Adsterra

যেসব জটিলতায় আটকে আছে অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কার

যেসব জটিলতায় আটকে আছে অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কার, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর নাটকের শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী বলে সংগঠনের নেতাদের পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। এ সময় সংগঠনের সংস্কার থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে সমাবেশ করে সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীরা। 

সে পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জরুরি সাধারণ সভা ডাকে অভিনয়শিল্পী সংঘ। সেই সভায় বর্তমান কমিটিকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত রেখে অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। চার মাস মেয়াদি এ কমিটির প্রধান করা হয় অভিনেতা তারিক আনাম খানকে। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কার কমিটিতে ওয়াহিদা মল্লিক জলি, জীতু আহসান, সাহানা রহমান সুমি ও একে আজাদ সেতুকেও যুক্ত করা হয়। ১৮ জানুয়ারি এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই সংঘের শিল্পীদের দুভাগে বিভক্ত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে কাদা ছোঁড়াছুড়ির বিষয়টি লক্ষ করা যায়। 

সংস্কার কমিটিকে দোষারোপ করে এক পক্ষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। অন্যদিকে বর্তমান কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকার কথা থাকলেও, সংস্কার কমিটিকে ডিঙিয়ে তারাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক সদস্য।

শিল্পী সংঘকে গোয়ালঘর উল্লেখ করে শরিফ সিরাজ নামে এক অভিনেতা বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক মানের সংগঠন হতে পারত। কিন্তু এখানে এত নোংরামি ও অসম্মানের চর্চা করা লোকে ভর্তি হয়ে আছে যে, কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পুরো সিস্টেমটাই করাপ্ট হয়ে আছে, মনে হচ্ছে এটি একটি গোয়ালঘর। শুধু নোংরা রাজনীতির চর্চাটাই সক্রিয় আছে।’ 

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাহী ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও আল ডিঙিয়ে সংস্কার কমিটিকে না জানিয়ে, দাপ্তরিক ক্ষমতাবলে আগের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যকরী পরিষদ নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ শুধু তিনিই নন, অভিনেতা শ্যামল মওলা ও মোস্তাফিজুর রহমান নূর নামে আরও দুই সদস্য সংগঠনকে ‘গোয়ালঘর’ বলে উল্লেখ করেছেন, এমন অভিযোগও করেছেন অন্য সদস্যরা। এ নিয়েও প্রতিবাদ, পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

এদিকে ১৩ জানুয়ারি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক ডিজি লিয়াকত আলী লাকির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয় অভিনয়শিল্পী সংঘের ফেসবুক আইডি থেকে। এটি নিয়েই ক্ষোভ ঝাড়েন সংস্কারকামী শিল্পীরা। 

অভিনেতা ইমেল হক সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ দালাল সংঘ হিসাবে পরিচিত ছিল। আজকে লাকির জন্মদিনে পোস্ট করে নাসিম (সভাপতি), রওনক (সাধারণ সম্পাদক) গং সেটা আরও পোক্ত করল।’


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

 এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটির কাছে আহ্বান জানিয়ে অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী সংঘের কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে চিহ্নিত আলো আসবেই (আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সমর্থনকারী দল) গ্রুপের সদস্যদের দ্রুত অপসারণের দাবি জানাই।’ 

এসময় অভিযোগ তুলে এ অভিনেতা আরও বলেন, ‘এখনো কী কারণে লিয়াকত আলী লাকিকে সংঘের উপদেষ্টা রাখা হয়েছে? উনি দৃশ্যমাধ্যমের কোনো শিল্পী নন। এরকম আরও অনেকেই আছেন যাদের যোগ্যতা নেই কিন্তু সংগঠনে রাখা হয়েছে। লাকীকে নিয়মমাফিক শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমেই স্পষ্ট যে, তাকে ছাঁটাই করা হয়নি।’

এদিকে সংগঠনের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে দেওয়া একাধিক সদস্যের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন সংগঠটির অন্য সদস্যরা। আপত্তিকর বক্তব্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও তোলেন তারা। 

সংস্কার কমিটি গত চার মাসে কিছুই করতে পারেনি এমন অভিযোগ তুলে জুলফিকার উদ্দিন খান চঞ্চল সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘তারেক আনাম খানের নেতৃত্বে নন প্রডাক্টিভ সংস্কারপন্থি নেতারা চার মাস সময় পাওয়ার পরও এখন দেখি ফেসবুকে কান্নার রোল ফেলে দিয়েছে, কেউ সহযোগিতা করেনি বলে। অথচ এদের বুক ফুলিয়ে বলার কথা ছিল, এই দেখ করে দেখালাম। তারা গত সরকারের সুবিধাভোগী, অথচ হঠাৎ তারা সংস্কারপন্থি নেতা হয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ দখল করে নিল।’

সংগঠনটির বর্তমান কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘এ সংগঠন নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন অভিনয়শিল্পী সংঘ হয়তো স্বৈরাচার সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়। যে কারণে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সংগঠনের তাহলে ভূমিকা কী। আমরা সব সময় শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। 

সে কারণে আমরা সাধারণ সভা করেছি, সেখানে সংস্কার কমিটি করা হয়েছে। তাদের চার মাসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। শিগ্গির সাধারণ সভা হবে। এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি আসবে, তাদের আমরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব। আমরা যারাই নেতৃত্বে আছি কেউ কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থে কিছু করিনি। জমির ব্যাপারে কথা উঠেছে, এটিও কিন্তু সংগঠনের জন্যই আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম।’

সংস্কার কমিটির প্রধান তারিক আনাম খান বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছি। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের মেয়াদ শেষ। ৩১ জানুয়ারি সাধারণ সভায় সব প্রকাশ করা হবে। এরপর যারা সংঘে আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন এটা গ্রহণযোগ্য কি না। আমরা পেশাদারি জায়গাটা দেখার চেষ্টা করেছি। অভিনয়শিল্পীদের সুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। সংগঠনে যেন রাজনৈতিক প্রভাব না পড়ে সে বিষয় নিয়েও কাজ করেছি। আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বিভেদ বিভাজন চাই না, আমাদের মধ্যে ঐক্য বেশি দরকার।’

No comments

Powered by Blogger.