Adsterra

জলে কুমির ডাঙায় রাসেলস ভাইপার, ‘ফেউ’ নিয়ে অভিনেতাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

জলে কুমির ডাঙায় রাসেলস ভাইপার, ‘ফেউ’ নিয়ে অভিনেতাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla ne

ফেউ শব্দের আভিধানিক অর্থ শৃগাল বা অন্যভাবে বললে বাঘের পেছন থেকে ডেকে ডেকে বাঘের আগমন জানিয়ে দেয় এমন শৃগাল। অর্থাৎ চালাক প্রকৃতির বলা যায়। অনুসরণকারী হিসেবেও ফেউ–এর ব্যবহার দেখা যায়।

দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের অনেকেই সীমানা পাড়ি দেন। শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। নিম্নবর্ণের (নমঃশূদ্র) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ মাথা গোঁজেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগণা জেলার দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে। সরকারি আশ্বাসে বাসাও বাঁধেন তারা।

তবে সে আশ্বাস ছিল যেন ভোটের রাজনীতির অংশ। ভোট শেষ হতেই শুরু হয় উদ্বাস্তু উচ্ছেদ কার্যক্রম। মরিচঝাঁপিতে খাবার-পানি বন্ধ করে দেওয়া, ঘরে আগুন দেওয়া, নৌকা ডুবানোসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে সেসময় ভারতের রাজ্য সরকার মানবিক হয়নি। নিন্দিত হলেও দেয়নি পাত্তা।

অবশেষে ১৯৭৯ সালের ১৬ মে উদ্বাস্তু শূন্য হয় মরিচঝাঁপি। সরকারি হিসেবে, সেখানে মোট নিহতের সংখ্যা মাত্র দুই জন হলেও বিভিন্ন হিসেবে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। গণহত্যার ওই ইতিহাস দৃশ্যমাধ্যমে চিত্রায়িত করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান। বানিয়েছেন ‘ফেউ’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ। আগামী ২৩ জানুয়ারি দেশের একটি ওটিটি মাধ্যমে মুক্তি পাচ্ছে।

নতুন এই কাজ নিয়ে নির্মাতা বলেন, পুরো গল্প জুড়েই ফেউ শব্দটার উপস্থিতি আছে। গল্পের রাজনৈতিন বর্ণনাতেও ফেউ প্রাসঙ্গিক। মানুষের স্বভাবজাত আতঙ্ক, ভয় যখন দৈনন্দিন হয়ে যায় তখনও সেটা ফেউ শব্দ দিয়ে বোঝান সম্ভব। এই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস এবং উতড়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে ‘ফেউ’ সিরিজ। তাই সিরিজের নামকরণ সবচেয়ে ফেউ যৌক্তিক মনে হয়েছে।

নতুন এই সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, তাহমিনা অথৈ, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস, এ কে আজাদ সেতু।

সিরিজে কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। তিনি জানান, খুলনা অঞ্চলে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিন্তু তিনি কখনও সুন্দরবন দেখেননি। এবারই প্রথম তিনি সুন্দরবনের একদম ভেতরে গিয়ে শুটিং করেছেন।

অভিনেতা বলেন, আামার এলাকা জন্য ভাষার ব্যবহারেও আমার খুব আরাম লেগেছে। কিছু বিষয় কানে লেগে আছে। আমাকে দেখে অনেকে বলেছে, ’উরে বাবারে আপনারে এতদিন পরে দেখলাম, সেই ছোট বেলায় দিখিছি। টেলিভিশনে দেখতি যাতাম ৫ মাইল দূরি। উরি আল্লাহ এ কি দেখতিছি, আপনারে একটু ছুঁয়ে দেখি।’ সাধারণ ভাষায় হৃদয়ের কথা বলে দিল, খুব ভালো লেগেছে আমার।

চরিত্র নিয়ে তারিক আনাম বলেন, কাজী চরিত্রটি এই এলাকায় প্রভাবশালী মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে সে খুব বেশিভাবে জড়িত। সব জায়গায় তার কর্তৃত্ব আছে কিন্তু সেটা সে বোঝাতে চায় না। এর মধ্য দিয়ে ওই এলাকার রাজনীতি বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয়।

ওয়েব সিরিজটিতে চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন সুনীল চরিত্রে। সিরিজে তিনি একজন ফটোগ্রাফার। ফেউ–তে ইতিাসের একটা ছায়া রয়েছে, প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেই ঘটনাগুলোর অনেক তথ্য সুনীল তার ক্যামেরায় ধরে রাখে বলে জানান চঞ্চল চৌধুরী।

চঞ্চল চৌধুরী তার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, আমরা যখন শুটিং করেছি তখন ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। মাস খানেক সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, যার মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠাণ্ডা লাগত। আমি শিতের জামা–কাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠাণ্ডার চেয়েও ভয়ের বিষয় ছিল কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমিরটা। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশু–পাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

এদিকে সুন্দরবনে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান বলেন, ওখানকার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। সবসময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়েছে। টিমের সকলের প্রচেষ্টা ও সততা একসঙ্গে না হলে এটা সম্ভব ছিল না। আমরা রাতে লঞ্চে থাকতাম। ৪৫ দিনের মতো ছিলাম। থাকার অন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মাঝনদীতে লঞ্চ বাঁধা থাকত। অনেক রাতে শুট শেষে ফেরার পর খাবার খেয়ে হয়তো চা খাচ্ছি তখন টের পেতাম কুমির একটি কুকুরকে টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক বড়সড় কুমিরও দেখেছি। একটি অ্যাকশন দৃশ্য আছে যেখানে আমরা প্রথম রাসেলস ভাইপার আবিষ্কার করি। শ্বাসমূলের ওপর দিয়ে খালি পায়ে দৌড়ানো, কাঁদা—সুন্দরবনের এক অদ্ভুত ফিলিং।

No comments

Powered by Blogger.