। বইটির লেখক জনাথন একজন দার্শনিক ও গবেষক। যিনি মূলত কাজ করেন মানুষ যে নৈতিক অবস্থান থেকে প্রাণীদের সঙ্গে ভাব আদান-প্রদান করেন এবং প্রাণীরা আসলে কেমন আচরণ পছন্দ করেন, তার বৈজ্ঞানিক দিক নিয়ে। তিনি খুব গভীরভাবে প্রাণীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাণিজগতের যে বিচিত্র ও বিশাল অভিজ্ঞতার এলাকা রয়েছে, তাকে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক অভিনিবেশ সহকারে তিনি পর্যবেক্ষণ করেন। এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের দুঃখবোধ ও কষ্ট পাওয়ার অনুভূতি আপনাকে অবাক করে দেবে। আবার এমন অনেক প্রাণী আছে, যারা খুব সরলভাবে এমন সুন্দর সুন্দর প্লে-ফুল দৃশ্যের জন্ম দেয় এবং এত সহজে মরে যায় যে, আপনাকে বিষণ্ন করে দেবে তাদের এ জীবন চক্র। সব মিলে অনুভূতির এক বিচিত্র ভুবন এ বইতে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
লেখক মনে করেন, আমাদের কিছু প্রিকশনারী প্রিন্সিপাল বা নীতি নেওয়া দরকার। কোনো প্রাণীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। একটি প্রাণী আদতে যা, আর আমরা সঠিকভাবে তার স্বভাব না জেনে তার বিষয়ে যা ধারণা করি, তার বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার দরকার আছে। তিনি এমন এক গণদার্শনিক যে, তার বইকে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি চান, তার এ চিন্তাগুলো নিয়ে মানুষ আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুক। জগতের বিভিন্ন প্রাণীর মনোজগৎ ও প্রাণবৈচিত্র্যকে বোঝার এমন দার্শনিক চেষ্টা সত্যিই বিরল।
৫.
পাঁচ নম্বর বইটির নাম : We Are Free to Change the World: Hannah Arendt’s Lessons in Love and Disobedience.
হান্না আরেন্ডকে নিয়ে ইদানীং বেশকিছু সিরিয়াস কাজ হচ্ছে। ২০২১ সালেও হান্নার একটা বায়োগ্রাফি বের হয়েছিল। সামান্থা রোজ হিল সেটা লিখেছিলেন। এবার এটি এমন একজন লেখক লিখেছেন, যিনি আসলেই একজন প্রকৃত লেখক। মানে হলো, তিনি একজন চিন্তক এবং একজন চমৎকার লেখক, যা বইটাকে বেশ সুখপাঠ্য করেছে। তিনি শুধু হান্নার জন্ম-মৃত্যু বা জীবনী হাজির করেননি। তিনি হান্নার জীবনের বিভিন্ন ইভেন্টগুলো ধরে ধরে কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রসঙ্গ ধরে প্রশ্ন তুলেছেন। এখানে এমন কিছু অধ্যায়ের নাম আছে, যা সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো। যেমন-হাও টু থিংক এজ এ রিফিউজি? বা হাও টু লাভ? হোয়াট ইজ ফ্রিডম? ইত্যাদি।
এ বইতে এমন একগুচ্ছ প্রশ্নকে হাজির করা হয়েছে, এখানে কেবল সরল রৈখিকভাবে হান্নার জীবন ও ঘটনাকে বয়ান করা হয়নি। হান্নার জীবন ও ঘটনাকে জানলেই তাকে বিস্তারিত জানা হবে না। বরং তিনি তার সময়কালে যেসব ব্যক্তি ও যেসব স্থানে ছিলেন, সেগুলো তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, তা বিস্তারিত না জানলে হান্নাকে জানা হবে না। তিনি স্বৈরাচার নিয়ে (অরিজিন অব টোটালেটারিয়ানিজম) লিখেছেন এবং তিনি এটি নিজের জীবনে মোকাবিলা করেছেন। তিনি স্বাধীনতা নিয়ে লিখছেন এবং স্বাধীনতার জন্য চরম সংগ্রাম করেছেন। নাৎসি আমলে পালিয়ে ফ্রান্সে আসেন এবং পরে আমেরিকাতে অভিবাসী হন। তিনি তার সময়কে মোকাবিলা করেছেন। তিনি নিজেকে দার্শনিক মনে করতেন না, কিন্তু তাকে কান্ট, সার্ত্র বা হাইডেগারের মানের দার্শনিক মনে করেন অনেকেই। তিনি এমন একজন দার্শনিক, যিনি কাজ করেছেন, লড়াই করেছেন, আর নিজের দার্শনিক অবস্থান ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন। তিনি ছিলেন একজন ইন্টেলেকচুয়াল সাংবাদিক। বিখ্যাত দার্শনিক হাইডেগার ছিলেন তার শিক্ষক ও প্রেমিক। নারী দার্শনিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
No comments