শুধু মা–বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে মেডিকেলে ভর্তি ?
বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। ছোটবেলায় ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় অধিকাংশ মানুষ এসব বাক্যই লেখেন। মানবসেবার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলেই চিকিৎসা পেশা মানুষের কাছে বেশ কাঙ্ক্ষিত। তাই অসংখ্য অভিভাবক সন্তানকে চিকিৎসক হিসেবে দেখার স্বপ্ন লালন করেন। প্রচুর ছাত্রছাত্রীও চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে মনেপ্রাণে লড়ে যান। প্রতিবছর ভর্তি যুদ্ধের সময় আমরা এর প্রতিফলন দেখি। তবে চিকিৎসা পেশা আপাতদৃষ্টে বেশ লোভনীয় হলেও এটি যেমন শ্রমসাপেক্ষ, তেমনি কষ্টকর। তাই স্বপ্ন দেখলেও সেটি বাস্তবায়নের পথে ছিটকে পড়েন অনেকেই। সামনেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। বড় সংখ্যার ছাত্রছাত্রী এই ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। এর আগে কিছু ব্যাপারে ধারণা থাকলে মন্দ হয় না।
নিজের ইচ্ছাকে শোনো
চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ পড়াশোনায় ঢুকতে গেলে ইচ্ছাটা অবশ্যই নিজের মন থেকে আসতে হবে। অনেকেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শুধু মা–বাবার ইচ্ছা পূরণের জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। ফলে পরে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ সমস্যা হতে পারে। মন থেকে এই সেবামূলক পেশায় আসতে আগ্রহী, তাদেরই ডাক্তারি পড়া উচিত। জীববিজ্ঞান বিষয়টা অত টানে না বলে অনেকে ভাবেন, চিকিৎসাশাস্ত্র বুঝি তাদের জন্য নয়। আসলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে জীববিজ্ঞান ভালো না লাগলেও চিকিৎসাবিদ্যা উপভোগ করেছেন এবং সফল হয়েছেন, এ রকম নজির ভূরি ভূরি।
দুনিয়াজুড়ে সবচেয়ে কঠিন পড়াশোনার একটি হলো চিকিৎসাশাস্ত্র। বাঁধা সময়ের ভেতর বেশ বড় একটা সিলেবাস শেষ করতে হয়। সেই সঙ্গে থাকে পড়াশোনা ও পরীক্ষার ছড়াছড়ি। তাই চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে হলে পড়ুয়া হতে হবে। হতে হবে বেশ সময়ানুবর্তী ও নিয়মানুবর্তী। সময়ের কাজ সময়ে করার ব্যাপারে শিথিলদের জন্য মেডিকেল জীবন কষ্টকর হতে পারে।
স্নায়বিক চাপ কাটাতে হবে
সারা বছর ধরে পরীক্ষা চলতে থাকে। বেশির ভাগই মৌখিক। যারা স্নায়বিক চাপে ভোগে বা অল্পতেই ঘাবড়ে যায়, তাদের কাছে এসব জটিল মনে হতে পারে। এখানে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেয়ে ফেলই যেন সহজ। যারা অল্পতেই হতাশ হয়, পিছিয়ে পড়ে কিংবা হাল ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য ডাক্তারি পড়া নয়। পুরো সিলেবাস ইংরেজিতে, তাই ভালো ফলাফল অর্জনে এ ভাষায় দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।
কীভাবে নেব মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
কেউ চাইলে পুরোপুরি সৎ থেকে রোজগার করতে পারেন। এটি এমন এক পেশা, যাতে কোনো অবসরের সীমারেখা নেই। জীবনভর আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা সম্ভব। এই পেশার মানুষজন যুগে যুগে মানুষের আস্থার জায়গায় আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন।
ধৈর্য আর সহনশীলতাই সফলতা আনে
ডাক্তারি পেশা অন্য সব পেশার চেয়ে আলাদা। এখানে রোগশোকে ভোগা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হয়। অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়াও বিচিত্র নয়। তাই মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, ধীরস্থির এবং সামাজিক মেলামেশায় পটুরাই এই পেশায় সফল হবেন। ধৈর্য আর সহনশীলতার কোনো বিকল্প নেই।
আলাদিনের চেরাগ নয়
চিকিৎসা পেশা নিয়ে আমাদের অনেকের মনে কিছু অলীক ধারণা আছে। একজন সফল চিকিৎসকের সুনাম, অর্থ ও সফলতা দেখে সব চিকিৎসকের জীবনকে একই রকম ভাবি। অথচ বিবেচনা করি না এর পেছনে কত বিনিদ্র রজনী, অমানুষিক পরিশ্রম এবং ত্যাগ–তিতিক্ষার ইতিহাস। এত পরিশ্রম ও ত্যাগের পরও অনেকের কাছেই সাফল্য অধরা থেকে যায়। সাফল্য ধরা দিতে কারও কেটে যায় জীবনের অনেক মূল্যবান সময়। তাই চিকিৎসা পেশা কোনো আলাদিনের চেরাগ নয়। বরং অনেক সাধনার প্রাপ্তি।
ব্যক্তিগত সময়টুকুও ব্যয় করতে হতে পারে মানবসেবায়
চিকিৎসকের জীবন আর দশজনের মতো নয়। নিজের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত সময়টুকু ব্যয় করে মানবসেবায় নিযুক্ত থাকতে হয়। কখনো বিনিময়ে জুটতে পারে ভর্ৎসনা বা দোষারোপ। অন্যান্য পেশার তুলনায় সাফল্য আসে ঢের ধীরগতিতে। এখানে এমবিবিএস ডিগ্রিই শেষ নয়, বরং শুরু হয় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের যুদ্ধ। তাই এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম নীতি এখানে খাটে না।
আপাতদৃষ্টে প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষিত এই পেশায় এসে অনেকেরই স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটতে পারে। এ পেশা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকায় আক্রান্ত হতে পারেন হতাশায়। তবে চিকিৎসা পেশার অনন্যসাধারণ দিকও আছে। চিকিৎসকেরা নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি-বিবেচনা, শ্রম ও সময় দিয়ে মানুষের রোগমুক্তি ঘটান। স্বজনদের মুখে হাসি ফোটে। রোগাক্রান্তকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার যে অনাবিল আত্মতৃপ্তি, সেটি এই পেশাকে চিরকালই অতুলনীয় করে রেখেছে। কেউ চাইলে পুরোপুরি সৎ থেকে রোজগার করতে পারেন। এটি এমন এক পেশা, যাতে কোনো অবসরের সীমারেখা নেই। জীবনভর আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা সম্ভব। এই পেশার মানুষজন যুগে যুগে মানুষের আস্থার জায়গায় আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। এখানে আছে কষ্ট, ব্যর্থতার জ্বালা, সাফল্যের দীর্ঘ বন্ধুর পথ। কিন্তু রোগমুক্ত মানুষের জ্বলজ্বলে হাসিমুখ ভুলিয়ে দেয় সব যন্ত্রণার ইতিহাস। তাই এই পেশা অনন্য, অসাধারণ। যারা রোগীবান্ধব সফল চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছ, তাদের সাফল্য কামনা করছি।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
No comments