Adsterra

বোবায় ধরা কী, কেন হয়, প্রতিকারে করণীয়

বোবায় ধরা কী, কেন হয়, প্রতিকারে করণীয়, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, banglades

মাঝরাতে হঠাৎই ঘুম ভাঙার পর অনুভব করলেন, আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে। খুব করে চেষ্টার পরও ঠিকঠাক নিশ্বাস নিতে পারছেন না। আপনি জেগে আছেন কিন্তু শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না। এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিকে বিশেষজ্ঞরা বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস বলে থাকেন।


বোবায় ধরা নিয়ে প্রায় সব মানুষের মাধ্যেই আতঙ্ক কাজ করে। যদিও বোবায় ধরা বলতে কিছুই নেই। বোবায় ধরা মূলত ইন্দ্রিয়ঘটিত ব্যাপার। এটি ঘুম ও জেগে থাকার মধ্যবর্তী অবস্থা। এমন সময় যখন আপনার শরীর ঘুমিয়ে আছে কিন্তু মস্তিষ্ক জেগে গিয়েছে। বোবা ধরলে একেকজনের একেক রকম অনুভূতি হয়। কেউ ঘরের ভেতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা আবার ভয়ানক কোনো প্রাণী দেখতে পান। মোট কথা, তখন হ্যালুসিনেশনের মতো একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন এই বিষয়ে বলেন, বোবায় ধরার সঙ্গে ভূতে ধরা, জ্বিনে ধরাসহ বিভিন্ন কুসংস্কারে বিশ্বাসী অনেকে মানুষ। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। বোবায় ধরা সমস্যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত।

ডা. আবিদা সুলতানার নতুন বই 'সফলতার সূত্র' রকমারি থেকে অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ঘুমের বিভিন্ন স্তর আছে। যেমন নন রেম স্লিপ ও রেম স্লিপ অর্থাৎ রেপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ। বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস রেম স্লিপ বিঘ্ন ঘটার কারণেই হয়ে থাকে। বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের সঙ্গে কিছু মানসিক রোগ যেমন- নারকোলিপসি, মাইগ্রেন, উদ্বেগমূলক ব্যাধি ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় যোগসূত্র রয়েছে। স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত স্নায়বিক রোগ বা নারকোলিপসির কারণে হতে পারে।


বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ হিসেবে ডা. হাসানুল হক বলেন, ‘মস্তিষ্কে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে গ্লাইসিন ও গামা অ্যামাইনোবিউটিরিক অ্যাসিড। এই দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বা অ্যামাইনো অ্যাসিডের নিঃসরণের ফলে মাংসপেশী অসাড় হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ দুটি মস্তিষ্কে পেশি সক্রিয় রাখার কোষগুলোকে সুইচ অফ করে দেয়। যখন সুইচ অফ করে দেয় তখনই স্লিপ প্যারালাইসিস শুরু হয়।


ঘুমের চূড়ান্ত পর্যায় রেম স্লিপের সময় চোখ খুব দ্রুত নড়াচড়া করে। মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশ রেপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ থেকে তাড়াতাড়ি আগেই বেরিয়ে আসে, একজন ব্যক্তি তখন জেগে উঠেন। কিন্তু মস্তিষ্কের নিচের অংশটি যদি তখনও রেপিড স্লিপ মুভমেন্টে থাকে তখন পেশিগুলোকে অবশ করার জন্য নিউরোট্রান্সমিটার পাঠাতে থাকে।


বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের লক্ষণ

  • প্রধান লক্ষণ হচ্ছে জাগরণের সময় নড়াচড়া বা কথা বলতে না পারা।
  • স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় ফিসফিস, গর্জন, ভয়েস এবং গুঞ্জনের মতো শব্দ শোনা বা কল্পনা করা।
  • কারো কারো হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়।
  • বুকের ওপর চাপ অনুভব করা।
  • তীব্র আতঙ্ক, অত্যাধিক ভয়ের অনুভূতি ও ঘাম হওয়া।
  • অতিপ্রাকৃত কোন প্রাণী বা ব্যক্তি শ্বাসরোধ করছে এমন অনুভূতি হওয়া।
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।
  • আশপাশে এমন কোনো ব্যক্তি বা বস্তু আছে তার ক্ষতি করতে চায় এমন ভয়ের অনুভূতি হওয়া।


বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের চিকিৎসা

স্লিপ প্যারালাইসিস আসলে গুরুতর কোনো রোগ নয়। মাঝে মাঝে নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। ডা. হাসানুল হক বলেন, স্লিপ প্যারালাইসিস কদাচিৎ হয়। কারো ছয় মাসে একবার, আবার কারো বছরে একবার হয়। যদি কারো ঘনঘন হয়, সপ্তাহে দুই-তিন বার বা প্রতিদিন ঘুমের সময়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্লিপ প্যারালাইসসিস সমস্যার জন্য নিউরোলজিস্ট ও অটোলারিংগোলজিস্ট, হেড নেক সার্জনদের কাছে যেতে হবে।

চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে কাউন্সিলিং করতে হবে। বোঝাতে হবে সমস্যাগুলো, যে কারণে রোগটা হচ্ছে। অ্যালকোহল, ধূমপান পরিহার করতে হবে। ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ততা, উদ্বেগ, মানসিক অশান্তি ও ঘুমের সমস্যা দূর করতে হবে। প্রয়োজনে রোগীর সমস্যা শনাক্ত করে ওষুধ দেয়ার কথা বলেন ডা. হাসানুল হক। সচেতনতা ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে স্লিপ প্যারালাইসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।


ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।


No comments

Powered by Blogger.