Adsterra

এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, এটা নতুন কোনো রোগ নয়। এর ভয়াবহতার ঝুঁকিও কম।

তার পরও এই রোগ নিয়ে দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান প্রস্তুতি দেখা যায়নি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, প্রচলিত চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়। তাই এ ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত ভয়ের কিছু নেই। যদিও এইচএমপিভির ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তবে এতে বড় ধরনের হুমকি নেই।

তিনি আরও বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতোই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর আগেও দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

এইচএমপিভি রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আলোচনায় বসবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। চীন জানিয়েছে তারা এই রোগের কারণে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করেনি। অনেকে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে এ বছর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি বলে যোগ করেন তিনি।

এদিকে, সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে পার্শ্ববর্তী ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে দুটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। এর আগে চীন, জাপান ও মালয়েশিয়ায় এইচএমপিভি শনাক্ত হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যে জানা যায়, সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে প্রথমে আট মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। পরে তিন মাসের এক শিশুর শরীরেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ভারতের কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও বলেন, এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এইচএমপিভি ভারতেও রয়েছে। তবে এই ভাইরাসের রূপান্তর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অতীতেও ভারতে সাধারণ এইচএমপিভি দেখা গেছে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড বলেছেন, আরও একটি মহামারির শঙ্কা করা হচ্ছে, তবে কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে; সেটি এখনও নিশ্চিত নয় বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিস-এক্স।

সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে হাম, কলেরা, বার্ড-ফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে। এর মধ্যে হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাসের (এইচএমপিভি) সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।

সম্প্রতি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, করোনার সময়ে হাসপাতালগুলোতে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও।

একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠাণ্ডাজনিত এ সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৭ লাখেরও বেশি।

গবেষক ড. মাইকেল হেডের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মানুষের মৃত্যুহার হবে সর্বোচ্চ।

এসব ঘটনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বা চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট আকার ধারণ করলেও সরকার সতর্কতা জারি করেনি। তবে, যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে যেকোনো সময়ে চীন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলে দাবি দেশটির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের।

এইচএমপিভিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। মূলত জ্বর, নাকবন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও এই ভাইরাসের তীব্রতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় রোগের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে অভিমত চিকিৎসকদের। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো তীব্রতর রূপ নেয় বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের যেসব এলাকায় দীর্ঘদিন করোনার বিধিনিষেধ জারি ছিল, সেসব এলাকাতেই রোগটির বিস্তার ঘটেছে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ লকডাউনের কারণে করোনা ও অন্যান্য ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার নিয়ন্ত্রণ করা গেছে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে এটি মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণেই এইচএমপিভিতে আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এইচএমপিভি ভাইরাসটিকে প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছিল ২০০১ সালে। এটি মূলত ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায় এবং সব বয়সী লোকজনকেই আক্রান্ত করে। তবে শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

উল্লেখ্য, এইচএমপিভি একটি সংক্রামক রোগ এবং যেভাবে এটি ছড়ায়, তার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে কোভিডের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিডের মতোই হাঁচি, কাশি, আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি অবস্থান, করমর্দন এবং স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এ রোগটি।

এইচএমপিভি ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। চীনের যেসব হাসপাতালে এইচএমপিভি রোগীরা ভর্তি হয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ব্যবহার না করে প্রচলিত ওষুধই দেওয়া হচ্ছে।

তবে, রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর প্রতিরোধের সঙ্গে করোনা বা কোভিডের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাদৃশ্যও রয়েছে। রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো হলো— নিয়মিত দিনে কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কোনো কিছু স্পর্শ করার পর হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা।

এদিকে করোনার মতো করে এইচএমপিভি ভাইরাস যেন চীন থেকে ভারতেও ছড়িয়ে না পরে, সেজন্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে দেশটি। ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ড. অতুল গয়াল জানিয়েছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যা এখন থেকে ছোট করে দেখার কোনও উপায় নেই। এ ধরনের জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গয়াল বলেন, আপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিকভাবে এটিকে সাধারণ ফ্লু ভাইরাস বলেই মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শঙ্কাজনক কোনো বার্তা আমাদের কাছে আসেনি। তবে, যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া আছে।

No comments

Powered by Blogger.